ঢাকা ০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জনপ্রতিনিধিদের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করতে হবে: রুমিন ফারহানা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
  • ৩৯ বার

দেশে স্বাস্থ্য খাতের শোচনীয় অবস্থার জন্য গলদ রাজনীতিকেই দায়ী করেছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।

তিনি মনে করেন, এ অবস্থার উন্নতির জন্য জনপ্রতিনিধিদের বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হবে।

বুধবার (২১ মে) বিকেলে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘যুবদের সংস্কার ভাবনা: কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি’ শীর্ষক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

নিজ জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, আমি আমার নির্বাচনী এলাকার জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। অবস্থা সত্যিই শোচনীয়। ডাক্তার নেই, সেবা দেওয়ার নার্স নেই, সরঞ্জাম নেই, ওষুধ নেই। এর কারণ হলো গলদ রাজনীতি। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা মনে করেন, এই দেশে আমাদের চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। কোনো রকম নির্বাচিত হলেই দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যান।

তিনি বলেন, আমি শক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে। যেভাবে দ্বৈত নাগরিক হলে সংসদ সদস্য হওয়া যায় না, ঠিক তেমনই আইন করে সংসদ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত যে কয়জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন, তাদের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। এটা আইন করে বাধ্য করতে হবে। বাঁচলে বাঁচবে, না বাঁচলে ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে। এই চোর, লুটেরা এবং বিবেকহীনদের দেশে তো আর কোনো উপায় নেই। আইন করেই করতে হবে।

পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের নিজের সন্তানকেও দেশে পড়াতে বাধ্য করতে হবে বলেও মত দেন বিএনপির এ নেতা।

রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমি কখনো নিজের চিকিৎসা এবং মা-বাবার চিকিৎসা দেশের বাইরে করাইনি। ব্যক্তি হিসেবে এবং একজন রোগীর কেয়ারগিভার হিসেবে গত ২৫ বছর এ সেক্টরের সঙ্গে আমি জড়িত। সেবা নিয়েছি। তাদের প্রত্যেকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কেউ যদি বলে দেশে ভালো চিকিৎসা হয় না, এটা অত্যন্ত অন্যায় কথা। তারা বাংলাদেশে চিকিৎসা নেন না, নিতে চান না। সে কারণে বাংলাদেশের চিকিৎসা সম্পর্কে ভালো জানেন না। হ্যাঁ, আমাদের কিছু জায়গায় কিছুটা বিচ্যুতি আছে। এখানেও আলোচনায় এসেছে। বেতন কম, সুবিধা নেই। একজন ডাক্তারকে ২০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে ২৪ ঘণ্টা খাটাবেন, এটা বেস্ট সেবা হবে না। চিকিৎসা টিম ওয়ার্ক। এর সঙ্গে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান ও সরঞ্জাম জড়িত। সব জিনিসের মান ভালো না হলে চিকিৎসাও ভালো হবে না।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বাজেট কমানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ২০২৫ সালের বাজেটে শিক্ষাখাতে তিন হাজার কোটি এবং স্বাস্থ্য ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। এরমধ্যে শিক্ষায় ৯১টি প্রকল্প এবং চিকিৎসায় ৩৫টি প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে। ওইসব প্রকল্পে কেনাকাটা, দুর্নীতি হয়। আপনি এই টাকা ডাক্তারদের বেতন, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষিত করার পেছনে ব্যয় করতে পারতেন না? আপনাকে বাজেট কমাতেই হলো?

বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, জিডিপির এক শতাংশও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করি না। আমাদের ডাক্তার অপ্রতুল। নার্সের সংখ্যাও কম। যন্ত্রপাতি বা উপকরণ কম। সেখানে বিশ্বমানের সেবা চান কীভাবে?

