ঢাকা ০৮:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘পরিত্রাণের মন্ত্র’ জানালেন মাশরাফি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৫:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জানুয়ারী ২০১৭
  • ২৮৬ বার

‘নিউজিল্যান্ডের বিরুপ কন্ডিশনে সিরিজ হারবে বাংলাদেশ’ এমনটা অনুমিতই ছিল। কিন্তু এমন বাজেভাবে কিংবা লড়াই ছাড়াই যে ওয়ানডে ম্যাচে আত্মাহুতি দেবেন মাশরাফিরা, সিরিজ শুরুর পূর্বে তা কারোর ধারণাতেই ছিল না। ‘অন্তত একটা ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ’— এ কথায় বাজি ধরার লোকের সংখ্যাই ছিল অগণিত। কিন্তু পুরো ওয়ানডে সিরিজের চিত্র পর্যালোচনা করলে কী দেখতে পাওয়া যায়? একটা ম্যাচ নয়, সিরিজ জেতার দারুণ সম্ভাবনা ছিল মাশরাফিদের।
প্রথম ওয়ানডেতে কিউইদের পাহাড়সম রানের নিচে চাপা পড়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২৫১ রানে অলআউট করেও জিততে পারলো না। উল্টো ৬৭ রানে হেরে সিরিজ খোয়াল টাইগাররা। আর শনিবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে শুরুতে ভালো ব্যাটিং করেও শেষ পর্যন্ত সংগ্রহ দাঁড় করালো মাত্র ২৩৬। হারলো ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। এর ফলে আড়াই বছর পর হতে হলো ‘হোয়াইটওয়াশ’।
এমন হারের ব্যাখ্যায় সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি যা বললেন তার সারসংক্ষেপ হলো- দলের সিনিয়রদের বাজে পারফরম্যান্স, দলীয় পারফরম্যান্সের অভাব এবং মানসিক দুর্বলতা।
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর পরই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। দুই দলের অধিনায়ক কিংবা ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় গণমাধ্যমের এসে ম্যাচ সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন। এদিন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামস নির্ধারিত সময়ে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিলেও বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এলেন ঘণ্টাখানেক পর। দেরি হেতু ম্যাচশেষে শিষ্যদের নিয়ে দীর্ঘ সভা করেছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সিরিজে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স করা শিষ্যদের নিশ্চয়ই নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিয়ে বুঝিয়েছেন কার কোথায় কী ভুল ছিল?
ভুল তো অবশ্যই ছিল। আগের দুই ওয়ানডেতে ছিল। শনিবারও বাদ যায়নি। ওপেনিংয়ে তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েসের ২১.২ ওভারে উদ্বোধনী জুটির অবদান ১০২। অথচ এই দলই পুরো ৫০ ওভার খেলে ৯ উইকেটে করে ২৩৬ রানে। অবশিষ্ট ২৮.৪ ওভারে করে মাত্র ১৩৪ রান। সিরিজের সবচেয়ে দৃষ্টিকটু দিক সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীন, কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যাটিং। দু’একজন সামান্য কিছু অবদান রেখেছেন মাত্র। কিন্তু দলগত পারফরম্যান্স ছিল একেবারে অনুজ্জ্বল। ম্যাচশেষে এ প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘সিরিজে ব্যক্তিগত কিছু পারফরম্যান্স হয়েছে। হয়তো প্রথম ম্যাচে সাকিব ভালো খেলেছে। তামিম আজকে (শনিবার) রান পেয়েছে, ইমরুল পেয়েছে। যেটা হয়েছে, দলের জন্য কার্যকর হতে পারত কিংবা প্রতিপক্ষকে ভোগাতে পারত তেমন পারফরম্যান্স হয়নি। যেটা আমরা ঘরের কন্ডিশনে করে আসছি, তেমনটা হয়নি।’
শুরুটা ভালো করেও এমন ধসের ব্যাখ্যায় কী বলবেন? জবাবটা শুনুন মাশরাফির মুখেই, ‘ব্যাখ্যা দেয়াটা আসলেই খুব কঠিন। এমন শুরুর পর আমরা আশা করেছিলাম যে রানটা অনেক বড় হবে। বিশেষ করে ৭-৮ জন ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে থাকায় আশা করেছিলাম যে আরো বড় রান হবে। ১ উইকেটে ১০০। এমন শুরু তো আমরা সব সময় করতে পারি না। ধসের ব্যাপারটা আমাদের সঙ্গে বারবার হচ্ছে। হয় তো আমরা মানসিকভাবে ততটা দৃঢ় নই।’
