ঢাকা ১০:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বড় জয়ে শুরু বাংলাদেশের

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪১:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০১৭
  • ২৯৪ বার

বছরের প্রথম ওয়ানডেতে বড় জয় পেল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার রনগিরি ডাম্বুলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্বাগতিক দলকে ৯০ রানে হারিয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।

টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ৩২৪ রান সংগ্রহ করে। জবাবে শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে যায় ২৩৪ রানে।

দিনটি যে বাংলাদেশের, তা শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। শনিবার টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে তামিমের সেঞ্চুরি, সাব্বির-সাকিবের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলীয় সর্বোচ্চ রান এবং সব মিলিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। জবাবে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, অভিষিক্ত মেহেদী হাসান মিরাজের দ্যুতিময় বোলিং এবং মুস্তাফিজ ও তাসকিনের নিঁখুত ও হিসেবি বোলিংয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছতে কোনো বেগ পেতে হয়নি মাশরাফির দলকে।

টেস্টে ধারাবাহিকভাবে সৌম্য সরকার ভালো করায় ওয়ানডেতে তামিম ইকবালের সঙ্গী কে হবেন, তা নিয়ে ছিল না কোনো সংশয়। ইমরুল কায়েসকে টপকে সৌম্য সরকার রঙিন পোশাকে তামিমের সঙ্গী হয়ে মাঠে নামেন। কিন্তু আবারও আশা জাগিয়ে ব্যর্থ সৌম্য। দারুণ দুই শটে দুই বাউন্ডারিতে নামের পাশে ১০ রান যোগ করলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। সুরঙ্গা লাকমালের দারুণ এক আউটসুইংয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সৌম্য।

তিনে নেমে সাব্বির রহমান বাংলাদেশের ইনিংসের চিত্রটাই পাল্টে দেন। অষ্টম বলে লাকমালকে পুল করে চার হাঁকিয়ে রানের খাতা খোলেন সাব্বির। ঝড় তোলেন কুশল পেরেরার করা ইনিংসের অষ্টম ওভারে। পেরেরা নিজের প্রথম ওভার করতে এসে খরচ করেন ১৩ রান। ওভারের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ- টানা তিন বলে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান সাব্বির। শেষ বাউন্ডারিতে দলীয় অর্ধশতকে পৌঁছায় বাংলাদেশ। সেখানেই থেমে থাকেননি সাব্বির। তামিমকে একপাশে রেখে নিজে স্ট্রোক খেলেন উইকেটের চারপাশে। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ৪৮ বলে।

মাঝে ৪২ রানে আম্পায়ার তাকে এলবিডব্লিউ আউট দিয়েছিলেন। রিভিউ নিয়ে নতুন জীবন পান মারকুটে এই ব্যাটসম্যান। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে আসেলা গুনারত্নের বলে উপুল থারাঙ্গার অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন ৫৪ রানে। অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বল ড্রাইভ করতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ দেন সাব্বির। তবে এ উইকেটের জন্য লঙ্কান অধিনায়ক থারাঙ্গাকে বাহবা দিতে হবে। বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ ক্যাচ নেন থারাঙ্গা। তামিম-সাব্বিরের ৯০ রানের জুটি ভাঙার পর ক্রিজে এসে মুশফিকুর রহিম চায়নাম্যান বোলার লাকশান সান্দাকানকে ফিরতি ক্যাচ দেন ১ রানে।

