ঢাকা ১১:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিশুদের ভবিষ্যত নষ্ট করছে টিভি-স্মার্টফোন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬
  • ৪৮৭ বার

অনেক অভিভাবকরা গর্ব করে তাদের বাচ্চাদের নিয়ে বলেন, ‘আমার বাচ্চা এই বয়সেই মোবাইল বিশারদ হয়ে উঠেছে। কোন ফোল্ডারে কী আছে, কোথায় কোন গেম আছে সব মুখস্থ।’

শুধু তাই নয়,বাচ্চা খেতে চাইছে না। তখনই টিভি চালিয়ে কার্টুন অথবা গান দেখিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ানো হয়।

সম্প্রতি আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স-এর একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দেড় বছরের নীচের কোনও শিশুরই মোবাইল বা টিভি স্ক্রিনের প্রতি আসক্তি অত্যন্ত খারাপ। আর এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরই সচেতন হতে হবে।

১) কল্পনাশক্তি হারিয়ে যাওয়া:

ঠাকুরমার ঝুলি বা মজার মজার গল্পের বই এখন আর কোনও বাচ্চা পড়ে না। টিভিতে কার্টুন বা সস্তায় মেলা ডিভিডি রয়েছে। ফলে বই পড়ে নিজেদের কল্পনাশক্তি বাড়ানোর সময় নেই তাদের! অভিভাবকদের কাছেও সময় নেই, যে বাচ্চার সঙ্গে বসে বই পড়েন। বাচ্চারা যত বেশি মোবাইল বা টিভির প্রতি আসক্ত হয় ততই এদের কল্পনাশক্তি হারিয়ে যায়। খুব কাছের জিনিসের সঙ্গেও তারা নিজেদের মেলাতে পারে না।

অসামাজিক হয়ে পড়া:

এই আসক্তির ফলে অসামাজিক হয়ে পড়ে বাচ্চারা। কারণ তাদের সমস্ত মনোযোগ শুধুমাত্র মোবাইল বা টিভির দিকেই থাকে। ফলে সে সময় অন্য কোনও ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত রয়েছে কিনা, বা সে বাড়ির বাইরে কোনও জায়গায় বেড়াতে এসেছে কিনা সে সব মাথায় থাকে না। এই বাচ্চারা হয় অন্য কোনও বাচ্চাকে মারবে-উত্যক্ত করবে, অথবা অন্য বাচ্চাদের হাতে তাদের নিগ্রহ হবে। অন্তত গবেষণা তাই বলছে।

অতিরিক্ত ওজন:

সারাক্ষণ মোবাইল বা টিভি নিয়ে মেতে থাকার ফলে বাচ্চাদের মধ্যে খেলার ইচ্ছেটাই আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়। গবেষণা বলছে, এসব বাচ্চারা অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার মধ্যেই অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা ভোগে। তার সঙ্গে টিভি দেখার সময় স্ন্যাক্স এবং চিনিযুক্ত ড্রিঙ্ক পান করা পছন্দ করে। ফলে অন্যান্য বাচ্চাদের তুলনায় মোটা হওয়ার এদের ৪৩ শতাংশ প্রবণতা বেশি থাকে।

৪) কম ঘুমানো:

ওজন বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ কম ঘুম। যে সমস্ত বাচ্চাদের হাতে অল্প বয়সেই মোবাইল দেওয়া হয় রাতে ঘুমের সময় কোনও নোটিফিকেশন বা এসএমএসের জন্য ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ফলে রাতে বারবার তাদের ঘুম ভেঙে যায়। এ ফলে প্রয়োজনীয় ঘুম থেকে বঞ্চিত হয় তারা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে সমস্ত বাচ্চারা ৭ ঘণ্টার কম ঘুমোয় তাদের ওজন বাড়ার প্রবণতা থাকে। তুলনায় ৭-৯ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমানো বাচ্চারা অনেক ফিট থাকে।

চোখের সমস্যা:

দিনের মধ্যে অনেকটা সময় মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের ওপর ভীষণ চাপ পড়ে। বিশেষত কম আলোয় একনাগাড়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের পলক পড়ার হার কমে যায়। যার ফলে চোখে যন্ত্রণা, ড্রাই আইস-এ সমস্যা হয়। এটাই পরবর্তীকালে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার অন্যতম কারণ হয়। সমীক্ষা বলছে, প্রতি ৮ জন বাচ্চার মধ্যে একজন ক্লাসে ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা ঠিকমতো পড়তে পারে না। তার ফলে কম বয়সে চশমার সাহায্য নিতে হয়।

পরীক্ষায় খারাপ ফল:

পরীক্ষায় ফল খারাপ হচ্ছে বেশিরভাগ শিশুদের। যত বুদ্ধিমান বাচ্চাই হোক না কেন, হাতে ল্যাপটপ থাকার কারণে বেশ খানিকটা সময় সোশ্যাল মিডিয়া, মেইল পড়া, ভিডিয়ো দেখা ইত্যাদিতে সময় নষ্ট করে ফেলে। তার প্রভাব গিয়ে পড়ছে রেজাল্টে। সমীক্ষায় আরও প্রকাশিত হয়েছে, ল্যাপটপে নোট নেওয়ার চেয়ে হাতে লিখে নোট নিলে তা মনে রাখা এবং বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শিশুদের ভবিষ্যত নষ্ট করছে টিভি-স্মার্টফোন