টপঅর্ডারে তামিম, ইমরুল, সাব্বির কোনো ম্যাচে রান পেয়েছে, তো কোনো ম্যাচে পায়নি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছিলেন সিরিজের সবচেয়ে ফ্লপ ব্যাটসম্যান। তিন ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর স্কোর ০, ১ ও ৩ রান। যা তার নামের সঙ্গে বেমানান। মুশফিকুর রহিম না থাকায় মিডলঅর্ডার ছিল একেবারেই এলোমেলো। এরপর লোয়ার অর্ডারে নবিশ ব্যাটসম্যানদের কাছে তো আর বড় স্কোর প্রত্যাশা একটু বাড়াবাড়িই। তার পরও মুশফিকের বিকল্প হিসেবে দুই ম্যাচে নুরুল হাসান সোহান প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলেছেন। মোসাদ্দেকের ওপর দলের বিরাট আস্থা ছিল। কিন্তু সেটা তিনি পূরণ করতে পারেননি। সব মিলে দলের ব্যাটিং প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘টপঅর্ডারে রান করার পর মিডল অর্ডারের একটা বড় দায়িত্ব থাকে সেটাকে টেনে সামনে নিয়ে যাওয়ার। তারপর হয়তোবা ৭-৮ নম্বর ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব থাকে রানটাকে আরেকটু বড় করার। তামিম-ইমরুল যেভাবে খেলছিল তাতে আজকে (গতকাল) ক্ষেত্রতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মিডলঅর্ডার যেভাবে ধসে পড়েছে কেউ ভাবেনি।’
জয়ের কাছে গিয়ে কিংবা ভালো খেলেও শেষ পর্যন্ত হেরে যাওয়ায় একটা ব্যাখ্যা শেষ পর্যন্ত এসেছে মাশরাফির কাছ থেকে। পরিত্রাণ পাওয়ার মন্ত্র হিসেবে টাইগার অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমাদের এখন মনোযোগ দিতে হবে, সুযোগ তৈরি হলেই তা যে কোনোভাবে কাজে লাগানোর দিকে। সুযোগ হাতছাড়া হতে দেয়া যাবে না।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

‘পরিত্রাণের মন্ত্র’ জানালেন মাশরাফি

আপডেট টাইম : ১২:৪৫:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জানুয়ারী ২০১৭

‘নিউজিল্যান্ডের বিরুপ কন্ডিশনে সিরিজ হারবে বাংলাদেশ’ এমনটা অনুমিতই ছিল। কিন্তু এমন বাজেভাবে কিংবা লড়াই ছাড়াই যে ওয়ানডে ম্যাচে আত্মাহুতি দেবেন মাশরাফিরা, সিরিজ শুরুর পূর্বে তা কারোর ধারণাতেই ছিল না। ‘অন্তত একটা ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ’— এ কথায় বাজি ধরার লোকের সংখ্যাই ছিল অগণিত। কিন্তু পুরো ওয়ানডে সিরিজের চিত্র পর্যালোচনা করলে কী দেখতে পাওয়া যায়? একটা ম্যাচ নয়, সিরিজ জেতার দারুণ সম্ভাবনা ছিল মাশরাফিদের।
প্রথম ওয়ানডেতে কিউইদের পাহাড়সম রানের নিচে চাপা পড়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২৫১ রানে অলআউট করেও জিততে পারলো না। উল্টো ৬৭ রানে হেরে সিরিজ খোয়াল টাইগাররা। আর শনিবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে শুরুতে ভালো ব্যাটিং করেও শেষ পর্যন্ত সংগ্রহ দাঁড় করালো মাত্র ২৩৬। হারলো ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। এর ফলে আড়াই বছর পর হতে হলো ‘হোয়াইটওয়াশ’।
এমন হারের ব্যাখ্যায় সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি যা বললেন তার সারসংক্ষেপ হলো- দলের সিনিয়রদের বাজে পারফরম্যান্স, দলীয় পারফরম্যান্সের অভাব এবং মানসিক দুর্বলতা।
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর পরই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। দুই দলের অধিনায়ক কিংবা ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় গণমাধ্যমের এসে ম্যাচ সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন। এদিন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামস নির্ধারিত সময়ে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিলেও বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এলেন ঘণ্টাখানেক পর। দেরি হেতু ম্যাচশেষে শিষ্যদের নিয়ে দীর্ঘ সভা করেছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সিরিজে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স করা শিষ্যদের নিশ্চয়ই নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিয়ে বুঝিয়েছেন কার কোথায় কী ভুল ছিল?
