ঢাকা ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দয়া করে বাচ্চাদের হতাশ করবেন না : শিক্ষামন্ত্রী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:০২:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬
  • ৩১৮ বার

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, একশ্রেণির জ্ঞানী আছেন, যারা কোনো পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে এর সমালোচনা করেন, ওই জ্ঞানীদের বলবো, দয়া করে বাচ্চাদের নিরুৎসাহিত করবেন না। আমাদের ভুল থাকলে ধরিয়ে দেন। জ্ঞানবানদের কাছে অনুরোধ, বাচ্চাদের হতাশ করবেন না।

শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ মিলনায়তনে অবসরপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক-কর্মচারীদের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ৫৭৯ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীর হাতে কল্যাণ ও অবসর সুবিধা বাবদ প্রায় ২৪ কোটি টাকার চেক দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগে পঞ্চম শ্রেণিতে দুটি পরীক্ষা হতো। বৃত্তি পরীক্ষা আলাদাভাবে নেওয়া হতো। এখন আমরা পরীক্ষা কমিয়ে কমিয়ে একটি করেছি, বৃত্তি পরীক্ষা আলাদাভাবে নেওয়া হয় না। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় যারা ভালো করছে তাদেরকে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।

‘তবে এক শ্রেণি এই পরীক্ষা নিয়ে সমালোচনা করে। কারা করেন যাদের বাচ্চা বিদেশে পড়ে, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। হাজার হাজার টাকা দিয়ে পড়ান তারা। বাংলাদেশে গরিব মানুষের বাস। সবাইকে পড়াতে হবে। এই যুক্তি তারা মানতে চান না। কারণ তাদের ছেলে-মেয়ে তো বিদেশে থাকে। দেশে কম আসেন। যদি দুটি পরীক্ষা না থাকত, তাহলে তারা দেশেই আসত না’ বলেন নাহিদ।

মন্ত্রী বলেন, আবার একশ্রেণির জ্ঞানী আছেন, যারা পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেই এর সমালোচনা করেন। তাদের কাজই হলো আমাদের বাচ্চাদের নিরুৎসাহিত করা, হাতাশ করে দেওয়া। ফল প্রকাশ হলেই এরা টেলিভিশনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বলেন কিছুই হয়নি, কিছুই হয়নি। বলেন এসএসইসি, এসচএসইসির মানটাই না কি দেখানো মান।

‘এই জ্ঞানবানদের বলবো আমাদের ভুল থাকলে ধরিয়ে দেন। কীভাবে বাচ্চাদের ভালো আরও ভালো করে শেখানো যায়, শিক্ষকদের উদ্বুদ্ধ করা যায়। এই গাইড বই, নোট বই, কোচিং বাণিজ্য আর থাকবে না আমরা আইন করছি। সব বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমাদের যেসব জ্ঞানীরা আছেন আমি বিনীতভাবে অনুরোধ করছে বাচ্চাদের হতাশ করবে না’ বলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।

তিনি বলেন, আবার আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন ক্লাসে পড়ান না, কিন্তু বাসায় টাকার বিনিময়ে পড়ান। এসব চলবে না। শিক্ষক হয়ে শিক্ষকের মর্যাদা রাখতে হবে। শিক্ষকরা আমাদের মাথার মণি।

ইসলামের নামে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ছাত্র ও শিক্ষদের জঙ্গিবাদে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাচ্চাদেরকে বোঝানো হচ্ছে জীবন দিলে বেহেস্তে চলে যাবে। যদি এতই পাওয়া যায় তুমি আগে জীবন দাও না কেন? নিজেরা মরে না কিন্তু আমাদের বাচ্চাদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে মৃত্যুর দিকে। কেন করা হচ্ছে? আমাদের দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য। সবাইকে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় গোলাম আযম, নিজামীরা হত্যা লুটপাট করেছে। তাদের বিচার হচ্ছে। যারা অপরাধ করেছে তারা কেউ বাইরে থাকবে না। সবার বিচার করা হবে।

১ জানুয়ারি বই উৎসব করা হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গতবার ১ জানুয়ারি শুক্রবার ছিল, তারপরও আমরা সব স্কুলে একযোগে ওই দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়েছি। এবারও ১ জানুয়ারি বই উৎসব করা হবে। ইতিমধ্যে সব স্কুলে বই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী পাঠ্যপুস্তক উদ্বোধন করবেন।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে ৬ বছরে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা শিক্ষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। যেখানে বিএনপি দিয়েছিল মাত্র ৩৫০ কোটি টাকা।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান প্রমুখ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দয়া করে বাচ্চাদের হতাশ করবেন না : শিক্ষামন্ত্রী