চতুর্থ উইকেটে জুটি বাঁধেন সাকিব আল হাসান ও তামিম। দুজনের জুটিতে আসে ১৪৪ রান। ওয়ানডেতে এর আগে ৩টি হাফ সেঞ্চুরির জুটি থাকলেও প্রথমবারের মতো শততরানের জুটি গড়েন দুজন। সাকিব শুরু থেকেই আগ্রাসন দেখান। অন্যদিকে তামিম ছিলেন রক্ষণাত্মক। বাজে বল না পেলে মারেননি। বলের মেরিট অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করেছেন। তাতে তিনি সফল। ৭৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন আসেলা গুনারত্নের বলে এক রান নিয়ে। হাফ সেঞ্চুরির পর অবশ্য খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসেন তামিম। ৩১তম ওভারে স্পিনার গুনাথিলাকার চার বলে মারেন তিনটি বাউন্ডারি। তিনটি বাউন্ডারি ছিল ইনসাইড আউট শটে। ৭৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পেলেও পরের ৫০ রান করেন ৫১ বলে।

৪২তম ওভারে লাকশান সান্দাকানের হাফভলি বল পুল করে মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠান তামিম ইকবাল। ৯৪ থেকে তামিম পৌঁছে যান ৯৮ রানে। পরের বলে অফ ড্রাইভ করে আরো এক রান। পরের ওভারে পেসার লাহিরু কুমারার বল ফ্লিক করে ফাইন লেগে বল পাঠিয়ে আরো এক রান তামিমের নামের পাশে। তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের অষ্টম, শ্রীলঙ্কার মাটিতে দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। এর আগে ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হাম্বানটোটায় করেছিলেন ১১২ রান।

তামিমের সেঞ্চুরির পর সাকিব আল হাসান ৬১ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৩৩তম হাফ সেঞ্চুরি। মাইলফলকে পৌঁছার পর দুই ব্যাটসম্যান স্বাগতিক বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলেন। বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন সাকিব। ৪৫তম ওভারে লঙ্কান পেসার লাহিরু কুমারার বলে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকানা ফাইন লেগ, লং অন ও মিড অফ দিয়ে। পরের ওভারের চতুর্থ বলে লং অন দিয়ে লাকমালকে মারেন বিশাল এক ছক্কা। কিন্তু পরের বলেই নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন। অযথা উইকেটের পেছনে খেলতে গিয়ে টাইমিং মিস করে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দেন ৭২ রানে। নিজের উইকেট বিসর্জন দিয়ে নিজেই বিরক্ত সাকিব! মাঠেই রাগ ঝাড়েন নিজের ওপর। ৭১ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় সাকিব ৭২ রানের ইনিংসটি সাজান।

২৬৪ রানে সাকিব আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন মোসাদ্দেক হোসেন। প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলেন মোসাদ্দেক। ওই চার রান দিয়ে নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ রান ছিল ২৬৫। মোসাদ্দেকের চারে বাংলাদেশ পেরিয়ে যায় সেটি। সাকিব ফিরে যাওয়ার পর তামিম স্কোরবোর্ডে আরো ১৯ রান যোগ করে ফেরেন লাহিরু কুমারার বলে। ১২৭ রানে আউট হওয়ার আগে তামিম এ মাঠে নতুন রেকর্ড গড়েন। ২০১০ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১২৪ রান করেছিলেন শহীদ আফ্রিদি। পাকিস্তানের অধিনায়কের ওই ইনিংসটি ছিল ডাম্বুলার এ মাঠে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। ১২৭ রান করে আফ্রিদিকে ছাড়িয়ে যান তামিম। শেষ দিকে মোসাদ্দেকের ৯ বলে ২৪ ও মাহমুদউল্লাহর ৭ বলে ১৩ রানের সুবাদে রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ।

বোলিংয়ে কোনো রান দিয়েই প্রথম উইকেটের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। মাশরাফির বলে এলবিডব্লিউ হন গুনাথিলাকা। দ্বিতীয় ওভারে মিরাজের হাতে বল তুলে দেন মাশরাফি। মিরাজ আস্থার প্রতিদান দেন। সাদা পোশাকে নিজের পঞ্চম ওভারে প্রথম উইকেটের স্বাদ পাওয়া মিরাজ ওয়ানডেতে তৃতীয় ওভারে তুলে নেন প্রথম উইকেট। আউট করেন কুশল মেন্ডিসকে। এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন কুশল (৪)। ক্যাচ নেন তামিমের পরিবর্তে ফিল্ডিং করা শুভাগত হোম।

