ঢাকা ১০:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৌদি-ইরান চুক্তি নিয়ে ইসরায়েলের মাথাব্যথা কেন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৮:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
  • ১৭ বার
হঠাৎ শুরু হওয়া ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য। কোথাকার আগুন কোথায় গিয়ে লাগে, ঠাহর করতে পারছে না কেউই। তবে চলমান এই সংঘাত অল্পেই থেমে যাবে না বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। যুদ্ধের এই ধারা যদি সহসা না থামে, তবে নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িয়ে যাবে অনেক দেশ। প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েলের এই যুদ্ধে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী মুসলিম দেশ সৌদি আরব থাকবে কোন পক্ষে?

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই যদিও সৌদি আরব নিন্দা জনিয়েছে এবং ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে, তারপরও সৌদি আরব কোন পক্ষে থাকবে তা বুঝতে হলে মিলাতে হবে বেশ কিছু জটিল হিসাব। যাতে রয়েছে ধর্মীয়, ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক ক্ষমতায়নের বিশাল খেলা।

ধর্মীয় শাখাগত বিষয় শিয়া-সুন্নির বিরোধ ও আঞ্চলিক আধিপত্যের বিতর্কে বহু আগ থেকেই সৌদি ও ইরানের সম্পর্ক ছিল ভঙ্গুর ও অসহযোগিতামূলক। তবে ২০২৩ এ চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশের সম্পর্কে উন্নতি ঘটেছে বেশ। চুক্তির পরপরই রিয়াদে তেহরানের দূতাবাস স্থাপন করা হয়। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হলেও আস্থার সংকট রয়েই গেছে।

অপরদিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের প্রতি পরোক্ষ সহযোগিতা রয়েছে সৌদি আরবের। একদম সহজ করে বললে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চায় সৌদি সরকার। এর আওতায় আমেরিকা থেকে অবাধে অস্ত্র আমদানির সুযোগ পাবে তারা। পাশাপাশি বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার করতেও মার্কিন প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা চায় দেশটি। তাছাড়া ইরানবিরোধী যে কোনো সামরিক বা কৌশলগত উদ্যোগে আমেরিকা সৌদি আরবের সমর্থন প্রত্যাশা করে আসছে বারবার।

উত্তপ্ত এই প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের অবস্থান একধরনের কৌশলগত ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করছে। সৌদি আরব একদিকে মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ হিসেবে পরিচিত, অন্যদিকে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের ঘনিষ্ঠ মিত্র, যা তাদেরকে ইসরায়েলের বিরোধিতায় সরাসরি অংশগ্রহণ থেকে নিরুৎসাহিত করে। আবার নিকট অতীতেই ইরানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব শেষে চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার হয়েছে । সব মিলিয়ে হিসাবটা মোটেও সহজ নয়

তবে সৌদি আরবের সাম্প্রতিক কর্মপদ্ধতি বলছে, তারা সম্ভবত প্রকাশ্যে নিরপেক্ষ থাকার ভান করবে এবং পর্দার আড়ালে ইরানবিরোধী শিবিরেই অবস্থান নেবে—বিশেষ করে গোয়েন্দা তথ্য, আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি এবং কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের মতো ক্ষেত্রগুলোতে এই উপায় অবলম্বন করবে দেশটি। কারণ, একদিকে তারা চায় না ইরান পারমাণবিক শক্তিধর হোক। অন্যদিকে প্রকাশ্যে ইসরায়েলপন্থি অবস্থান নিলে তারা মুসলিম বিশ্বে নৈতিক নেতৃত্ব হারাতে পারে। তাই ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের ভূমিকা হবে অত্যন্ত হিসাবি, দ্বিমুখী এবং কৌশলগত।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সৌদি-ইরান চুক্তি নিয়ে ইসরায়েলের মাথাব্যথা কেন

আপডেট টাইম : ১০:৩৮:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
হঠাৎ শুরু হওয়া ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য। কোথাকার আগুন কোথায় গিয়ে লাগে, ঠাহর করতে পারছে না কেউই। তবে চলমান এই সংঘাত অল্পেই থেমে যাবে না বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। যুদ্ধের এই ধারা যদি সহসা না থামে, তবে নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িয়ে যাবে অনেক দেশ। প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েলের এই যুদ্ধে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী মুসলিম দেশ সৌদি আরব থাকবে কোন পক্ষে?

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই যদিও সৌদি আরব নিন্দা জনিয়েছে এবং ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে, তারপরও সৌদি আরব কোন পক্ষে থাকবে তা বুঝতে হলে মিলাতে হবে বেশ কিছু জটিল হিসাব। যাতে রয়েছে ধর্মীয়, ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক ক্ষমতায়নের বিশাল খেলা।

ধর্মীয় শাখাগত বিষয় শিয়া-সুন্নির বিরোধ ও আঞ্চলিক আধিপত্যের বিতর্কে বহু আগ থেকেই সৌদি ও ইরানের সম্পর্ক ছিল ভঙ্গুর ও অসহযোগিতামূলক। তবে ২০২৩ এ চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশের সম্পর্কে উন্নতি ঘটেছে বেশ। চুক্তির পরপরই রিয়াদে তেহরানের দূতাবাস স্থাপন করা হয়। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হলেও আস্থার সংকট রয়েই গেছে।

অপরদিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের প্রতি পরোক্ষ সহযোগিতা রয়েছে সৌদি আরবের। একদম সহজ করে বললে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চায় সৌদি সরকার। এর আওতায় আমেরিকা থেকে অবাধে অস্ত্র আমদানির সুযোগ পাবে তারা। পাশাপাশি বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার করতেও মার্কিন প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা চায় দেশটি। তাছাড়া ইরানবিরোধী যে কোনো সামরিক বা কৌশলগত উদ্যোগে আমেরিকা সৌদি আরবের সমর্থন প্রত্যাশা করে আসছে বারবার।

উত্তপ্ত এই প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের অবস্থান একধরনের কৌশলগত ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করছে। সৌদি আরব একদিকে মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ হিসেবে পরিচিত, অন্যদিকে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের ঘনিষ্ঠ মিত্র, যা তাদেরকে ইসরায়েলের বিরোধিতায় সরাসরি অংশগ্রহণ থেকে নিরুৎসাহিত করে। আবার নিকট অতীতেই ইরানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব শেষে চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার হয়েছে । সব মিলিয়ে হিসাবটা মোটেও সহজ নয়

তবে সৌদি আরবের সাম্প্রতিক কর্মপদ্ধতি বলছে, তারা সম্ভবত প্রকাশ্যে নিরপেক্ষ থাকার ভান করবে এবং পর্দার আড়ালে ইরানবিরোধী শিবিরেই অবস্থান নেবে—বিশেষ করে গোয়েন্দা তথ্য, আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি এবং কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের মতো ক্ষেত্রগুলোতে এই উপায় অবলম্বন করবে দেশটি। কারণ, একদিকে তারা চায় না ইরান পারমাণবিক শক্তিধর হোক। অন্যদিকে প্রকাশ্যে ইসরায়েলপন্থি অবস্থান নিলে তারা মুসলিম বিশ্বে নৈতিক নেতৃত্ব হারাতে পারে। তাই ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের ভূমিকা হবে অত্যন্ত হিসাবি, দ্বিমুখী এবং কৌশলগত।