ঢাকা ০৫:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মানবাধিকারকর্মীদের অভিযোগ ভারতে ‘বিদেশি’ নামে মুসলিমদের দেশ ছাড়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫২:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
  • ১০ বার

ভারতে ‘বিদেশি’ আখ্যা দিয়ে বাঙালি মুসলিমদের বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশটির মানবাধিকারকর্মীরা। তারা বলছেন, কর্তৃপক্ষ নির্বিচারে লোকজনকে দেশ থেকে বের করে দিচ্ছে। এই বহিষ্কার অভিযানে বহু নিরীহ মুসলিম নাগরিককে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে টার্গেট করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স ও টেলিগ্রাফের।

একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মে থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্য ৩০৩ জনকে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করেছে। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন ট্রাইব্যুনাল ‘বিদেশি’ ঘোষিত ৩০ হাজার মানুষের মধ্য থেকে এই ‘পুশব্যাক’ করা হয়। আসামে এ ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। তাদের পরিবার ও জমিজমা উভয়ই রাজ্যে রয়েছে। এই রাজ্যে লক্ষাধিক পরিবার রয়েছে, যাদের শিকড় বাংলাদেশে।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই এবং তাদের পরিবারকে প্রায়ই ভুলভাবে প্রধানত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে বিদেশি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তারা এতটা দরিদ্র যে, উচ্চ আদালতে ট্রাইব্যুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ করার মতো সামর্থ্যও রাখেন না। সরকারের রোষে পড়ার আশঙ্কায় মানবাধিকারকর্মীরা বলেছেন, এই বিতাড়ন অভিযানে শুধু মুসলিমদেরই লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে আসাম সরকারের একজন মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল টেলিগ্রাফ। তবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।

বাংলাদেশসংলগ্ন ২৬০ কিলোমিটার (১৬০ মাইল) সীমান্ত থাকা আসাম গত মাস থেকে রাতের অন্ধকারে ‘পুশইন’ শুরু করেছে। আসামে এ ধরনের পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয়। সম্ভাব্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বা বাঙালি ভাষাভাষীদের স্থানীয় অসমিয়া ভাষাভাষীরা বিশেষ করে চাকরির বাজারে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করে।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সোমবার রাজ্য বিধানসভায় বলেছেন, বিদেশি বিতাড়নের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের চাপ রয়েছে। আমরা ৩০৩ জনকে পুশব্যাক করেছি। এই পুশব্যাক আরও তীব্র করা হবে। রাজ্যকে বাঁচাতে আমাদের আরও সক্রিয় ও উদ্যোগী হতে হবে।

বিচারাধীন অবস্থায় বহিষ্কৃতদের মধ্যে কয়েকজনকে ফেরত আনতে বাধ্য হয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের একজন ৫১ বছর বয়সি প্রাক্তন স্কুলশিক্ষক খাইরুল ইসলাম। তাকে ২০১৬ সালে একটি ট্রাইব্যুনাল ‘বিদেশি’ ঘোষণা করেছিল। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

খাইরুল বলেন, ২৩ মে পুলিশ আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ডিটেনশন সেন্টার হয়ে সীমান্তে পৌঁছায়। আমাদের চোখ বেঁধে ও হাত বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতের আঁধারে ১৪ জনকে সীমান্ত পার করিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়। বাংলাদেশি গ্রামবাসীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ওই ১৪ জনকে ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ রেখে দেয়। খাইরুল জানান, তার স্ত্রী আসাম পুলিশকে জানালে তাকে ফেরত নেওয়া হয়, কিন্তু অন্যদের কোনো খবর তার জানা নেই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত থেকে কিছু মানুষকে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে এবং এই বিষয়ে দিল্লি­র সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের পুশব্যাক কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থি। তাদের আশঙ্কা, বিচারাধীন এবং প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদেরও ভুয়া নথির ভিত্তিতে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

মানবাধিকারকর্মীদের অভিযোগ ভারতে ‘বিদেশি’ নামে মুসলিমদের দেশ ছাড়া

আপডেট টাইম : ১১:৫২:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫

ভারতে ‘বিদেশি’ আখ্যা দিয়ে বাঙালি মুসলিমদের বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশটির মানবাধিকারকর্মীরা। তারা বলছেন, কর্তৃপক্ষ নির্বিচারে লোকজনকে দেশ থেকে বের করে দিচ্ছে। এই বহিষ্কার অভিযানে বহু নিরীহ মুসলিম নাগরিককে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে টার্গেট করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স ও টেলিগ্রাফের।

একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মে থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্য ৩০৩ জনকে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করেছে। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন ট্রাইব্যুনাল ‘বিদেশি’ ঘোষিত ৩০ হাজার মানুষের মধ্য থেকে এই ‘পুশব্যাক’ করা হয়। আসামে এ ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। তাদের পরিবার ও জমিজমা উভয়ই রাজ্যে রয়েছে। এই রাজ্যে লক্ষাধিক পরিবার রয়েছে, যাদের শিকড় বাংলাদেশে।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই এবং তাদের পরিবারকে প্রায়ই ভুলভাবে প্রধানত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে বিদেশি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তারা এতটা দরিদ্র যে, উচ্চ আদালতে ট্রাইব্যুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ করার মতো সামর্থ্যও রাখেন না। সরকারের রোষে পড়ার আশঙ্কায় মানবাধিকারকর্মীরা বলেছেন, এই বিতাড়ন অভিযানে শুধু মুসলিমদেরই লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে আসাম সরকারের একজন মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল টেলিগ্রাফ। তবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।

বাংলাদেশসংলগ্ন ২৬০ কিলোমিটার (১৬০ মাইল) সীমান্ত থাকা আসাম গত মাস থেকে রাতের অন্ধকারে ‘পুশইন’ শুরু করেছে। আসামে এ ধরনের পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয়। সম্ভাব্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বা বাঙালি ভাষাভাষীদের স্থানীয় অসমিয়া ভাষাভাষীরা বিশেষ করে চাকরির বাজারে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করে।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সোমবার রাজ্য বিধানসভায় বলেছেন, বিদেশি বিতাড়নের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের চাপ রয়েছে। আমরা ৩০৩ জনকে পুশব্যাক করেছি। এই পুশব্যাক আরও তীব্র করা হবে। রাজ্যকে বাঁচাতে আমাদের আরও সক্রিয় ও উদ্যোগী হতে হবে।

বিচারাধীন অবস্থায় বহিষ্কৃতদের মধ্যে কয়েকজনকে ফেরত আনতে বাধ্য হয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের একজন ৫১ বছর বয়সি প্রাক্তন স্কুলশিক্ষক খাইরুল ইসলাম। তাকে ২০১৬ সালে একটি ট্রাইব্যুনাল ‘বিদেশি’ ঘোষণা করেছিল। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

খাইরুল বলেন, ২৩ মে পুলিশ আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ডিটেনশন সেন্টার হয়ে সীমান্তে পৌঁছায়। আমাদের চোখ বেঁধে ও হাত বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতের আঁধারে ১৪ জনকে সীমান্ত পার করিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়। বাংলাদেশি গ্রামবাসীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ওই ১৪ জনকে ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ রেখে দেয়। খাইরুল জানান, তার স্ত্রী আসাম পুলিশকে জানালে তাকে ফেরত নেওয়া হয়, কিন্তু অন্যদের কোনো খবর তার জানা নেই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত থেকে কিছু মানুষকে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে এবং এই বিষয়ে দিল্লি­র সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের পুশব্যাক কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থি। তাদের আশঙ্কা, বিচারাধীন এবং প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদেরও ভুয়া নথির ভিত্তিতে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।