ঢাকা ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শতবছর পেরিয়েও গতি হল না বৃদ্ধের, ঢেঁকিই সম্বল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫২:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০১৭
  • ২৫৯ বার

শত বছর বয়সী জহির উদ্দিন কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন অনেক আগেই। বয়সের ভারে আজ অচলাবস্থা। চোখের দৃষ্টিশক্তি নাই। এমনকি কানেও ঠিকমত শুনতে পাননা। সারা জীবন অন্যের বাড়ীতে কামলা দিয়ে আসা প্রায় শত বছর বয়সী জহির উদ্দিনের এখন বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। খেঁয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তিনি।

নওগাঁর মান্দা উপজেলার মান্দা সদর ইউনিয়ন নবগ্রাম গ্রামে বাড়ী। তার দুই মেয়ে আবিয়া বেওয়া (৬৫) ও জুলেখা খাতুন (৬০) প্রতিবন্ধীকে নিয়ে একটি কুড়েঘরে বসবাস করেন। একটি মাত্র থাকার ঘর। ঘরটি বাঁশের বেড়ায় কাদাঁমাটির প্রলেপ, টিনের ছাউনি। ঘরে ভাঙ্গা একটা চৌকি ছাড়া তেমন কিছুই নেই। ঘরের বাহিরে বারান্দায় শীতের সময় বাতাসে ঠান্ডার হাত থেকে কিছুটা স্বস্থি পেতে পলিথিন টাঙ্গিয়ে সেখানে শুয়ে থাকেন জহির উদ্দিন।

বড় মেয়ে আবিয়া বেওয়ার গত ১১ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ায় বাবার বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার এক মেয়ে। বিয়ে দিয়েছেন পাশের গ্রামে। জামাইয়ের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। তারা কোন খোঁজ খবর রাখেনা।

ছোট মেয়ে জুলেখা খাতুন। জন্মের পর থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। দৃষ্টিশক্তি কম, কথাও অস্পষ্ট। লাঠি ধরে চলাফেরা করে। এখনও তার কোন প্রতিবন্ধী কার্ড হয়নি।

এক সময় মানুষের বাড়ীতে বছরে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেছেন জহির উদ্দিন। শারীরিক শক্তি হারিয়ে বয়সের ভারে আজ তিনি অক্ষম। প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় চলাচল করেন। প্রায় ২৫ বছর থেকে আর কাজ করতে পারেননা। গত ১০ বছর থেকে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। তবে বয়স্ক ভাতা দিয়ে তিন সদস্যের ভরন পোষণ কষ্টকর হয়ে উঠেছে। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে।

ঘরের পাশেই তাল পাতার ভাঙ্গাচুরা ছাউনির নিচে ‘ঢেঁকি’। আর ‘ঢেঁকি’ একমাত্র তাদের সম্বল। গত ১০ থেকে ১১ বছর ঢেঁকি দিয়ে প্রতিবেশীদের আটা কুঁড়ে ভেঙ্গে সেখান থেকে তারা যা দেয় তা দিয়ে দিন পার হয়। আর আটা কুঁড়তে সহযোগীতা করেন বড় মেয়ে আবিয়া বেওয়া। বয়স হওয়ায় তিনি এখন আর তেমন কাজ করতে পারেননা। তবে বর্ষা মওসুমে ঝড়বৃষ্টিতে তাল পাতার ভাঙ্গাচুরা ছাউনি দিয়ে পানি পরলে সেদিনের মতো আটা কুঁড়া বন্ধ থাকে।

কোন আয়ের উৎস না থাকায় একই পরিবারে তিনজন সদস্য আজ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। জীবনের অন্তিম মূর্হুতে এসে তারা যেন খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারে এজন্য সরকারসহ স্থানীয় প্রতিনিধিদের সহযোগীতা কামনা করছেন এলাকাবাসী।

প্রতিবেশী শরিফুন বিবি বলেন, খুব কষ্টে থাকেন তারা। কেউ আটা কুটতে আসলে সেখান থেকে যে যা দেন তা খেয়েই তারা থাকেন। তাদের কষ্ট দেখে খুব খারাপ লাগে।

প্রতিবেশি নওগাঁ বিএমসি কলেজের খন্ডকালিন শিক্ষক বেলাল হোসেন বলেন, পরিবারটা খুবই অসহায়। একবেলা খেয়ে দু’বেলা না খেয়ে দিন পার করতে হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তাদের প্রতি কোন গুরুত্ব দেয়না। তারা যেন দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারেন এজন্য সরকারের সহযোগীতা কামনা করছেন।

মান্দা সদর ইউনিয়ন পরিষদ দায়িত্ব প্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ বলেন, এমন অসহায় পরিবারের কথা জানা নেই। তবে জরুরী ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই পরিবারকে সাধ্যমত সাহায্য করার চেষ্টা করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

শতবছর পেরিয়েও গতি হল না বৃদ্ধের, ঢেঁকিই সম্বল

আপডেট টাইম : ১২:৫২:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০১৭

শত বছর বয়সী জহির উদ্দিন কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন অনেক আগেই। বয়সের ভারে আজ অচলাবস্থা। চোখের দৃষ্টিশক্তি নাই। এমনকি কানেও ঠিকমত শুনতে পাননা। সারা জীবন অন্যের বাড়ীতে কামলা দিয়ে আসা প্রায় শত বছর বয়সী জহির উদ্দিনের এখন বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। খেঁয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তিনি।

নওগাঁর মান্দা উপজেলার মান্দা সদর ইউনিয়ন নবগ্রাম গ্রামে বাড়ী। তার দুই মেয়ে আবিয়া বেওয়া (৬৫) ও জুলেখা খাতুন (৬০) প্রতিবন্ধীকে নিয়ে একটি কুড়েঘরে বসবাস করেন। একটি মাত্র থাকার ঘর। ঘরটি বাঁশের বেড়ায় কাদাঁমাটির প্রলেপ, টিনের ছাউনি। ঘরে ভাঙ্গা একটা চৌকি ছাড়া তেমন কিছুই নেই। ঘরের বাহিরে বারান্দায় শীতের সময় বাতাসে ঠান্ডার হাত থেকে কিছুটা স্বস্থি পেতে পলিথিন টাঙ্গিয়ে সেখানে শুয়ে থাকেন জহির উদ্দিন।

বড় মেয়ে আবিয়া বেওয়ার গত ১১ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ায় বাবার বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার এক মেয়ে। বিয়ে দিয়েছেন পাশের গ্রামে। জামাইয়ের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। তারা কোন খোঁজ খবর রাখেনা।

ছোট মেয়ে জুলেখা খাতুন। জন্মের পর থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। দৃষ্টিশক্তি কম, কথাও অস্পষ্ট। লাঠি ধরে চলাফেরা করে। এখনও তার কোন প্রতিবন্ধী কার্ড হয়নি।

এক সময় মানুষের বাড়ীতে বছরে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেছেন জহির উদ্দিন। শারীরিক শক্তি হারিয়ে বয়সের ভারে আজ তিনি অক্ষম। প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় চলাচল করেন। প্রায় ২৫ বছর থেকে আর কাজ করতে পারেননা। গত ১০ বছর থেকে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। তবে বয়স্ক ভাতা দিয়ে তিন সদস্যের ভরন পোষণ কষ্টকর হয়ে উঠেছে। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে।

ঘরের পাশেই তাল পাতার ভাঙ্গাচুরা ছাউনির নিচে ‘ঢেঁকি’। আর ‘ঢেঁকি’ একমাত্র তাদের সম্বল। গত ১০ থেকে ১১ বছর ঢেঁকি দিয়ে প্রতিবেশীদের আটা কুঁড়ে ভেঙ্গে সেখান থেকে তারা যা দেয় তা দিয়ে দিন পার হয়। আর আটা কুঁড়তে সহযোগীতা করেন বড় মেয়ে আবিয়া বেওয়া। বয়স হওয়ায় তিনি এখন আর তেমন কাজ করতে পারেননা। তবে বর্ষা মওসুমে ঝড়বৃষ্টিতে তাল পাতার ভাঙ্গাচুরা ছাউনি দিয়ে পানি পরলে সেদিনের মতো আটা কুঁড়া বন্ধ থাকে।

কোন আয়ের উৎস না থাকায় একই পরিবারে তিনজন সদস্য আজ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। জীবনের অন্তিম মূর্হুতে এসে তারা যেন খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারে এজন্য সরকারসহ স্থানীয় প্রতিনিধিদের সহযোগীতা কামনা করছেন এলাকাবাসী।

প্রতিবেশী শরিফুন বিবি বলেন, খুব কষ্টে থাকেন তারা। কেউ আটা কুটতে আসলে সেখান থেকে যে যা দেন তা খেয়েই তারা থাকেন। তাদের কষ্ট দেখে খুব খারাপ লাগে।

প্রতিবেশি নওগাঁ বিএমসি কলেজের খন্ডকালিন শিক্ষক বেলাল হোসেন বলেন, পরিবারটা খুবই অসহায়। একবেলা খেয়ে দু’বেলা না খেয়ে দিন পার করতে হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তাদের প্রতি কোন গুরুত্ব দেয়না। তারা যেন দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারেন এজন্য সরকারের সহযোগীতা কামনা করছেন।

মান্দা সদর ইউনিয়ন পরিষদ দায়িত্ব প্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ বলেন, এমন অসহায় পরিবারের কথা জানা নেই। তবে জরুরী ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই পরিবারকে সাধ্যমত সাহায্য করার চেষ্টা করা হবে।