ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ইসরাইল কোনো ভাবেই জয়ী হতে পারবে না। বরং এতে এমন ভয়াবহ এক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে, সারা বিশ্বেই যার মারাত্মক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ সংঘাত এমনকি পরমাণু যুদ্ধ পর্যন্ত উস্কে দিতে পারে। এমনই সতর্কতা জানাচ্ছে জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সি-আইএইএ।
আইএইএ’র প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেছেন, ইরানের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, তা ব্যর্থ হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। একদিকে ইরান উদ্বেগজনক মাত্রায় ইউরেনিয়াম পরিশোধন করছে, যা দিয়ে অনায়াসেই পরমাণু বোমা বানানো যেতে পারে। অন্যদিকে ইরানের পরমাণু অস্ত্র বানানো ঠেকাতে ইসরাইল যে কোনো সময় হামলা চালাতে পারে দেশটির পরমাণু স্থাপনায়। সম্ভাব্য এ দুই পরিস্থিতিই বিশ্বের জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনবে বলে সতর্ক করেছেন গ্রসি।
ইসরাইল যেন ইরানে হামলার মতো ভুল সিদ্ধান্ত না নেয়, এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে গ্রসি বলেছেন, তাতে করে কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। একই সাথে ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু স্থাপনাগুলো এতোটাই সুরক্ষিত যে নিশানা করে হামলা চালালেও ইসরাইলের পক্ষে সেগুলো ধ্বংস করার সাধ্য নেই বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
কেন তা সম্ভব নয়, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইরানের অনেকগুলো পরমাণু স্থাপনাই গোপনীয়। গভীর পাতালে নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো। এতোটাই পাতালে যে, ইসরাইলের বোমা সেসব জায়গায় পৌঁছানোরই সক্ষমতা রাখে না।
প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে আইএইএ’র প্রধান বলেন, ইরানের পরমাণু তৎপরতা ও তা নিয়ে চলমান উত্তেজনা বিপর্যয়কর পরিণতি বয়ে আনতে পারে। সমঝোতা আলোচনা ব্যর্থ হলে সামরিক সংঘাত দেখা যেতে পারে। কিন্তু নিশানা করে হামলা চালিয়ে ইরানের ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ধ্বংস করা সম্ভব নয়। সেগুলো অনেক সুরক্ষিত। স্পর্শকাতর অনেক পরমাণু স্থাপনাই আধা মাইল মাটির গভীরে বলে জানান গ্রসি।
বহুবার ইরানের এ ধরনের পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে গ্রসি বলেন, অনেক গভীরে ঘোরানো সুড়ঙ্গ বেয়ে নামতে হয় সেসব জায়গায়।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে বলেছেন, তিনি যেন হামলা চালানোর মতো এমন কোনো পদক্ষেপ না নেন, যাতে পরমাণু ইস্যুতে ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান সমঝোতা আলোচনা ভেস্তে যায়। ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করার লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন ট্রাম্প। তবে ইরানের দাবি তাদের পরমাণু কার্যক্রম শান্তিপূর্ণ। পরমাণু অস্ত্র বানানোর পরিকল্পনা তাদের নেই।