বলিউডের নন্দিত অভিনেতা ইরফান খানকে নিয়ে বাংলাদেশে ‘ডুব’ নামের একটি সিনেমা নির্মাণ করছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সিনেমাটির কাহিনী নিয়ে শুরু থেকেই গোপনীয়তা রক্ষা করছেন এর নির্মাতা ও কলা-কুশলীরা।
এবার কলকাতার শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা আনন্দবাজার জানালো বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জীবনী নিয়ে নির্মিত হচ্ছে ফারুকীর ‘ডুব’। এতে হুমায়ূনের চরিত্রে অভিনয় করছেন ইরফান খান।
“হুমায়ূন আহমেদের ‘নতুন উপন্যাস’ ইরফান” শিরোনামের প্রতিবেদনটির শুরুতে বলা হয়, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ডুব’ ছবিতে ইরফান খান অভিনয় করছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রে। গল্পটাও নাকি অনুপ্রাণিত তার জীবন থেকে। যদিও অভিনেতা থেকে পরিচালক কেউই এ ব্যাপারে ‘কনফার্ম’ করছেন না কিছুই।”
পত্রিকাটি জানায়, হুমায়ূনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলিউডের ইরফান খান, তার মেয়ে শিলা আহমেদের চরিত্রে অভিনয় করছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। হুমায়ূনের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন খানের চরিত্রে অভিনয় করছেন রোকেয়া প্রাচী ও দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন চরিত্রে অভিনয় করেছেন কলকাতার অভিনেত্রী পার্নো মিত্র।
হুমায়ূন কন্যা শীলা আহমেদ বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে এ রকম কোনো খবর দেখিনি। আমি সত্যি কিছু জানি না। তবে ফারুকীর ছবিতে যদি লেখা থাকে ‘এটা হুমায়ূন আহমেদের জীবন অবলম্বনে’ তা হলে অবশ্যই ওর আমাদের কাছ থেকে পারমিশন নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ও যদি কয়েকটা ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছবিটা বানায়, সে ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। তবে ফারুকী যে বাবাকে, বাবার লেখাকে অসম্ভব ভালোবাসে সেটা আমি জানি। এখন ছবিটা দেখেই যা বলার বলব।’
ফারুকী বলেন, ‘আমি মনে করি শীলার মন্তব্য এই বিষয়ে শেষ কথাটা বলে দেয়। আমাদের তরফ থেকে আমি পরিষ্কার করে বলছি, ছবির ক্রেডিট বা ক্যাম্পেইনে বা কমিউনিকেশন ম্যাটেরিয়েলে আমরা কখনোই দাবি করি নাই বা করার কোনো সম্ভাবনাও নাই যে ‘আমরা হুমায়ুন আহমেদের বায়োপিক বানাচ্ছি’। আমরা কোনো বায়োপিক বানাচ্ছি না।’
এই প্রতিবেদনের জন্য আনন্দবাজারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফারুকি বলেন, ‘আনন্দবাজারকে ধন্যবাদ হুমায়ুন আহমেদের দুই পরিবারেরই ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য। আমাদের টেলিভিশন আর পত্র-পত্রিকা দেখলে তো মনেই হয় না যে প্রথম পরিবারটা পৃথিবীতে একজিস্ট করে। হ্যাঁ আমি বুঝি, প্রবল আত্মসম্মান বোধ এবং অভিমান থেকে উনারা দূরে থাকেন। পাশপাশি এটাও সত্য হুমায়ূনের যাবতীয় স্মৃতির উত্তরাধিকার হিসাবে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে জনমানসে প্রতিষ্ঠিত করার একটা মিশনও বোধ হয় এখানে চলমান। তবে, ভাববেন না আমি কেবল উনার প্রথম পরিবারের ব্যাথায় কাতর। এক লেখায় আমি লিখেছিলাম আমি শাওন এবং তার সন্তানদের বেদনা অনুভব করেও কাঁদছি। জীবন অনেক জটিল। এখানে কোনো চির নায়ক, চির ভিলেন নাই। আহারে জীবন, আহা জীবন।’
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে ফারুকী বলেন, ‘আমি চাইছি দর্শক ছবিটা দেখুক আগে। আমি নিজেও হুমায়ূন আহমেদের বিরাট ফ্যান। এটুকুই বলব, আমি একটা পরিবারের গল্প বলছি, কয়েকজন মানুষের ভালোলাগা, দুঃখ, ক্ষোভ, হিংসা— এই আবেগগুলো ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি। সেটা কার জীবন অবলম্বনে, সেটার বিচার ছবি দেখার পরে হলেই ভালো’।
সিনেমাটির শুটিংয়ের আগে হুমায়ূন আহমেদের প্রচুর ভিডিও দেখেছিলেন ইরফান খান। সেগুলো দেখেই কথাবার্তা বলার ধরন ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে হোমওয়ার্ক করেছিলেন।
এদিকে হুমায়ূনের দ্বিতীয় স্ত্রী শাওন খবরটি শুনে আশ্চর্য হন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম শুনলাম এ রকম একটা ছবি হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের ওপর। আমার কোনো ধারণাই নেই। পরিচালক কি কোনোদিন হুমায়ূন আহমেদকে মিট করেছিলেন? আমার মনে হয় না। আমি একজনের ওপর ছবি করছি, তার পরিবারের সঙ্গে কথা না-বলে, এটা আমার কাছে যথেষ্ট বিরক্তিকর। খুব খারাপ লাগছে।’
‘ডুব’ প্রযোজনা করছে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া, ভারতের এসকে মুভিজ এবং ইরফান খান। চলতি বছরের প্রথমদিকে বাংলাদেশের একাধিক লোকেশনে সিনেমাটির দৃশ্যায়ন হয়। বর্তমানে সম্পাদনার টেবিলে থাকা ‘ডুব’ শীঘ্রই মুক্তির কথা রয়েছে।