ঢাকা ০৫:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপির রাজনীতির একাল সেকালের ব্যাপারে যা জানালেন তারেক রহমান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৭:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৫ বার

দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এই বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন — আগামী নির্বাচনে বিএনপির কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি, বিচারব্যবস্থা, এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও সিনিয়র সাংবাদিক কাদির কল্লোল। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় অংশে উঠে এসেছে বিএনপির রাজনীতিতে পরিবর্তন ও তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর।

বিএনপির রাজনীতিতে পরিবর্তন

২০০৪ সালে ঢাকায় তাঁর নেওয়া আগের এক সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ তুলে প্রশ্ন করা হয়— “আপনি তখন বলেছিলেন, দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে চান। এত বছর পর বিএনপির রাজনীতিতে আসলে কী পরিবর্তন এসেছে?”

জবাবে তারেক রহমান বলেন, “আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য সব সময়ই জনগণ, দেশ ও সার্বভৌমত্বকে কেন্দ্র করে। আমরা গর্ব করি দুটি বিষয়ে— দেশের গার্মেন্টস শিল্প এবং প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা। দুটোরই সূচনা বিএনপির সময়েই হয়েছিল।”

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েই প্রবাসীদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ ও গার্মেন্টস খাতের বিস্তার ঘটে। আবার জিয়াউর রহমান যখন দায়িত্ব নেন, তখন দুর্ভিক্ষে বিপর্যস্ত দেশকে ধীরে ধীরে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা হয়। এমনকি আমরা তখন সামান্য হলেও চাল বিদেশে রপ্তানি করেছিলাম।”

রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রসঙ্গে তিনি যোগ করেন, “যে সময় একদলীয় শাসন চালু করে বাকশাল গঠন করা হয়েছিল, বিএনপি তখনই বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনে। ভবিষ্যতেও আমরা এই ইতিবাচক দিকগুলো মাথায় রেখে এগোব। আমাদের লক্ষ্য— গণতন্ত্রের ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা।”

জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন

বিবিসির প্রশ্ন ছিল— “বাংলাদেশে অভিযোগ থাকে, ক্ষমতায় গেলে রাজনৈতিক দলগুলো জবাবদিহিতা এড়িয়ে যায়। বিএনপিও কি সেই ফাঁদে পড়বে না?”

তারেক রহমানের জবাব, “অভিযোগ থাকা স্বাভাবিক। আমরা অভিযোগগুলোকে বিবেচনায় রাখব। তবে অভিযোগ মানেই সব সত্য নয়। সময় ও সুযোগ পেলে আমরা কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারব যে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ— আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যেন জবাবদিহিতা বাস্তবায়িত হয়।”

তিনি আরও বলেন, “এটা বাস্তবতা যে পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়। দেশ গঠনের দায়িত্ব শুধু আমার একার নয়— জনগণকেও এতে অংশ নিতে হবে। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আমাদের সাধ্যমতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”

নেতৃত্বে পরিবর্তন ও প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতা

প্রবাসে দীর্ঘ ১৭ বছর কাটিয়ে দল পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা কেমন— এমন প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, “বিদেশে থেকে দল পরিচালনা করা সহজ নয়। সময়ের পার্থক্য, যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা— সব মিলিয়ে এটা ছিল চ্যালেঞ্জিং। আমার পরিবার, বিশেষ করে স্ত্রী ও সন্তানদের সমর্থন না পেলে এটা সম্ভব হতো না।”

তিনি দলের নেতাকর্মীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান, “অসংখ্য নেতাকর্মী দেশের ভেতরে থেকে নানা বাধা সত্ত্বেও সংগঠনকে সচল রেখেছেন, জনগণের দাবির পক্ষে লড়েছেন— তাদের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।”

শেষে তিনি বলেন, “বিদেশে থেকে আমি অনেক কিছু দেখেছি ও শিখেছি। যদি সুযোগ পাই, সেই অভিজ্ঞতাগুলো দেশের কল্যাণে কাজে লাগাতে চাই। দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারাটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিএনপির রাজনীতির একাল সেকালের ব্যাপারে যা জানালেন তারেক রহমান

আপডেট টাইম : ০৬:৩৭:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এই বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন — আগামী নির্বাচনে বিএনপির কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি, বিচারব্যবস্থা, এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও সিনিয়র সাংবাদিক কাদির কল্লোল। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় অংশে উঠে এসেছে বিএনপির রাজনীতিতে পরিবর্তন ও তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর।

বিএনপির রাজনীতিতে পরিবর্তন

২০০৪ সালে ঢাকায় তাঁর নেওয়া আগের এক সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ তুলে প্রশ্ন করা হয়— “আপনি তখন বলেছিলেন, দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে চান। এত বছর পর বিএনপির রাজনীতিতে আসলে কী পরিবর্তন এসেছে?”

জবাবে তারেক রহমান বলেন, “আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য সব সময়ই জনগণ, দেশ ও সার্বভৌমত্বকে কেন্দ্র করে। আমরা গর্ব করি দুটি বিষয়ে— দেশের গার্মেন্টস শিল্প এবং প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা। দুটোরই সূচনা বিএনপির সময়েই হয়েছিল।”

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েই প্রবাসীদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ ও গার্মেন্টস খাতের বিস্তার ঘটে। আবার জিয়াউর রহমান যখন দায়িত্ব নেন, তখন দুর্ভিক্ষে বিপর্যস্ত দেশকে ধীরে ধীরে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা হয়। এমনকি আমরা তখন সামান্য হলেও চাল বিদেশে রপ্তানি করেছিলাম।”

রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রসঙ্গে তিনি যোগ করেন, “যে সময় একদলীয় শাসন চালু করে বাকশাল গঠন করা হয়েছিল, বিএনপি তখনই বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনে। ভবিষ্যতেও আমরা এই ইতিবাচক দিকগুলো মাথায় রেখে এগোব। আমাদের লক্ষ্য— গণতন্ত্রের ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা।”

জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন

বিবিসির প্রশ্ন ছিল— “বাংলাদেশে অভিযোগ থাকে, ক্ষমতায় গেলে রাজনৈতিক দলগুলো জবাবদিহিতা এড়িয়ে যায়। বিএনপিও কি সেই ফাঁদে পড়বে না?”

তারেক রহমানের জবাব, “অভিযোগ থাকা স্বাভাবিক। আমরা অভিযোগগুলোকে বিবেচনায় রাখব। তবে অভিযোগ মানেই সব সত্য নয়। সময় ও সুযোগ পেলে আমরা কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারব যে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ— আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যেন জবাবদিহিতা বাস্তবায়িত হয়।”

তিনি আরও বলেন, “এটা বাস্তবতা যে পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়। দেশ গঠনের দায়িত্ব শুধু আমার একার নয়— জনগণকেও এতে অংশ নিতে হবে। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আমাদের সাধ্যমতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”

নেতৃত্বে পরিবর্তন ও প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতা

প্রবাসে দীর্ঘ ১৭ বছর কাটিয়ে দল পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা কেমন— এমন প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, “বিদেশে থেকে দল পরিচালনা করা সহজ নয়। সময়ের পার্থক্য, যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা— সব মিলিয়ে এটা ছিল চ্যালেঞ্জিং। আমার পরিবার, বিশেষ করে স্ত্রী ও সন্তানদের সমর্থন না পেলে এটা সম্ভব হতো না।”

তিনি দলের নেতাকর্মীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান, “অসংখ্য নেতাকর্মী দেশের ভেতরে থেকে নানা বাধা সত্ত্বেও সংগঠনকে সচল রেখেছেন, জনগণের দাবির পক্ষে লড়েছেন— তাদের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।”

শেষে তিনি বলেন, “বিদেশে থেকে আমি অনেক কিছু দেখেছি ও শিখেছি। যদি সুযোগ পাই, সেই অভিজ্ঞতাগুলো দেশের কল্যাণে কাজে লাগাতে চাই। দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারাটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।”