ঢাকা ১০:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদ্মার চরে সৌন্দর্যপিপাসুদের উপচে পড়া ভিড়: বাড়ছে ছিনতাই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:১৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০১৭
  • ৩৩২ বার

রাজশাহীতে পদ্মার নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় চারিদিকে জেগে উঠেছে সৌন্দর্যে ভরা সবুজ চর। চর শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গোটা এলাকা যেন মায়াবী সৌন্দর্যের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। চরের মাঝে প্রিয় মানুষদের সঙ্গে সুন্দর মূহুর্তগুলো কাটাতে আসছে নগরবাসী। জেগে উঠা চরে প্রকৃতিপ্রেমীদের সরব উপস্থিতি চরকে জাগিয়ে তুলেছে।
দূর থেকে পদ্মা পাড় ও জেগে উঠা চরের দিকে তাকালে দেখা মিলছে বিনোদনপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। দুপুর গড়াতেই ভীড় বাড়ে। কোলাহল মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। কেউ আসেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউবা এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে। আর প্রেমিক-প্রেমিকাদের উপস্থিতি তো আছেই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাফসানি সাদিক বলেন, পদ্মায় ভরা পানি বা চর যাই থাকুক না কেন, এখানকার সৌন্দর্য কাছে টানে। তাই সুযোগ পেলেই ছুটে আসি এখানে সময় কাটাতে। কখনো কখনো বই সঙ্গে নিয়ে এসে চরের মাঝে বা পদ্মার পাড়ে বসেই পড়তে শুরু করি। যেন মায়ার জালে বেধে রাখে এ পদ্মার পাড় আর চর।

তবে প্রকৃতির এ নৈসর্গে বিনোদনপ্রেমীদের আতঙ্কের নাম ছিনতাই। ছিনতাই চক্রের বড় একটি চক্র গোটা এলাকায় জাল বিছিয়ে রেখেছে। তাদের ফাঁদে বেশি পড়েন প্রেমিক-প্রেমিকা জুটিরা। একটু ফাঁকা স্থানে পৌঁছালে টার্গেট করে তাদের পিছু নিয়ে সবকিছু ছিনিয়ে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। কথাকাটাকাটির চেষ্টা করলে ছুরিকাহত হতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। তবে তাতে নজর নেই পুলিশ প্রশাসনের।

্সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজশাহী নগরীর আলুপট্টি থেকে পদ্মা গার্ডেন, বিজিবি নিয়ন্ত্রিত সীমান্তে নোঙর ও সীমান্তে অবকাশকেন্দ্র, বিজিবি পার্ক টি-বাঁধসহ গোটা এলাকায় দেখা যায় বিনোদন পিপাশু মানুষের ঢল। বিনোদনপ্রেমীদের জন্য সেখানে বিভিন্ন অস্থায়ী খাবারের এবং জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। সবমিলে জমজমাট বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে পদ্মার বুকে জেগে ওঠা ধুধু বালুচরে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষানগরীখ্যাত রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জুটি বেধে বেশি চরে ঘুরতে যান। ছিনতাইয়ে যুক্ত সিন্ডিকেট এদেরকে মূলত বেশি টার্গেট করেন। সুযোগ বুঝে মোবাইল, মানিব্যাগ, সোনার গহনা সব ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।

নগরীর বাসিন্দা আলী আকবর বলেন, সন্ধ্যা নামার আগে বেশি সুযোগ বুঝে বিনোদনপ্রেমীদের নিকট থেকে যা পাচ্ছে তাই ছিনিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। এতে করে চরের মাঝে বিনোদনপ্রেমীরা মাঝে অনেকটাই আতঙ্ক থাকে।
পভুক্তভোগী একজন যুবক বলেন, গত শুক্রবার বিকেলে পদ্মার চরে তিনি তার বান্ধবীকে নিয়ে বেড়াতে যান পদ্মার চরের মাঝে। তারা বসে গল্প করছিলেন- এসময় দু’জন যুবক এসে অশালীনভাবে তাদের উদ্দেশ্যে কথা বলতে শুরু করে। একপর্যায়ে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে যুবকটির কাছে থাকা মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে জোর করে সব টাকা বের করে নেয়।

তিনি জানান, তার মানিব্যাগে ৮০০ টাকা ছিল। ওই টাকা নিয়ে মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তবে ফোনটি কম দামের হওয়ায় সেটি আর নেয়নি ছিনতাইকারীরা। তাদের এমন আচরণে যুবকটির সঙ্গে থাকা তার বান্ধবী কাঁদতে শুরু করেন।

াপ্রত্যক্ষদর্শী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও জেলেরা জানান, নগরীর পাঠানপাড়া, দরগাপাড়া, শিপাইপাড়া শ্রীরামপুর, ফুদকিপাড়াসহ পদ্মা পাড়ের আশে-পাশের কয়েকটি সিন্ডিকেট ছিনতাইকাজে জড়িত। তারা প্রেমিকযুগল দেখে টার্গেট করে ছিনতাই করে। যেন চর থেকে উঠে এসে কাউকে কিছু বলতে পারে না।

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম বলেন, পদ্মার চর এবং পদ্মার পাড়ে গোটা এলাকায় পুলিশের সার্বক্ষণিক টহল রয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার কবলে পড়লে দর্শনার্থীদের উচিত পুলিশকে জানানো। ইনফর্ম না করলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। তবে দর্শনাথীদের যেকোনো প্রকার হয়রানিরোধে পুলিশ সজাগ রয়েছে বলেও দাবি করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

পদ্মার চরে সৌন্দর্যপিপাসুদের উপচে পড়া ভিড়: বাড়ছে ছিনতাই

আপডেট টাইম : ০১:১৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০১৭

রাজশাহীতে পদ্মার নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় চারিদিকে জেগে উঠেছে সৌন্দর্যে ভরা সবুজ চর। চর শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গোটা এলাকা যেন মায়াবী সৌন্দর্যের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। চরের মাঝে প্রিয় মানুষদের সঙ্গে সুন্দর মূহুর্তগুলো কাটাতে আসছে নগরবাসী। জেগে উঠা চরে প্রকৃতিপ্রেমীদের সরব উপস্থিতি চরকে জাগিয়ে তুলেছে।
দূর থেকে পদ্মা পাড় ও জেগে উঠা চরের দিকে তাকালে দেখা মিলছে বিনোদনপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। দুপুর গড়াতেই ভীড় বাড়ে। কোলাহল মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। কেউ আসেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউবা এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে। আর প্রেমিক-প্রেমিকাদের উপস্থিতি তো আছেই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাফসানি সাদিক বলেন, পদ্মায় ভরা পানি বা চর যাই থাকুক না কেন, এখানকার সৌন্দর্য কাছে টানে। তাই সুযোগ পেলেই ছুটে আসি এখানে সময় কাটাতে। কখনো কখনো বই সঙ্গে নিয়ে এসে চরের মাঝে বা পদ্মার পাড়ে বসেই পড়তে শুরু করি। যেন মায়ার জালে বেধে রাখে এ পদ্মার পাড় আর চর।

তবে প্রকৃতির এ নৈসর্গে বিনোদনপ্রেমীদের আতঙ্কের নাম ছিনতাই। ছিনতাই চক্রের বড় একটি চক্র গোটা এলাকায় জাল বিছিয়ে রেখেছে। তাদের ফাঁদে বেশি পড়েন প্রেমিক-প্রেমিকা জুটিরা। একটু ফাঁকা স্থানে পৌঁছালে টার্গেট করে তাদের পিছু নিয়ে সবকিছু ছিনিয়ে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। কথাকাটাকাটির চেষ্টা করলে ছুরিকাহত হতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। তবে তাতে নজর নেই পুলিশ প্রশাসনের।

্সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজশাহী নগরীর আলুপট্টি থেকে পদ্মা গার্ডেন, বিজিবি নিয়ন্ত্রিত সীমান্তে নোঙর ও সীমান্তে অবকাশকেন্দ্র, বিজিবি পার্ক টি-বাঁধসহ গোটা এলাকায় দেখা যায় বিনোদন পিপাশু মানুষের ঢল। বিনোদনপ্রেমীদের জন্য সেখানে বিভিন্ন অস্থায়ী খাবারের এবং জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। সবমিলে জমজমাট বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে পদ্মার বুকে জেগে ওঠা ধুধু বালুচরে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষানগরীখ্যাত রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জুটি বেধে বেশি চরে ঘুরতে যান। ছিনতাইয়ে যুক্ত সিন্ডিকেট এদেরকে মূলত বেশি টার্গেট করেন। সুযোগ বুঝে মোবাইল, মানিব্যাগ, সোনার গহনা সব ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।

নগরীর বাসিন্দা আলী আকবর বলেন, সন্ধ্যা নামার আগে বেশি সুযোগ বুঝে বিনোদনপ্রেমীদের নিকট থেকে যা পাচ্ছে তাই ছিনিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। এতে করে চরের মাঝে বিনোদনপ্রেমীরা মাঝে অনেকটাই আতঙ্ক থাকে।
পভুক্তভোগী একজন যুবক বলেন, গত শুক্রবার বিকেলে পদ্মার চরে তিনি তার বান্ধবীকে নিয়ে বেড়াতে যান পদ্মার চরের মাঝে। তারা বসে গল্প করছিলেন- এসময় দু’জন যুবক এসে অশালীনভাবে তাদের উদ্দেশ্যে কথা বলতে শুরু করে। একপর্যায়ে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে যুবকটির কাছে থাকা মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে জোর করে সব টাকা বের করে নেয়।

তিনি জানান, তার মানিব্যাগে ৮০০ টাকা ছিল। ওই টাকা নিয়ে মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তবে ফোনটি কম দামের হওয়ায় সেটি আর নেয়নি ছিনতাইকারীরা। তাদের এমন আচরণে যুবকটির সঙ্গে থাকা তার বান্ধবী কাঁদতে শুরু করেন।

াপ্রত্যক্ষদর্শী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও জেলেরা জানান, নগরীর পাঠানপাড়া, দরগাপাড়া, শিপাইপাড়া শ্রীরামপুর, ফুদকিপাড়াসহ পদ্মা পাড়ের আশে-পাশের কয়েকটি সিন্ডিকেট ছিনতাইকাজে জড়িত। তারা প্রেমিকযুগল দেখে টার্গেট করে ছিনতাই করে। যেন চর থেকে উঠে এসে কাউকে কিছু বলতে পারে না।

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম বলেন, পদ্মার চর এবং পদ্মার পাড়ে গোটা এলাকায় পুলিশের সার্বক্ষণিক টহল রয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার কবলে পড়লে দর্শনার্থীদের উচিত পুলিশকে জানানো। ইনফর্ম না করলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। তবে দর্শনাথীদের যেকোনো প্রকার হয়রানিরোধে পুলিশ সজাগ রয়েছে বলেও দাবি করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।