১১তম ওভারে প্রথম বোলিং পরিবর্তন করে সাফল্য পান মাশরাফি। তাসকিনের হাফভলি পুল করতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন ১৯ রান করা উপুল থারাঙ্গা। ৩১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে পথ ভুলতে বসা শ্রীলঙ্কা চতুর্থ উইকেটে ৫৬ রানের জুটি পায়। সাকিব আল হাসান ২৪তম ওভারে গুনারত্নে আউট করে এ জুটি ভাঙেন। সুইপ করতে গিয়ে পয়েন্টে মোসাদ্দেকের হাতে ক্যাচ দেন গুনারত্নে (২৪)।

মিরাজ দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং এসে নেন লঙ্কান উইকেট রক্ষক দিনেশ চান্দিমালের উইকেট। সেখানেই ম্যাচ শেষ হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার। ১৯তম ওভারে বোলিংয়ে আসা মুস্তাফিজুর রহমান প্রথম সাফল্য পান নিজের পঞ্চম ওভারে। সিরিবর্ধনা মুস্তাফিজের বল পুল করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে শুভাগত হোমের হাতে ক্যাচ দেন। এরপর থিসারা পেরেরার ঝোড়ো ফিফটি কেবল স্বাগতিকদের পরাজয়ের ব্যবধানই কমান কমাতে পারে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের পঞ্চম জয়। এর আগে ৪, ৫, ৩ ও ৫ উইকেটে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এবারই প্রথম আগে ব্যাটিং করে শ্রীলঙ্কাকে হারাল বাংলাদেশ। বছরের প্রথম ওয়ানডেতে বড় জয় পেল বাংলাদেশ। আগামী সোমবার সিরিজটাও নিশ্চিত করতে চাইবে মাশরাফির দল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বড় জয়ে শুরু বাংলাদেশের

আপডেট টাইম : ১১:৪১:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০১৭

বছরের প্রথম ওয়ানডেতে বড় জয় পেল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার রনগিরি ডাম্বুলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্বাগতিক দলকে ৯০ রানে হারিয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।

টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ৩২৪ রান সংগ্রহ করে। জবাবে শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে যায় ২৩৪ রানে।

দিনটি যে বাংলাদেশের, তা শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। শনিবার টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে তামিমের সেঞ্চুরি, সাব্বির-সাকিবের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলীয় সর্বোচ্চ রান এবং সব মিলিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। জবাবে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, অভিষিক্ত মেহেদী হাসান মিরাজের দ্যুতিময় বোলিং এবং মুস্তাফিজ ও তাসকিনের নিঁখুত ও হিসেবি বোলিংয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছতে কোনো বেগ পেতে হয়নি মাশরাফির দলকে।

টেস্টে ধারাবাহিকভাবে সৌম্য সরকার ভালো করায় ওয়ানডেতে তামিম ইকবালের সঙ্গী কে হবেন, তা নিয়ে ছিল না কোনো সংশয়। ইমরুল কায়েসকে টপকে সৌম্য সরকার রঙিন পোশাকে তামিমের সঙ্গী হয়ে মাঠে নামেন। কিন্তু আবারও আশা জাগিয়ে ব্যর্থ সৌম্য। দারুণ দুই শটে দুই বাউন্ডারিতে নামের পাশে ১০ রান যোগ করলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। সুরঙ্গা লাকমালের দারুণ এক আউটসুইংয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সৌম্য।

তিনে নেমে সাব্বির রহমান বাংলাদেশের ইনিংসের চিত্রটাই পাল্টে দেন। অষ্টম বলে লাকমালকে পুল করে চার হাঁকিয়ে রানের খাতা খোলেন সাব্বির। ঝড় তোলেন কুশল পেরেরার করা ইনিংসের অষ্টম ওভারে। পেরেরা নিজের প্রথম ওভার করতে এসে খরচ করেন ১৩ রান। ওভারের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ- টানা তিন বলে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান সাব্বির। শেষ বাউন্ডারিতে দলীয় অর্ধশতকে পৌঁছায় বাংলাদেশ। সেখানেই থেমে থাকেননি সাব্বির। তামিমকে একপাশে রেখে নিজে স্ট্রোক খেলেন উইকেটের চারপাশে। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ৪৮ বলে।

মাঝে ৪২ রানে আম্পায়ার তাকে এলবিডব্লিউ আউট দিয়েছিলেন। রিভিউ নিয়ে নতুন জীবন পান মারকুটে এই ব্যাটসম্যান। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে আসেলা গুনারত্নের বলে উপুল থারাঙ্গার অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন ৫৪ রানে। অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বল ড্রাইভ করতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ দেন সাব্বির। তবে এ উইকেটের জন্য লঙ্কান অধিনায়ক থারাঙ্গাকে বাহবা দিতে হবে। বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ ক্যাচ নেন থারাঙ্গা। তামিম-সাব্বিরের ৯০ রানের জুটি ভাঙার পর ক্রিজে এসে মুশফিকুর রহিম চায়নাম্যান বোলার লাকশান সান্দাকানকে ফিরতি ক্যাচ দেন ১ রানে।

চতুর্থ উইকেটে জুটি বাঁধেন সাকিব আল হাসান ও তামিম। দুজনের জুটিতে আসে ১৪৪ রান। ওয়ানডেতে এর আগে ৩টি হাফ সেঞ্চুরির জুটি থাকলেও প্রথমবারের মতো শততরানের জুটি গড়েন দুজন। সাকিব শুরু থেকেই আগ্রাসন দেখান। অন্যদিকে তামিম ছিলেন রক্ষণাত্মক। বাজে বল না পেলে মারেননি। বলের মেরিট অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করেছেন। তাতে তিনি সফল। ৭৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন আসেলা গুনারত্নের বলে এক রান নিয়ে। হাফ সেঞ্চুরির পর অবশ্য খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসেন তামিম। ৩১তম ওভারে স্পিনার গুনাথিলাকার চার বলে মারেন তিনটি বাউন্ডারি। তিনটি বাউন্ডারি ছিল ইনসাইড আউট শটে। ৭৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পেলেও পরের ৫০ রান করেন ৫১ বলে।

৪২তম ওভারে লাকশান সান্দাকানের হাফভলি বল পুল করে মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠান তামিম ইকবাল। ৯৪ থেকে তামিম পৌঁছে যান ৯৮ রানে। পরের বলে অফ ড্রাইভ করে আরো এক রান। পরের ওভারে পেসার লাহিরু কুমারার বল ফ্লিক করে ফাইন লেগে বল পাঠিয়ে আরো এক রান তামিমের নামের পাশে। তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের অষ্টম, শ্রীলঙ্কার মাটিতে দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। এর আগে ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হাম্বানটোটায় করেছিলেন ১১২ রান।

তামিমের সেঞ্চুরির পর সাকিব আল হাসান ৬১ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৩৩তম হাফ সেঞ্চুরি। মাইলফলকে পৌঁছার পর দুই ব্যাটসম্যান স্বাগতিক বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলেন। বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন সাকিব। ৪৫তম ওভারে লঙ্কান পেসার লাহিরু কুমারার বলে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকানা ফাইন লেগ, লং অন ও মিড অফ দিয়ে। পরের ওভারের চতুর্থ বলে লং অন দিয়ে লাকমালকে মারেন বিশাল এক ছক্কা। কিন্তু পরের বলেই নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন। অযথা উইকেটের পেছনে খেলতে গিয়ে টাইমিং মিস করে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দেন ৭২ রানে। নিজের উইকেট বিসর্জন দিয়ে নিজেই বিরক্ত সাকিব! মাঠেই রাগ ঝাড়েন নিজের ওপর। ৭১ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় সাকিব ৭২ রানের ইনিংসটি সাজান।