এ সময় চিকিৎসকদের ওপর হামলার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, হাসপাতালে কেউ মারা গেলে অনেক সময় ডাক্তারকে আক্রমণ করতে যাই। অন্যসব ক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর নির্ভর করি, এখানে ভাঙচুর করি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন- জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও অধ্যাপক লিয়াকত আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী প্রমুখ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

জনপ্রতিনিধিদের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করতে হবে: রুমিন ফারহানা

আপডেট টাইম : ১১:০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

দেশে স্বাস্থ্য খাতের শোচনীয় অবস্থার জন্য গলদ রাজনীতিকেই দায়ী করেছেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।

তিনি মনে করেন, এ অবস্থার উন্নতির জন্য জনপ্রতিনিধিদের বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হবে।

বুধবার (২১ মে) বিকেলে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘যুবদের সংস্কার ভাবনা: কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি’ শীর্ষক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

নিজ জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, আমি আমার নির্বাচনী এলাকার জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। অবস্থা সত্যিই শোচনীয়। ডাক্তার নেই, সেবা দেওয়ার নার্স নেই, সরঞ্জাম নেই, ওষুধ নেই। এর কারণ হলো গলদ রাজনীতি। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা মনে করেন, এই দেশে আমাদের চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। কোনো রকম নির্বাচিত হলেই দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যান।

তিনি বলেন, আমি শক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে। যেভাবে দ্বৈত নাগরিক হলে সংসদ সদস্য হওয়া যায় না, ঠিক তেমনই আইন করে সংসদ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত যে কয়জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন, তাদের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। এটা আইন করে বাধ্য করতে হবে। বাঁচলে বাঁচবে, না বাঁচলে ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে। এই চোর, লুটেরা এবং বিবেকহীনদের দেশে তো আর কোনো উপায় নেই। আইন করেই করতে হবে।

পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের নিজের সন্তানকেও দেশে পড়াতে বাধ্য করতে হবে বলেও মত দেন বিএনপির এ নেতা।

রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমি কখনো নিজের চিকিৎসা এবং মা-বাবার চিকিৎসা দেশের বাইরে করাইনি। ব্যক্তি হিসেবে এবং একজন রোগীর কেয়ারগিভার হিসেবে গত ২৫ বছর এ সেক্টরের সঙ্গে আমি জড়িত। সেবা নিয়েছি। তাদের প্রত্যেকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কেউ যদি বলে দেশে ভালো চিকিৎসা হয় না, এটা অত্যন্ত অন্যায় কথা। তারা বাংলাদেশে চিকিৎসা নেন না, নিতে চান না। সে কারণে বাংলাদেশের চিকিৎসা সম্পর্কে ভালো জানেন না। হ্যাঁ, আমাদের কিছু জায়গায় কিছুটা বিচ্যুতি আছে। এখানেও আলোচনায় এসেছে। বেতন কম, সুবিধা নেই। একজন ডাক্তারকে ২০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে ২৪ ঘণ্টা খাটাবেন, এটা বেস্ট সেবা হবে না। চিকিৎসা টিম ওয়ার্ক। এর সঙ্গে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান ও সরঞ্জাম জড়িত। সব জিনিসের মান ভালো না হলে চিকিৎসাও ভালো হবে না।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বাজেট কমানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ২০২৫ সালের বাজেটে শিক্ষাখাতে তিন হাজার কোটি এবং স্বাস্থ্য ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। এরমধ্যে শিক্ষায় ৯১টি প্রকল্প এবং চিকিৎসায় ৩৫টি প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে। ওইসব প্রকল্পে কেনাকাটা, দুর্নীতি হয়। আপনি এই টাকা ডাক্তারদের বেতন, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষিত করার পেছনে ব্যয় করতে পারতেন না? আপনাকে বাজেট কমাতেই হলো?

বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, জিডিপির এক শতাংশও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করি না। আমাদের ডাক্তার অপ্রতুল। নার্সের সংখ্যাও কম। যন্ত্রপাতি বা উপকরণ কম। সেখানে বিশ্বমানের সেবা চান কীভাবে?

এ সময় চিকিৎসকদের ওপর হামলার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, হাসপাতালে কেউ মারা গেলে অনেক সময় ডাক্তারকে আক্রমণ করতে যাই। অন্যসব ক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর নির্ভর করি, এখানে ভাঙচুর করি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন- জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও অধ্যাপক লিয়াকত আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী প্রমুখ।