ঢাকা ০৪:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্বজুড়ে কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • ২১ বার

বিশ্বজুড়ে তীব্র গরমের কারণে কমে যাচ্ছে ফসলের উৎপাদন। নতুন এক গবেষণায় এমনটাই দাবি করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।তারা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও খরার কারণে ধীরে ধীরে বিশ্বে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র নতুন ওই গবেষণা বলছে, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শুকনা আবহাওয়া বৈশ্বিক ফসল উৎপাদনের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে গম, যব ও ভুট্টার মতো গুরুত্বপূর্ণ শস্যের বেলায়।

গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বড় কৃষি অঞ্চলে ৫০ বছর আগে যে তাপ ও শুষ্কতা ছিল, বর্তমানে এসব অঞ্চলে তাপ ও শুষ্কতা সে সময়ের চেয়ে বেশি। এসব পরিবর্তন নীরবে গোটা বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে, যার ফলে কমে যাচ্ছে উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ।

স্ট্যানফোর্ডের খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ বিষয়ক কেন্দ্রের পরিচালক ডেভিড লোবেলের নেতৃত্বে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন না ঘটলে বিশ্বজুড়ে এসব গুরুত্বপূর্ণ শস্যের উৎপাদন বর্তমানে যে পরিমাণ হচ্ছে, তার চেয়ে ৪ থেকে ১৩ শতাংশ বেশি হতো।

বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ এক প্রতিকবেদনে জানায়, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে কখনো কখনো গাছপালা দ্রুত বাড়লেও গরম ও শুষ্ক মৌসুমে ফসলের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য এই উপকার যথেষ্ট নয়।

ডেভিড লোবেলের বলেছেন, তাকে প্রায়ই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, ফসলের ক্ষতি কি ধারণার চেয়েও দ্রুত ঘটছে? এ কৌতূহল থেকেই বিশ্বজুড়ে মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি ও তার গবেষণা দল। তাদের গবেষণা বলছে, কিছু জলবায়ু মডেল বৈশ্বিক উষ্ণতার সামগ্রিক চিত্রের সঠিক পূর্বাভাস দিতে পারলেও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বাদ থেকে গেছে সেখানে। আর সেটি হচ্ছে শুষ্কতার মাত্রা, বিশেষ করে ইউরোপ ও চীনের মতো মৃদু অঞ্চলে।

বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে উঠেছে এসব অঞ্চল, যার ফলে ফসলের ওপর আরও বেশি চাপ পড়ছে। অন্যদিকে, পূর্বাভাস করা মডেলের চেয়ে কম তাপ ও শুষ্কতার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খামার, বিশেষ করে মধ্য পশ্চিম অঞ্চলের খামারগুলো। এ পার্থক্যটি গবেষকদের চমকে দিয়েছে এবং উন্মোচন করেছে জলবায়ু মডেলিংয়ের একটি বড় ত্রুটি।

গবেষণার তথ্য বিশ্লেষক ও এ গবেষণার সহলেখক স্টেফানিয়া ডি টমাসো বলেছেন, গবেষণার এসব অপ্রত্যাশিত ফল বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু মডেলগুলোর এসব ত্রুটি সংশোধন করা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেওয়া এবং আরও স্মার্ট কৃষি কৌশল পরিকল্পনা করার জন্য অনেক জরুরি।

লোবেল বলেছেন, প্রধান শস্যের ওপর জলবায়ুর প্রভাবের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ করেছে জলবায়ু বিজ্ঞান। তবে এখনও কিছু অঞ্চল রয়েছে, বিশেষ করে কফি, কোকো, কমলা এবং জলপাইয়ের মতো বিশেষ ফসলের ক্ষেত্রে। এসব শস্য খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও এগুলো ভোক্তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সরবরাহের চ্যালেঞ্জের কারণে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে।

গবেষকরা বলছেন, নীতিনির্ধারক ও কৃষকদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে এ গবেষণা, যা উষ্ণায়িত পৃথিবীতে বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ রক্ষায় উন্নত জলবায়ু মডেল ও লাগসই বিভিন্ন অভিযোজন কৌশলের জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্বজুড়ে কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন

আপডেট টাইম : ১১:০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

বিশ্বজুড়ে তীব্র গরমের কারণে কমে যাচ্ছে ফসলের উৎপাদন। নতুন এক গবেষণায় এমনটাই দাবি করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।তারা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও খরার কারণে ধীরে ধীরে বিশ্বে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র নতুন ওই গবেষণা বলছে, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শুকনা আবহাওয়া বৈশ্বিক ফসল উৎপাদনের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে গম, যব ও ভুট্টার মতো গুরুত্বপূর্ণ শস্যের বেলায়।

গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বড় কৃষি অঞ্চলে ৫০ বছর আগে যে তাপ ও শুষ্কতা ছিল, বর্তমানে এসব অঞ্চলে তাপ ও শুষ্কতা সে সময়ের চেয়ে বেশি। এসব পরিবর্তন নীরবে গোটা বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে, যার ফলে কমে যাচ্ছে উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ।

স্ট্যানফোর্ডের খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ বিষয়ক কেন্দ্রের পরিচালক ডেভিড লোবেলের নেতৃত্বে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন না ঘটলে বিশ্বজুড়ে এসব গুরুত্বপূর্ণ শস্যের উৎপাদন বর্তমানে যে পরিমাণ হচ্ছে, তার চেয়ে ৪ থেকে ১৩ শতাংশ বেশি হতো।

বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ এক প্রতিকবেদনে জানায়, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে কখনো কখনো গাছপালা দ্রুত বাড়লেও গরম ও শুষ্ক মৌসুমে ফসলের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য এই উপকার যথেষ্ট নয়।

ডেভিড লোবেলের বলেছেন, তাকে প্রায়ই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, ফসলের ক্ষতি কি ধারণার চেয়েও দ্রুত ঘটছে? এ কৌতূহল থেকেই বিশ্বজুড়ে মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি ও তার গবেষণা দল। তাদের গবেষণা বলছে, কিছু জলবায়ু মডেল বৈশ্বিক উষ্ণতার সামগ্রিক চিত্রের সঠিক পূর্বাভাস দিতে পারলেও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বাদ থেকে গেছে সেখানে। আর সেটি হচ্ছে শুষ্কতার মাত্রা, বিশেষ করে ইউরোপ ও চীনের মতো মৃদু অঞ্চলে।

বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে উঠেছে এসব অঞ্চল, যার ফলে ফসলের ওপর আরও বেশি চাপ পড়ছে। অন্যদিকে, পূর্বাভাস করা মডেলের চেয়ে কম তাপ ও শুষ্কতার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খামার, বিশেষ করে মধ্য পশ্চিম অঞ্চলের খামারগুলো। এ পার্থক্যটি গবেষকদের চমকে দিয়েছে এবং উন্মোচন করেছে জলবায়ু মডেলিংয়ের একটি বড় ত্রুটি।

গবেষণার তথ্য বিশ্লেষক ও এ গবেষণার সহলেখক স্টেফানিয়া ডি টমাসো বলেছেন, গবেষণার এসব অপ্রত্যাশিত ফল বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু মডেলগুলোর এসব ত্রুটি সংশোধন করা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেওয়া এবং আরও স্মার্ট কৃষি কৌশল পরিকল্পনা করার জন্য অনেক জরুরি।

লোবেল বলেছেন, প্রধান শস্যের ওপর জলবায়ুর প্রভাবের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ করেছে জলবায়ু বিজ্ঞান। তবে এখনও কিছু অঞ্চল রয়েছে, বিশেষ করে কফি, কোকো, কমলা এবং জলপাইয়ের মতো বিশেষ ফসলের ক্ষেত্রে। এসব শস্য খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও এগুলো ভোক্তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সরবরাহের চ্যালেঞ্জের কারণে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে।

গবেষকরা বলছেন, নীতিনির্ধারক ও কৃষকদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে এ গবেষণা, যা উষ্ণায়িত পৃথিবীতে বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ রক্ষায় উন্নত জলবায়ু মডেল ও লাগসই বিভিন্ন অভিযোজন কৌশলের জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছে।