ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির আবহে আবারও আন্তর্জাতিক আলোচনায় উঠে এসেছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি। তবে এবার নজর ঘুরে গেছে ফোর্দো বা নাতাঞ্জ নয়, বরং মধ্য ইরানের ইস্পাহান শহরের দিকে—যেখানে ভূগর্ভে গড়ে তোলা হয়েছে একটি অত্যন্ত গোপন ও শক্তিশালী পারমাণবিক ঘাঁটি। মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই ঘাঁটিতে রয়েছে ইরানের সবচেয়ে বড় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত, যা একটি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট।
উল্লেখ্য, ২১ জুন ভোরে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর আগে বলা হয়েছিল, এই আক্রমণে ব্যবহৃত হয় ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের এক ডজনেরও বেশি ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা। মূলত ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করতেই এই পদক্ষেপ নেয় ওয়াশিংটন। কিন্তু পরে জানা যায়, ইস্পাহানের ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় এতটাই গভীরে ইউরেনিয়াম সংরক্ষিত ছিল যে, এমনকি বাঙ্কার-বাস্টার বোমাও সেখানে কার্যকর হয়নি।
মার্কিন সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী, ইস্পাহান হলো ইরানের সবচেয়ে গোপন ও দুর্ভেদ্য পারমাণবিক ঘাঁটি। মাটির অনেক নিচে অবস্থিত এই স্থাপনায় সংরক্ষিত রয়েছে দেশটির উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের প্রায় ৬০ শতাংশ। এটি এতটাই গভীরে যে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী বোমারু বিমান বি-২ থেকে ছোড়া ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমাও এ স্থাপনাকে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়। এ কারণে ইস্পাহানে কেবল সাবমেরিন থেকে ছোড়া টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েই আঘাত করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার মার্কিন সিনেট সদস্যদের এক গোপন ব্রিফিংয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেন মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন। উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং সিআইএ পরিচালক জন র্যাডক্লিফ। তারা জানান, ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে ইস্পাহান এবং ফোর্দোতে।
সিনেটর ক্রিস মারফি সাংবাদিকদের বলেন, “ইরানের কিছু পারমাণবিক স্থাপনা এত গভীরে যে মার্কিন হামলা সেখানে পৌঁছাতেই পারে না।” একইভাবে মার্কিন প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, ইরান তার ইউরেনিয়ামের বড় অংশ এমন জায়গায় সংরক্ষণ করেছে যেখানে কোনো সামরিক হামলা কার্যকর হবে না।
তবে প্রতিরক্ষা সচিব হেগসেথ বলেছেন, “আমার জানা অনুযায়ী, ইরান হামলার আগে ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেয়নি।” এমনকি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও দাবি করেন, হামলার আগে কোনো স্থানান্তর হয়নি। কিন্তু কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ও এক ইরানি কর্মকর্তার দাবি, ইরান অনেক আগেই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে রেখেছে।
যদিও ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, তবে প্রথমিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো সে দাবির যথার্থতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, ইরান হয়তো আগেই ইউরেনিয়ামের বড় অংশ সরিয়ে ফেলেছে, বা কিছু ঘাঁটি এতটাই গভীরে তৈরি করা হয়েছে যে তা ধ্বংসযোগ্য নয়। এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচির একটি বড় অংশ এখনও নিরাপদে রয়েছে। তথ্যসূত্র : সিএনএন