রাজাকারের সন্তানরাই নেত্রকোনা-৪ আসনের ( মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুড়ি) নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ায় অভিযোগ খোদ সেখানকার সংসদ সদস্য রেবেকে মমিনের বিরুদ্ধে।
সূত্র জানিয়েছে, মোহনগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র লতিফুর রহমান রতন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুলতান আহমেদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধী মিরাজ উদ্দিন গং-এর দুই সন্তান। শুধু তাই নয়, রেবেকা মমিনের এপিএস তোফায়েল আহমেদও রাজাকার আবদুল হেকিমের সন্তান বলে জানা গেছে। এই রতন মোহনগঞ্জের নেতৃত্বে থাকলেও পুরো তিন থানা তিনি রেবেকার প্রশ্রয়ে প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের শুরুতে (২৪/ ০১/ ২০১৬ স্মারক নং-১৪৮) তারিখে ট্রাইব্যুনাল থেকে মিরাজ উদ্দিন সহ ৭ জনের তালিকা মোহনগঞ্জ থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বরাবর পাঠায়। এই তালিকার মধ্যে কেউ জীবিত আছে কিনা তা ট্রাইব্যুনালককে অবহিত করতে বলা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমাণ্ডার আব্দুল হক যথারীতি ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মিরাজ উদ্দিন গংকে মৃত যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনালকে জানায়। এই মিরজ উদ্দিনের দুই সন্তানের একজন মোহনগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি লতিফুর রহমান রতন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুলতান আহমেদও তার সন্তান।
এরা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ হিসেবে বলে বেড়ালেও নানা সংকটে তাদের সত্যিকার চরিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠে।
ঢাকায় অবস্থান করা মোহনগঞ্জের একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সমালোচনা করায় ২০০১ সালে মোহনগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আক্কেব আলীকে জনসম্মুখে উলঙ্গ করে দেওয়া হয়। সে বিচার আজও হয়নি। এই যাতনায় নিয়ে আজও তিনি বেঁচে আছেন। শুধু আক্কেব আলী নন নানাভাবে মোহনগঞ্জের প্রায় সকল মুক্তিযোদ্ধা তাদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছে।
স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে এই রাজাকারের সন্তানেরা যাতে না আসে সেজন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। যে কারণে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার হুমকিও দেওযা হয়েছে। এতোকিছুর পরও সাংসদ রেবেকা মমিন কিছুই বলছেন না।
শুধু তাই নয়, মদন থানায় হিন্দুদের জায়গা দখল করে আওয়ামী লীগের অফিস নির্মাণ করেছে রেবেকার প্রশ্রয়কারী আওয়ামী লীগ নেতারা। মুক্তিযোদ্ধা সমীর বৈশ্যর জায়গায় আওয়ামী লীগের দলীয় অফিস উদ্বোধন করেন সাংসদ রেবেকা মমিন। সমীর বৈশ্যর সন্তান ঢাকা মহানগর উত্তরের ছাত্রলীগ নেতা রাজেশ বৈশ্য। রাজেশ বৈশ্য সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমাদের পৈতৃক জায়গায় অফিস স্থাপন করে সাংসদ তা উদ্বোধন করেছেন। আমি ঢাকায় ছাত্রলীগ করি ও আমাদের গোটা পরিবার আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। সাংসদ রেবেকা মমিন কোনো কিছু জানার প্রয়োজন বোধ না করেই এখানে ৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ কার্যালয় উদ্বোধন করেন। আমরা বিএনপি জামাতের হাতেও নির্যাতিত হয়েছি আর দুঃখজনক ভাবে নিজের দল ক্ষমতায় আসার পরও হচ্ছি।
মদনের আওয়ামী লীগ নেতা প্রবীর বৈশ্য টেলিফোনে পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ‘আমার বাবা কাকারা মদনের সেন্টার নামক জায়গাটিতে ৫ একর জমি সরকারী অফিস আদালতের জন্য বিনামূল্যে দান করে দেন। ভূমি অফিসের জন্য আরও ৮১শতক ভূমি দান করা হয়। ইউনিয়ন ভূমি অফিসও আমাদের জায়গায়। জায়গা নেওয়ার সময় অনেকেই বলেছিল এর নাম হবে মানিক বৈশ্যর নামে মানিক নগর। কিন্তু পরে তা হয়নি। এইবার আমাদের দল ক্ষমতায় থাকার সময়েই বলপ্রয়োগে তারা এই অফিসটি তৈরি করে। প্রবীর আক্ষেপ করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে লেখালেখিও হয়েছে কিন্তু কর্ণপাত করেনি রেবেকা মমিন।
এপিএস তোফায়েল আহমেদ সাংসদের অধিকাংশ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন। এ নিয়ে স্থানীয় জনগণের রয়েছে চাপা ক্ষোভ।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন টেলিফোনে পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব রাজাকার পরিবারের সন্তানরা রয়েছে এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই।’ আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যালের তালিকার বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘এটা হয়তো ভুলে ছাপা হয়েছে। মিরাজ উদ্দিন রাজাকার থাকলে তো আর এতদিন তার ছেলেরা রাজনীতি করতে পারতো না। তবুও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালত যদি তদন্ত করে কিছু পায় তাহলে বিষয়টি নিয়ে ভাববো।’
সংখ্যালঘু হিন্দুর জমি দখল করে আওয়ামী লীগ অফিস স্থাপনের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করে বলেন, ‘এটা পৌরসভার জায়গা। আর যিনি জমির মালিকানা দাবি করছেন তিনি নিজেও আওয়ামী লীগ নেতা। অফিস করার সময় তো তিনি বাঁধা দিতে আসেননি। এখন কেন কথা বলছেন?’ ব্যক্তিগত সহকারী তোফায়েল আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেবেকা মমিন বলেন, ‘ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার বিপক্ষ দল এসব গুজব ছড়াচ্ছে।’
মোহনগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি লতিফুর রহমান রতনের কাছে অভিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্বপশ্চিমিবিডি.নিউজের এ প্রতিবেদকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘ আপনি এই তথ্য কোথায় পেলেন? উত্তরে প্রতিবেদক, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের কথা বললে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে , ‘আপনি ট্রাইব্যুনালকে গিয়ে জিগান’বলে ফোন কেটে দেন।