ঢাকা ০৬:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় ঈদের পরের দিন ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭৫

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২০:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫
  • ৮ বার

পবিত্র ঈদুল আজহার পরের দিনেও দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অন্তত ৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১০০ জনেরও বেশি বেসামরিক মানুষ।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার সিভিল ডিফেন্সের দেওয়া এক বিবৃতির বরাতে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা রোববার (৮ জুন) সকালে এ তথ্য জানিয়েছে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, পবিত্র ঈদুল আজহার পরের দিন স্থানীয় সময় শনিবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজার পৃথক স্থানে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৭৫ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৬ জন একই পরিবারের সদস্য এবং এই ১৬ জনের মধ্যে ৬ জন শিশুও রয়েছে। এই পরিবারটি বসবাস করত গাজার প্রধান ও মধ্যাঞ্চলীয় শহর গাজা সিটির সাবরা এলাকায়।

ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্স বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসেল আল জাজিরাকে বলেন, বিমান অভিযানের আগে কোনো সতর্ক সংকেত বা সাইরেন দেয়নি ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। তিনি আরও জানান, শনিবারের হামলায় অন্তত ৮৫ জন ধ্বংস্তূপের তলায় আটকা পড়েছেন। তাদের উদ্ধার করা এখনও সম্ভব হয়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টার হতাহতসহ ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৭৫০ জনে এবং এ সময় এক লাখ ২৫ হাজার ৬৩০ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। যদিও বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকে আছেন। উদ্ধারকর্মীরা সেখানে পৌঁছাতে পারছেন না। হতাহতদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।

এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) জানিয়েছে, নিরাপত্তার কারণে তাদের সব খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

ফাউন্ডেশনটির এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিতরণকেন্দ্রগুলোতে যাওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে অনেক ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পরেই এসব কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়।

গত ১৮ মার্চ মাসে ইসরায়েল গাজায় কঠোর অবরোধ আরোপ করার পর থেকে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি প্রবেশ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত মাসে কিছু ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছে বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা।

অন্যদিকে, গাজার মিডিয়া অফিস আগেই জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা উত্তর গাজা অঞ্চলের এক হাজারেরও বেশি বাড়িঘর পুরোপুরি বা আংশিক ধ্বংস করেছে। পাশাপাশি, ওই এলাকার ৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে গাজা সিটির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যেখানে তাদের আশ্রয় দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামোই নেই।

এদিকে দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দুই মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

জাতিসংঘের মতে, দখলদার ইসরায়েলের নির্বিচার আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে অধিকাংশ অবকাঠামো।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

গাজায় ঈদের পরের দিন ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭৫

আপডেট টাইম : ১১:২০:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫

পবিত্র ঈদুল আজহার পরের দিনেও দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অন্তত ৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১০০ জনেরও বেশি বেসামরিক মানুষ।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার সিভিল ডিফেন্সের দেওয়া এক বিবৃতির বরাতে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা রোববার (৮ জুন) সকালে এ তথ্য জানিয়েছে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, পবিত্র ঈদুল আজহার পরের দিন স্থানীয় সময় শনিবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজার পৃথক স্থানে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৭৫ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৬ জন একই পরিবারের সদস্য এবং এই ১৬ জনের মধ্যে ৬ জন শিশুও রয়েছে। এই পরিবারটি বসবাস করত গাজার প্রধান ও মধ্যাঞ্চলীয় শহর গাজা সিটির সাবরা এলাকায়।

ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্স বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসেল আল জাজিরাকে বলেন, বিমান অভিযানের আগে কোনো সতর্ক সংকেত বা সাইরেন দেয়নি ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। তিনি আরও জানান, শনিবারের হামলায় অন্তত ৮৫ জন ধ্বংস্তূপের তলায় আটকা পড়েছেন। তাদের উদ্ধার করা এখনও সম্ভব হয়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টার হতাহতসহ ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৭৫০ জনে এবং এ সময় এক লাখ ২৫ হাজার ৬৩০ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। যদিও বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকে আছেন। উদ্ধারকর্মীরা সেখানে পৌঁছাতে পারছেন না। হতাহতদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।

এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) জানিয়েছে, নিরাপত্তার কারণে তাদের সব খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

ফাউন্ডেশনটির এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিতরণকেন্দ্রগুলোতে যাওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে অনেক ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পরেই এসব কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়।

গত ১৮ মার্চ মাসে ইসরায়েল গাজায় কঠোর অবরোধ আরোপ করার পর থেকে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি প্রবেশ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত মাসে কিছু ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছে বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা।

অন্যদিকে, গাজার মিডিয়া অফিস আগেই জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা উত্তর গাজা অঞ্চলের এক হাজারেরও বেশি বাড়িঘর পুরোপুরি বা আংশিক ধ্বংস করেছে। পাশাপাশি, ওই এলাকার ৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে গাজা সিটির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যেখানে তাদের আশ্রয় দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামোই নেই।

এদিকে দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দুই মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

জাতিসংঘের মতে, দখলদার ইসরায়েলের নির্বিচার আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে অধিকাংশ অবকাঠামো।