কী হবে ৭ নভেম্বরে

নিরুত্তাপ রাজনীতিতে আবারো উত্তাপ। দেশের দুই প্রধান দলই নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় হঠাৎ করেই রাজনীতির উত্তেজনা সাধারণ মানুষের মনেও ভীতির সঞ্চার করছে। ৭ নভেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে বিপ্লব ও গণসংহতি দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউনের মাধ্যমে সমাবেশ করে রাজনৈতিক শক্তির জানান দিতে চায়। অন্যদিকে বিএনপির সমাবেশ যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষসতাসীন আওয়ামী লীগ। এ ঘোষণার পর থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে হঠাৎ করে আবারো ভীতি, শঙ্কা কাজ করছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালযের পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের শিক্ষক নুমান মাহফুজ বলেন, ৭ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-বিএনপি যে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে তাতে খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি শঙ্কা কাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। আগামী নির্বাচনের আগে নিজেদের শক্তি ও অবস্থান জানান দিতে দুই দলের যে আচরণ ফুটে উঠছে, তা জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। ওই দিন বিএনপি সমাবেশ করতে গেলে আর আওয়ামী লীগ যদি তা প্রতিহত করতে যায় তাহলে সংঘর্ষ বেঁধে যাওয়ার খুব সম্ভাবনা রয়েছে। আর সংঘর্ষ যদি বেঁধেই যায় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষই বেশি।

এদিকে, কয়েকজন কর্মজীবী সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক সংহিসতা নেই বলে তাদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি ছিল। এবার ৭ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে পাল্পাপাল্টি অবস্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখন পর্যন্ত যে ভাষায় কথা বলছে, তাতে সাধারণ মানুষের মনে ভয় জমতে শুরু করেছে। কী হবে সেদিন? এ নিয়েও জল্পনা-কল্পনা চলছে। দেশের একজন জ্যেষ্ঠ নাগরিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি যদি সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে, আর আওয়ামী লীগও যদি পুলিশ এবং দলের ক্যাডার বাহিনী মাঠে নামিয়ে দেয়, তাহলে অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ও ভয়ানক হতে পারে।

মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ৭ নভেম্বর স্বাধীনতা সুরক্ষা ও আওয়ামী লীগের পুনর্জন্ম হয়েছে। ওই দিন আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসনতন্ত্র থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র শুরু করেন। এ কারণেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের হাল ধরতে পেরেছিলেন। এরকম একটা দিন জাতীয় জীবনে অর্থবহ একটি দিন। এমন একটি দিবস নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত।

তিনি বলেন, হানিফ সাহেবের বক্তব্য এরকমই। তিনি সবসময়েই বলেন- প্রতিহত করবো, মেরে ফেলবো, করতে দিব না। আর আমরা বলি অবৈধ কোনো কাজ সরকার প্রতিহত করবে। ৭ নভেম্বর নিয়ে হানিফকে আয়নার দিকে তাকিয়ে কথা বলা উচিৎ। যেখানে আওয়ামী লীগ ও জাসদের বিরোধে কুষ্টিয়াতে ৭ জন নিহত হয়েছেন। সেখানে তিনি এ বক্তব্য দেন কী করে।

বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ৭ নভেম্বর সমাবেশ হবে। আমরা প্রত্যাশা করছি- আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমাবেশের অনুমতি দেবে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং এই সমাবেশে মানুষের ঢল নামবে। গণমানুষের ঢল সামাল দেওয়ার ক্ষমতা এই অগণতান্ত্রিক সরকারের নেই। জনগণ কেন ভয় পাবে, তারা স্বতস্ফূর্তভাবেই মাঠে নেমে এসে সমাবেশকে সফল করবে বলেও দাবি করেন রুহুল কবীর রিজভী।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ টেলিফোনে বলেন, ‘দেশের সাধারণ জনগণ মিথ্যা বিপ্লব ও গণসংহতি দিবস পালন করতে দেবে না। আওয়ামী লীগ নয়; সাধারণ মানুষ বিএনপির নৈরাজ্য থেকে বাঁচতেই এমনটা করবে। ৭ নভেম্বরে হাজারো মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছিল। এসব খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। দেশের মানুষ ইতিহাস ভুলে যায়নি। বিএনপি কোনোকালেই গণতন্ত্রের চর্চা করেনি। গণতন্ত্রের বুলি তাদের মুখে মানায় না।’

এদিকে, সম্প্রতি কয়েকটি অনুষ্ঠানে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, নভেম্বর আসলেই বুঝতে পারবেন-বিএনপির শক্তি কতটা রয়েছে। শক্তি প্রদর্শন করে হলেও ৭ নভেম্বরে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। একই কথা বলেছেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস।

ফলে, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করেই আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতি। দুদলই শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। কী হবে আগামী ৭ নভেম্বর? জনমনে এটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর