জেল হত্যার মতো কলঙ্কজনক ঘটনার মতো দেশে বিরোধী চক্রান্ত নস্যাতে দেশবাসীকে সজাগ থাকার অাহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে পৃথকভাবে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতির প্রতি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জেলহত্যা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে এক শোকাবহ দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামান বন্দী অবস্থায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেন।’
তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার পাশাপাশি জাতিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কারাবন্দী অবস্থায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতীয় ইতিহাসে জেলহত্যা দিবস এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ঘাতকচক্রের উদ্দেশ্য ছিল দেশে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের উত্থানের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চেতনা থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলা। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আড়াল করে খণ্ডিত ও ভুল ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা। কিন্তু ঘাতকচক্রের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর আদর্শ চির জাগরূক থাকবে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে জাতীয় চার নেতার অবদান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে কারাগারের অভ্যন্তরে এ ধরনের বর্বর হত্যাকান্ড নজিরবিহীন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতা হত্যাকান্ড ছিল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতা। এর মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলার মাটি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল।
পরবর্তীতে ২১ বছর সেই ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদদাতারা দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শাসকগোষ্ঠী কখনও সামরিক লেবাসে, কখনও গণতন্ত্রের মুখোশ পরে, অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা ধরে রাখে। আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে। হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার বদলে পুরস্কৃত করে। খুনিদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের অপচেষ্টা করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনাহয়। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর করা হয়েছে। জেলহত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি মামলার রায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।