২৬৪ রানে সাকিব আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন মোসাদ্দেক হোসেন। প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলেন মোসাদ্দেক। ওই চার রান দিয়ে নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ রান ছিল ২৬৫। মোসাদ্দেকের চারে বাংলাদেশ পেরিয়ে যায় সেটি। সাকিব ফিরে যাওয়ার পর তামিম স্কোরবোর্ডে আরো ১৯ রান যোগ করে ফেরেন লাহিরু কুমারার বলে। ১২৭ রানে আউট হওয়ার আগে তামিম এ মাঠে নতুন রেকর্ড গড়েন। ২০১০ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১২৪ রান করেছিলেন শহীদ আফ্রিদি। পাকিস্তানের অধিনায়কের ওই ইনিংসটি ছিল ডাম্বুলার এ মাঠে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। ১২৭ রান করে আফ্রিদিকে ছাড়িয়ে যান তামিম। শেষ দিকে মোসাদ্দেকের ৯ বলে ২৪ ও মাহমুদউল্লাহর ৭ বলে ১৩ রানের সুবাদে রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ।

বোলিংয়ে কোনো রান দিয়েই প্রথম উইকেটের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। মাশরাফির বলে এলবিডব্লিউ হন গুনাথিলাকা। দ্বিতীয় ওভারে মিরাজের হাতে বল তুলে দেন মাশরাফি। মিরাজ আস্থার প্রতিদান দেন। সাদা পোশাকে নিজের পঞ্চম ওভারে প্রথম উইকেটের স্বাদ পাওয়া মিরাজ ওয়ানডেতে তৃতীয় ওভারে তুলে নেন প্রথম উইকেট। আউট করেন কুশল মেন্ডিসকে। এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন কুশল (৪)। ক্যাচ নেন তামিমের পরিবর্তে ফিল্ডিং করা শুভাগত হোম।

১১তম ওভারে প্রথম বোলিং পরিবর্তন করে সাফল্য পান মাশরাফি। তাসকিনের হাফভলি পুল করতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন ১৯ রান করা উপুল থারাঙ্গা। ৩১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে পথ ভুলতে বসা শ্রীলঙ্কা চতুর্থ উইকেটে ৫৬ রানের জুটি পায়। সাকিব আল হাসান ২৪তম ওভারে গুনারত্নে আউট করে এ জুটি ভাঙেন। সুইপ করতে গিয়ে পয়েন্টে মোসাদ্দেকের হাতে ক্যাচ দেন গুনারত্নে (২৪)।

মিরাজ দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং এসে নেন লঙ্কান উইকেট রক্ষক দিনেশ চান্দিমালের উইকেট। সেখানেই ম্যাচ শেষ হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার। ১৯তম ওভারে বোলিংয়ে আসা মুস্তাফিজুর রহমান প্রথম সাফল্য পান নিজের পঞ্চম ওভারে। সিরিবর্ধনা মুস্তাফিজের বল পুল করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে শুভাগত হোমের হাতে ক্যাচ দেন। এরপর থিসারা পেরেরার ঝোড়ো ফিফটি কেবল স্বাগতিকদের পরাজয়ের ব্যবধানই কমান কমাতে পারে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের পঞ্চম জয়। এর আগে ৪, ৫, ৩ ও ৫ উইকেটে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এবারই প্রথম আগে ব্যাটিং করে শ্রীলঙ্কাকে হারাল বাংলাদেশ। বছরের প্রথম ওয়ানডেতে বড় জয় পেল বাংলাদেশ। আগামী সোমবার সিরিজটাও নিশ্চিত করতে চাইবে মাশরাফির দল।