ঢাকা ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একটি জেলার ১২ নদী শুকিয়ে কাঠ, সেচ দিয়ে চলছে চাষাবাদ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:৪৩:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
  • ২৭১ বার

টাঙ্গন নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও শহর। অথচ সে নদী এখন দখল হয়ে পরিণত হয়েছে খালে। এক সময়ের প্রমত্তা এই নদীতে এখন বর্ষাতেও পানি থাকে না। শুধু টাঙ্গন নয়, এরই মধ্যে শুকিয়ে গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের ১২টি নদী। তার অনেকগুলোতে এখন সেচ দিয়ে বিভিন্ন রকমের ফসল ও মাছ চাষ পর্যন্ত চলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে, টাঙ্গন, শুক নদী, নাগর, ঢেঁপা, নহনা, ভুল্লি , তীরনই, লাছি , চন্দনা, কুলিক, পাথরাজ ও সেনুয়া এই মোট ১২টি নদী রয়েছে। প্রত্যেকটি নদীই এখন এতোটাই শুকিয়ে গেছে যে সেখানে ঘোর বর্ষাকালেও পাট পঁচানের পানি পায় না কৃষকরা।

এলাকাবাসীর দাবি, ভারতে একতরফাভাবে বাঁধ নির্মাণের কারণে দিনে দিনে নাব্যতা হারিয়েছে জেলার এই নদীগুলো। কিন্তু সেগুলো এখন সচল করার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নদী খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার

দাবি তাদের।

জেলায় এসব নদীর বুকে কিছু কৃষক এখন ধান চাষ শুরু করেছে। অনেকে অন্য জায়গা থেকে মাটি নিয়ে এসে ধানের বীজতলা তৈরি করছে। এখন নদীতে আর মাছ পায় না জেলেরা। তাই জেলেরা জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।

এছাড়া নদীতে শহরের ময়লা আবর্জনা ফেলে নদীর পানি ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পৌর এলাকায় হোটেল, বাসা-বাড়ির সব আবর্জনা ফেলছে এ নদীতে। কিন্তু পৌরসভাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কোনও নজরদারি নেই।

ঠাকুরগাঁও সেনুয়া এলাকার বাসিন্দা আলী বলেন, একসময় এই (সেনুয়া) নদীতে আমরা সাঁতার কাটতাম, মাছ ধরতাম। কিন্তু এই নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে।

শহরের টাঙ্গন পারবর্তি মুন্সিপাড়া এলাকার আব্দুল মজিদ মুকুল বলেন, শহরের সব হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ময়লা নিয়ে নদীতে ফেলা হচ্ছে। নদীতে যা অল্প পানি আছে তা এই সব ময়লা দিয়ে দূষিত হয়ে গেছে। একটু অবসরে এখন নদীর পাড়ে বসা যায় না গন্ধে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সংকট মোকাবেলায় কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সারা দেশের নাব্যতা হারানো নদীগুলো ড্রেজিংয়ের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পের আওতায় এই নদীটিও খনন করতে পারবো বলে আশা করছি।’

জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল জানান, তিনি এ ব্যাপারে সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বিশেষ করে সংসদে পানিসম্পদ মন্ত্রাণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেনসহ উচ্চপর্যায়ে আলাপ শুরু করেছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলার সচেতন মানুষের এখন একটাই দাবি, অচিরেই জেলার ১২ টি নদীর আবার খনন করে নদীকে তার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হোক। এই বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন জেলার সবাই। -বাংলা ট্রিবিউন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

একটি জেলার ১২ নদী শুকিয়ে কাঠ, সেচ দিয়ে চলছে চাষাবাদ

আপডেট টাইম : ০৫:৪৩:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৭

টাঙ্গন নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও শহর। অথচ সে নদী এখন দখল হয়ে পরিণত হয়েছে খালে। এক সময়ের প্রমত্তা এই নদীতে এখন বর্ষাতেও পানি থাকে না। শুধু টাঙ্গন নয়, এরই মধ্যে শুকিয়ে গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের ১২টি নদী। তার অনেকগুলোতে এখন সেচ দিয়ে বিভিন্ন রকমের ফসল ও মাছ চাষ পর্যন্ত চলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে, টাঙ্গন, শুক নদী, নাগর, ঢেঁপা, নহনা, ভুল্লি , তীরনই, লাছি , চন্দনা, কুলিক, পাথরাজ ও সেনুয়া এই মোট ১২টি নদী রয়েছে। প্রত্যেকটি নদীই এখন এতোটাই শুকিয়ে গেছে যে সেখানে ঘোর বর্ষাকালেও পাট পঁচানের পানি পায় না কৃষকরা।

এলাকাবাসীর দাবি, ভারতে একতরফাভাবে বাঁধ নির্মাণের কারণে দিনে দিনে নাব্যতা হারিয়েছে জেলার এই নদীগুলো। কিন্তু সেগুলো এখন সচল করার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নদী খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার

দাবি তাদের।

জেলায় এসব নদীর বুকে কিছু কৃষক এখন ধান চাষ শুরু করেছে। অনেকে অন্য জায়গা থেকে মাটি নিয়ে এসে ধানের বীজতলা তৈরি করছে। এখন নদীতে আর মাছ পায় না জেলেরা। তাই জেলেরা জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।

এছাড়া নদীতে শহরের ময়লা আবর্জনা ফেলে নদীর পানি ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পৌর এলাকায় হোটেল, বাসা-বাড়ির সব আবর্জনা ফেলছে এ নদীতে। কিন্তু পৌরসভাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কোনও নজরদারি নেই।

ঠাকুরগাঁও সেনুয়া এলাকার বাসিন্দা আলী বলেন, একসময় এই (সেনুয়া) নদীতে আমরা সাঁতার কাটতাম, মাছ ধরতাম। কিন্তু এই নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে।

শহরের টাঙ্গন পারবর্তি মুন্সিপাড়া এলাকার আব্দুল মজিদ মুকুল বলেন, শহরের সব হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ময়লা নিয়ে নদীতে ফেলা হচ্ছে। নদীতে যা অল্প পানি আছে তা এই সব ময়লা দিয়ে দূষিত হয়ে গেছে। একটু অবসরে এখন নদীর পাড়ে বসা যায় না গন্ধে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সংকট মোকাবেলায় কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সারা দেশের নাব্যতা হারানো নদীগুলো ড্রেজিংয়ের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পের আওতায় এই নদীটিও খনন করতে পারবো বলে আশা করছি।’

জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল জানান, তিনি এ ব্যাপারে সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বিশেষ করে সংসদে পানিসম্পদ মন্ত্রাণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেনসহ উচ্চপর্যায়ে আলাপ শুরু করেছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলার সচেতন মানুষের এখন একটাই দাবি, অচিরেই জেলার ১২ টি নদীর আবার খনন করে নদীকে তার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হোক। এই বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন জেলার সবাই। -বাংলা ট্রিবিউন।