ভুল তো অবশ্যই ছিল। আগের দুই ওয়ানডেতে ছিল। শনিবারও বাদ যায়নি। ওপেনিংয়ে তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েসের ২১.২ ওভারে উদ্বোধনী জুটির অবদান ১০২। অথচ এই দলই পুরো ৫০ ওভার খেলে ৯ উইকেটে করে ২৩৬ রানে। অবশিষ্ট ২৮.৪ ওভারে করে মাত্র ১৩৪ রান। সিরিজের সবচেয়ে দৃষ্টিকটু দিক সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীন, কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যাটিং। দু’একজন সামান্য কিছু অবদান রেখেছেন মাত্র। কিন্তু দলগত পারফরম্যান্স ছিল একেবারে অনুজ্জ্বল। ম্যাচশেষে এ প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘সিরিজে ব্যক্তিগত কিছু পারফরম্যান্স হয়েছে। হয়তো প্রথম ম্যাচে সাকিব ভালো খেলেছে। তামিম আজকে (শনিবার) রান পেয়েছে, ইমরুল পেয়েছে। যেটা হয়েছে, দলের জন্য কার্যকর হতে পারত কিংবা প্রতিপক্ষকে ভোগাতে পারত তেমন পারফরম্যান্স হয়নি। যেটা আমরা ঘরের কন্ডিশনে করে আসছি, তেমনটা হয়নি।’
শুরুটা ভালো করেও এমন ধসের ব্যাখ্যায় কী বলবেন? জবাবটা শুনুন মাশরাফির মুখেই, ‘ব্যাখ্যা দেয়াটা আসলেই খুব কঠিন। এমন শুরুর পর আমরা আশা করেছিলাম যে রানটা অনেক বড় হবে। বিশেষ করে ৭-৮ জন ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে থাকায় আশা করেছিলাম যে আরো বড় রান হবে। ১ উইকেটে ১০০। এমন শুরু তো আমরা সব সময় করতে পারি না। ধসের ব্যাপারটা আমাদের সঙ্গে বারবার হচ্ছে। হয় তো আমরা মানসিকভাবে ততটা দৃঢ় নই।’
টপঅর্ডারে তামিম, ইমরুল, সাব্বির কোনো ম্যাচে রান পেয়েছে, তো কোনো ম্যাচে পায়নি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছিলেন সিরিজের সবচেয়ে ফ্লপ ব্যাটসম্যান। তিন ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর স্কোর ০, ১ ও ৩ রান। যা তার নামের সঙ্গে বেমানান। মুশফিকুর রহিম না থাকায় মিডলঅর্ডার ছিল একেবারেই এলোমেলো। এরপর লোয়ার অর্ডারে নবিশ ব্যাটসম্যানদের কাছে তো আর বড় স্কোর প্রত্যাশা একটু বাড়াবাড়িই। তার পরও মুশফিকের বিকল্প হিসেবে দুই ম্যাচে নুরুল হাসান সোহান প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলেছেন। মোসাদ্দেকের ওপর দলের বিরাট আস্থা ছিল। কিন্তু সেটা তিনি পূরণ করতে পারেননি। সব মিলে দলের ব্যাটিং প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘টপঅর্ডারে রান করার পর মিডল অর্ডারের একটা বড় দায়িত্ব থাকে সেটাকে টেনে সামনে নিয়ে যাওয়ার। তারপর হয়তোবা ৭-৮ নম্বর ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব থাকে রানটাকে আরেকটু বড় করার। তামিম-ইমরুল যেভাবে খেলছিল তাতে আজকে (গতকাল) ক্ষেত্রতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মিডলঅর্ডার যেভাবে ধসে পড়েছে কেউ ভাবেনি।’
জয়ের কাছে গিয়ে কিংবা ভালো খেলেও শেষ পর্যন্ত হেরে যাওয়ায় একটা ব্যাখ্যা শেষ পর্যন্ত এসেছে মাশরাফির কাছ থেকে। পরিত্রাণ পাওয়ার মন্ত্র হিসেবে টাইগার অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমাদের এখন মনোযোগ দিতে হবে, সুযোগ তৈরি হলেই তা যে কোনোভাবে কাজে লাগানোর দিকে। সুযোগ হাতছাড়া হতে দেয়া যাবে না।’