আপডেট টাইম : ০৪:০২:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, একশ্রেণির জ্ঞানী আছেন, যারা কোনো পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে এর সমালোচনা করেন, ওই জ্ঞানীদের বলবো, দয়া করে বাচ্চাদের নিরুৎসাহিত করবেন না। আমাদের ভুল থাকলে ধরিয়ে দেন। জ্ঞানবানদের কাছে অনুরোধ, বাচ্চাদের হতাশ করবেন না।

শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ মিলনায়তনে অবসরপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক-কর্মচারীদের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ৫৭৯ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীর হাতে কল্যাণ ও অবসর সুবিধা বাবদ প্রায় ২৪ কোটি টাকার চেক দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগে পঞ্চম শ্রেণিতে দুটি পরীক্ষা হতো। বৃত্তি পরীক্ষা আলাদাভাবে নেওয়া হতো। এখন আমরা পরীক্ষা কমিয়ে কমিয়ে একটি করেছি, বৃত্তি পরীক্ষা আলাদাভাবে নেওয়া হয় না। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় যারা ভালো করছে তাদেরকে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।

‘তবে এক শ্রেণি এই পরীক্ষা নিয়ে সমালোচনা করে। কারা করেন যাদের বাচ্চা বিদেশে পড়ে, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। হাজার হাজার টাকা দিয়ে পড়ান তারা। বাংলাদেশে গরিব মানুষের বাস। সবাইকে পড়াতে হবে। এই যুক্তি তারা মানতে চান না। কারণ তাদের ছেলে-মেয়ে তো বিদেশে থাকে। দেশে কম আসেন। যদি দুটি পরীক্ষা না থাকত, তাহলে তারা দেশেই আসত না’ বলেন নাহিদ।

মন্ত্রী বলেন, আবার একশ্রেণির জ্ঞানী আছেন, যারা পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেই এর সমালোচনা করেন। তাদের কাজই হলো আমাদের বাচ্চাদের নিরুৎসাহিত করা, হাতাশ করে দেওয়া। ফল প্রকাশ হলেই এরা টেলিভিশনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বলেন কিছুই হয়নি, কিছুই হয়নি। বলেন এসএসইসি, এসচএসইসির মানটাই না কি দেখানো মান।

‘এই জ্ঞানবানদের বলবো আমাদের ভুল থাকলে ধরিয়ে দেন। কীভাবে বাচ্চাদের ভালো আরও ভালো করে শেখানো যায়, শিক্ষকদের উদ্বুদ্ধ করা যায়। এই গাইড বই, নোট বই, কোচিং বাণিজ্য আর থাকবে না আমরা আইন করছি। সব বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমাদের যেসব জ্ঞানীরা আছেন আমি বিনীতভাবে অনুরোধ করছে বাচ্চাদের হতাশ করবে না’ বলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।

তিনি বলেন, আবার আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন ক্লাসে পড়ান না, কিন্তু বাসায় টাকার বিনিময়ে পড়ান। এসব চলবে না। শিক্ষক হয়ে শিক্ষকের মর্যাদা রাখতে হবে। শিক্ষকরা আমাদের মাথার মণি।

ইসলামের নামে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ছাত্র ও শিক্ষদের জঙ্গিবাদে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাচ্চাদেরকে বোঝানো হচ্ছে জীবন দিলে বেহেস্তে চলে যাবে। যদি এতই পাওয়া যায় তুমি আগে জীবন দাও না কেন? নিজেরা মরে না কিন্তু আমাদের বাচ্চাদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে মৃত্যুর দিকে। কেন করা হচ্ছে? আমাদের দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য। সবাইকে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় গোলাম আযম, নিজামীরা হত্যা লুটপাট করেছে। তাদের বিচার হচ্ছে। যারা অপরাধ করেছে তারা কেউ বাইরে থাকবে না। সবার বিচার করা হবে।

১ জানুয়ারি বই উৎসব করা হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গতবার ১ জানুয়ারি শুক্রবার ছিল, তারপরও আমরা সব স্কুলে একযোগে ওই দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়েছি। এবারও ১ জানুয়ারি বই উৎসব করা হবে। ইতিমধ্যে সব স্কুলে বই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী পাঠ্যপুস্তক উদ্বোধন করবেন।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে ৬ বছরে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা শিক্ষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। যেখানে বিএনপি দিয়েছিল মাত্র ৩৫০ কোটি টাকা।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান প্রমুখ।