যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই যদিও সৌদি আরব নিন্দা জনিয়েছে এবং ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে, তারপরও সৌদি আরব কোন পক্ষে থাকবে তা বুঝতে হলে মিলাতে হবে বেশ কিছু জটিল হিসাব। যাতে রয়েছে ধর্মীয়, ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক ক্ষমতায়নের বিশাল খেলা।
ধর্মীয় শাখাগত বিষয় শিয়া-সুন্নির বিরোধ ও আঞ্চলিক আধিপত্যের বিতর্কে বহু আগ থেকেই সৌদি ও ইরানের সম্পর্ক ছিল ভঙ্গুর ও অসহযোগিতামূলক। তবে ২০২৩ এ চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশের সম্পর্কে উন্নতি ঘটেছে বেশ। চুক্তির পরপরই রিয়াদে তেহরানের দূতাবাস স্থাপন করা হয়। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হলেও আস্থার সংকট রয়েই গেছে।
অপরদিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের প্রতি পরোক্ষ সহযোগিতা রয়েছে সৌদি আরবের। একদম সহজ করে বললে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চায় সৌদি সরকার। এর আওতায় আমেরিকা থেকে অবাধে অস্ত্র আমদানির সুযোগ পাবে তারা। পাশাপাশি বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার করতেও মার্কিন প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা চায় দেশটি। তাছাড়া ইরানবিরোধী যে কোনো সামরিক বা কৌশলগত উদ্যোগে আমেরিকা সৌদি আরবের সমর্থন প্রত্যাশা করে আসছে বারবার।
তবে সৌদি আরবের সাম্প্রতিক কর্মপদ্ধতি বলছে, তারা সম্ভবত প্রকাশ্যে নিরপেক্ষ থাকার ভান করবে এবং পর্দার আড়ালে ইরানবিরোধী শিবিরেই অবস্থান নেবে—বিশেষ করে গোয়েন্দা তথ্য, আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি এবং কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের মতো ক্ষেত্রগুলোতে এই উপায় অবলম্বন করবে দেশটি। কারণ, একদিকে তারা চায় না ইরান পারমাণবিক শক্তিধর হোক। অন্যদিকে প্রকাশ্যে ইসরায়েলপন্থি অবস্থান নিলে তারা মুসলিম বিশ্বে নৈতিক নেতৃত্ব হারাতে পারে। তাই ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের ভূমিকা হবে অত্যন্ত হিসাবি, দ্বিমুখী এবং কৌশলগত।