আপডেট টাইম : ১২:৪৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

অনেক অভিভাবকরা গর্ব করে তাদের বাচ্চাদের নিয়ে বলেন, ‘আমার বাচ্চা এই বয়সেই মোবাইল বিশারদ হয়ে উঠেছে। কোন ফোল্ডারে কী আছে, কোথায় কোন গেম আছে সব মুখস্থ।’

শুধু তাই নয়,বাচ্চা খেতে চাইছে না। তখনই টিভি চালিয়ে কার্টুন অথবা গান দেখিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ানো হয়।

সম্প্রতি আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স-এর একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দেড় বছরের নীচের কোনও শিশুরই মোবাইল বা টিভি স্ক্রিনের প্রতি আসক্তি অত্যন্ত খারাপ। আর এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরই সচেতন হতে হবে।

১) কল্পনাশক্তি হারিয়ে যাওয়া:

ঠাকুরমার ঝুলি বা মজার মজার গল্পের বই এখন আর কোনও বাচ্চা পড়ে না। টিভিতে কার্টুন বা সস্তায় মেলা ডিভিডি রয়েছে। ফলে বই পড়ে নিজেদের কল্পনাশক্তি বাড়ানোর সময় নেই তাদের! অভিভাবকদের কাছেও সময় নেই, যে বাচ্চার সঙ্গে বসে বই পড়েন। বাচ্চারা যত বেশি মোবাইল বা টিভির প্রতি আসক্ত হয় ততই এদের কল্পনাশক্তি হারিয়ে যায়। খুব কাছের জিনিসের সঙ্গেও তারা নিজেদের মেলাতে পারে না।

অসামাজিক হয়ে পড়া:

এই আসক্তির ফলে অসামাজিক হয়ে পড়ে বাচ্চারা। কারণ তাদের সমস্ত মনোযোগ শুধুমাত্র মোবাইল বা টিভির দিকেই থাকে। ফলে সে সময় অন্য কোনও ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত রয়েছে কিনা, বা সে বাড়ির বাইরে কোনও জায়গায় বেড়াতে এসেছে কিনা সে সব মাথায় থাকে না। এই বাচ্চারা হয় অন্য কোনও বাচ্চাকে মারবে-উত্যক্ত করবে, অথবা অন্য বাচ্চাদের হাতে তাদের নিগ্রহ হবে। অন্তত গবেষণা তাই বলছে।

অতিরিক্ত ওজন:

সারাক্ষণ মোবাইল বা টিভি নিয়ে মেতে থাকার ফলে বাচ্চাদের মধ্যে খেলার ইচ্ছেটাই আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়। গবেষণা বলছে, এসব বাচ্চারা অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার মধ্যেই অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা ভোগে। তার সঙ্গে টিভি দেখার সময় স্ন্যাক্স এবং চিনিযুক্ত ড্রিঙ্ক পান করা পছন্দ করে। ফলে অন্যান্য বাচ্চাদের তুলনায় মোটা হওয়ার এদের ৪৩ শতাংশ প্রবণতা বেশি থাকে।

৪) কম ঘুমানো:

ওজন বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ কম ঘুম। যে সমস্ত বাচ্চাদের হাতে অল্প বয়সেই মোবাইল দেওয়া হয় রাতে ঘুমের সময় কোনও নোটিফিকেশন বা এসএমএসের জন্য ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ফলে রাতে বারবার তাদের ঘুম ভেঙে যায়। এ ফলে প্রয়োজনীয় ঘুম থেকে বঞ্চিত হয় তারা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে সমস্ত বাচ্চারা ৭ ঘণ্টার কম ঘুমোয় তাদের ওজন বাড়ার প্রবণতা থাকে। তুলনায় ৭-৯ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমানো বাচ্চারা অনেক ফিট থাকে।

চোখের সমস্যা:

দিনের মধ্যে অনেকটা সময় মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের ওপর ভীষণ চাপ পড়ে। বিশেষত কম আলোয় একনাগাড়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের পলক পড়ার হার কমে যায়। যার ফলে চোখে যন্ত্রণা, ড্রাই আইস-এ সমস্যা হয়। এটাই পরবর্তীকালে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ার অন্যতম কারণ হয়। সমীক্ষা বলছে, প্রতি ৮ জন বাচ্চার মধ্যে একজন ক্লাসে ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা ঠিকমতো পড়তে পারে না। তার ফলে কম বয়সে চশমার সাহায্য নিতে হয়।

পরীক্ষায় খারাপ ফল:

পরীক্ষায় ফল খারাপ হচ্ছে বেশিরভাগ শিশুদের। যত বুদ্ধিমান বাচ্চাই হোক না কেন, হাতে ল্যাপটপ থাকার কারণে বেশ খানিকটা সময় সোশ্যাল মিডিয়া, মেইল পড়া, ভিডিয়ো দেখা ইত্যাদিতে সময় নষ্ট করে ফেলে। তার প্রভাব গিয়ে পড়ছে রেজাল্টে। সমীক্ষায় আরও প্রকাশিত হয়েছে, ল্যাপটপে নোট নেওয়ার চেয়ে হাতে লিখে নোট নিলে তা মনে রাখা এবং বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।