পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার চা-চাষিরা স্বল্পকালীন আবাদ হিসেবে চায়ের সঙ্গে সাথি ফসল উন্নত জাতের আম এবং মাল্টা বাগান গড়ে তুলছেন। একই জমিতে চায়ের সঙ্গে মালটার পর এবার আম চাষে ঝুঁকেছেন তেঁতুলিয়ার সমতলের চা-চাষিরা।
চা চাষে লোকসানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চায়ের জমিতে আম উৎপাদন করে লাভবান কৃষকরা। চায়ের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে চা-বাগানে আম চাষ করছেন তারা। এই সমতল ভূমির চা বাগানে চাষ হচ্ছে হাড়িভাঙ্গা, আম্রপালি, বারী-৪ , মল্লিকা, কিউযাই, ব্যানানা ম্যাংগো, সূর্যডিম, ব্রুনাইকিংসহ নানা জাতের আাম। আম চাষ করে দ্বিগুণ লাভের মুখ দেখছেন চাষীরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব আম যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
কৃষি বিভাগ বলছে, প্রকল্পের আওতায় এনে কৃষকদের অর্গানিক আম উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই জেলা সমতলের চায়ের রাজ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে অনেক আগেই। সমতলের মাটি চায়ের পাশাপাশি আম চাষে উপযোগী হওয়ায় দ্রুত বাড়ছে আম বাগানের সংখ্যা। চাষিরা এবার সমতলের চা বাগানে মিশ্র ফল হিসেবে হাড়িভাঙ্গা, আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাংগোসহ নানা জাতের আমের বাগান গড়ে তুলেছেন। সফল চাষীদের দেখে অনেক কৃষকই এখন আম বাগান করার জন্য ঝুঁকছেন। আর এসব আম উৎপাদিত হচ্ছে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে অর্গানিক উপায়ে।
জেলায় আম বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে উদ্যোক্তা। নানা উপায়ে ভোক্তা পর্যায়ে আম সরবরাহ করছে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। এসব আম বাগানে কাজ করে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে অনেকের। সমতলের চা বাগানে মিশ্র ফলের বাগান হিসেবে আমের চাষ আরও বাড়ানো গেলে চাষীরা আর্থিকভাবে দ্বিগুণ লাভবান হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তেঁতুলিয়া উপজেলার সফল চা- ও আম চাষি কাজী আনিসুর রহমান জানান, গত বছর ৭০ বিঘা জমিতে ২৩ লক্ষ টাকার আম বিক্রি করেছেন। এ বছর আমের ফলন দ্বিগুণ হওয়ায় ২৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি হবে তিনি জানান। সীমান্তঘেঁষা বিল্লা ভিটায় তার এই চা বাগানে ২ বছর আগে তিনি ৩ হাজার দেশি-বিদেশি জাতের আমের চারা লাগিয়েছেন। প্রথম বছরেই সেই আমগাছে মুকুল আসে। ফলন ভালো হওয়ার শর্তে প্রথম বছরের মুকুল ছিঁড়ে ফেলেন তিনি। চায়ের খাবার যেন আমগাছ খেতে না পারে তাই পৃথক খাবার হিসেবে ইউরিয়া, পটাশ ও টিএসপি সার দিচ্ছেন তিনি আমগাছে। অল্প সময়ের মধ্যে আমগাছ হয়ে উঠেছে পরিপুষ্ট। তার আশা, চায়ের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে দেশে উদ্ভাবিত বারী-৪ জাতের আমসহ বিদেশি জাত কিউ যাই ও ব্যানানা ম্যাংগো আমের আশাতীত ফলন হয়েছে।
উপজেলার আম চাষি কাজী মকছেদ জানান, গত বছর প্রায় ২০ বিঘার উপর আম চাষ করেছি, এক বছরের মাথায় অধিক ফলন এসেছে। দ্বিগুণ লাভের আশাও তিনি করেন।
তেঁতুলিয়ার এই সমতলের চা অঞ্চলে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি মিলে ৩ শতাধিক চা-চাষি রয়েছেন, যারা চায়ের আবাদ করে ক্রমশই স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। অনেক চাষি ইতোমধ্যে চায়ের বাগানে মালটার আবাদও করছেন। এর মধ্যে চা-বাগানের মধ্যে আম চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।
তেঁতুলিয়া উপজেলার কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌস জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরেও ব্যাপক আমের ফলন আশা করছি। এই সমতল ভূমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ হয়। চায়ের জমিতেও সাথি ফসল হিসেবে আম চাষ হচ্ছে। স্থানীয় জাত বাদেও কৃষকরা বিদেশি জাতের আম চাষ করছেন। আমরা নিয়মিত তদারকি ও কৃষকদের সার্বক্ষণিক পড়ামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।