ভাগ্য আর দুর্ভাগ্য যেন দুই সতীন। একদমই বনিবনা হয় না তাদের। ভাগ্য যখন পাশে এসে দাঁড়ায়, দুর্ভাগ্য তখন কাছে ঘেঁষে
না। আবার দুর্ভাগ্য যখন ছায়াসঙ্গী হয়, ভাগ্য তখন দশহাত দূরে থাকে। মুশফিকুর রহিমের কথাই ধরুন। এতদিন ভাগ্যের পিচঢালা পথে তার নির্বিঘœ যাত্রায় ব্যাঘাত ঘটেনি। সেই ২০১০ সালের ১৫ জুলাই থেকে গত ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ তাদের ৯২টি ওয়ানডে ম্যাচের সবকটিতে পেয়েছে তাকে। গত সোমবার পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে সব ওডিআই ম্যাচ খেলা একমাত্র ক্রিকেটার তিনি। দুর্লভ রেকর্ড বৈকি। এমন গৌরবময় রেকর্ড নিয়ে গর্ব করতেই পারেন মুশফিক। এ সময়ে টানা ৯২ ম্যাচ খেলেছেন তিনি ছয় বছরের বেশি সময় ধরে। নিয়তি তাকে হঠাৎ দুর্ভাগ্যের মহাসড়কে নিয়ে এলো। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওডিআইতে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি তার নিরবচ্ছিন্ন পথচলায় ছেদ টেনে দিল। মুশফিক চলে গেলেন মাঠের বাইরে। ছয় বছরের বেশি টানা খেলার সুখানুভূতিতে যতিচিহ্ন এঁকে দিল নিয়তি। গৌরবের রেকর্ড নিয়ে মুশফিক এখন ক্রিকেট থেকে সাময়িক ছুটিতে। কিউইদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের বাকি দুটি ম্যাচ এবং তিন ম্যাচের টি ২০ সিরিজ খেলতে পারবেন না তিনি।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের হয়ে ১৬৫ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন মুশফিক। রান করেছেন ৪১১৮। একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিনি ২৩টি হাফ সেঞ্চুরি ও চারটি সেঞ্চুরি করেছেন। ওয়ানডেতে ১৭১টি ডিসমিসাল তার। মুশফিক টেস্টে ৯২টি ও টি ২০ তে ৪৫টি ডিসমিসাল করেছেন। তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশী উইকেটরক্ষকদের মধ্যে বেশি ডিসমিসালের মালিক তিনি।
সোমবারের ম্যাচে ৪২ রানে রিটায়র্ড হার্ট হতে বাধ্য হন মুশফিক। অন্তত সপ্তাহদুয়েক মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাকে। তার ছিটকে পড়াটা বাংলাদেশের জন্য বড়সড় ধাক্কা। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কণ্ঠে তাই আক্ষেপ ঝরে পড়ল, ‘দীর্ঘদিন ধরে তিন ফরম্যাটেই মুশফিক উইকেটের পেছনে যেমন, তেমনি ব্যাট হাতেও ফর্মে ছিল। তাই ওর ছিটকে পড়াটা আমাদের জন্য একটি আঘাত। কী আর করা। এটা খেলারই অংশ।’ এতদিন মুশফিকের সঙ্গে হাঁটছিল ভাগ্য। সেই জায়গা এখন দুর্ভাগ্যের দখলে। এটাও ক্ষণস্থায়ী। দু’সপ্তাহেরই তো ব্যাপার!