ঢাকা ০৭:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেভাবে ধরা পড়েন ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫
  • ৭ বার

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) একটি বিশেষ টিম।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ঢাকায় কোনো মামলা নেই। চট্টগ্রামে একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে চট্টগ্রাম পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিএমপি পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) আমিরুল ইসলাম জানান, ছোট সাজ্জাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করা হবে। তাকে চট্টগ্রামে নেওয়া হচ্ছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

পুলিশ জানায়, ৪-৫ মাস ধরে প্রযুক্তিগত নজরদারির মাধ্যমে সাজ্জাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিল নগর পুলিশ। তাকে ধরার জন্য সিএমপি উত্তর জোনের ডিসি আমিরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একটি টিম ঢাকায় গোপন অভিযান চালান।

জানা গেছে, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ইন্টেলিজেন্স টিম সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান শনাক্ত করে, যা ছিল ঢাকার পান্থপথে অবস্থিত আধুনিক শপিং মল বসুন্ধরা সিটি। সিএমপি পুলিশের সাদা পোশাকের একটি দল আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নেয়। সাজ্জাদ যখন ঈদের শপিং করতে শপিংমলের একটি দোকানে প্রবেশ করে, তখনই তাকে গ্রেপ্তার করেন ডিসি আমিরুল ইসলাম।তাকে গ্রেপ্তারের ৩০ মিনিট পর তেজগাঁও থানার পুলিশের একটি টিম এসে সাজ্জাদকে থানায় নিয়ে যায়।

কে এই ছোট সাজ্জাদ?

চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ। হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ ১০টিরও বেশি মামলার আসামি তিনি।

ছোট সাজ্জাদ চট্টগ্রামের আলোচিত ‘এইট মার্ডার মামলার’ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বিদেশে বসে থাকা সাজ্জাদ আলী খান চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ডের জন্য ছোট সাজ্জাদকে ব্যবহার করতেন।ছোট সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে।

অপরাধের তালিকা

২০২৩ সালের ২৮ জানুয়ারি বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার ও মোহাম্মদ আনিসকে হত্যা, ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া এলাকায় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে গুলি করে হত্যা, ২০২৩ সালের ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় বাসায় ঢুকে গুলি চালানো, ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকায় ঠিকাদার মো. হাসানের বাসায় গুলি, ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর অক্সিজেন মোড়ে পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়া।

পুলিশের ওপর হুমকি ও লাইভে আসা

জানা যায়, গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসের শুরুতে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। পরে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন এলাকায় পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান তিনি। এতে পুলিশসহ পাঁচজন আহত হন।

পরে গত ২৮ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমানকে পেটানোর হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসেন ছোট সাজ্জাদ। এরপরই তার বিরুদ্ধে সিএমপি পুলিশ কমিশনার পুরস্কার ঘোষণা করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যেভাবে ধরা পড়েন ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদ

আপডেট টাইম : ১০:১৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) একটি বিশেষ টিম।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ঢাকায় কোনো মামলা নেই। চট্টগ্রামে একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে চট্টগ্রাম পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিএমপি পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) আমিরুল ইসলাম জানান, ছোট সাজ্জাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করা হবে। তাকে চট্টগ্রামে নেওয়া হচ্ছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

পুলিশ জানায়, ৪-৫ মাস ধরে প্রযুক্তিগত নজরদারির মাধ্যমে সাজ্জাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিল নগর পুলিশ। তাকে ধরার জন্য সিএমপি উত্তর জোনের ডিসি আমিরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একটি টিম ঢাকায় গোপন অভিযান চালান।

জানা গেছে, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ইন্টেলিজেন্স টিম সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান শনাক্ত করে, যা ছিল ঢাকার পান্থপথে অবস্থিত আধুনিক শপিং মল বসুন্ধরা সিটি। সিএমপি পুলিশের সাদা পোশাকের একটি দল আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নেয়। সাজ্জাদ যখন ঈদের শপিং করতে শপিংমলের একটি দোকানে প্রবেশ করে, তখনই তাকে গ্রেপ্তার করেন ডিসি আমিরুল ইসলাম।তাকে গ্রেপ্তারের ৩০ মিনিট পর তেজগাঁও থানার পুলিশের একটি টিম এসে সাজ্জাদকে থানায় নিয়ে যায়।

কে এই ছোট সাজ্জাদ?

চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ। হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ ১০টিরও বেশি মামলার আসামি তিনি।

ছোট সাজ্জাদ চট্টগ্রামের আলোচিত ‘এইট মার্ডার মামলার’ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বিদেশে বসে থাকা সাজ্জাদ আলী খান চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ডের জন্য ছোট সাজ্জাদকে ব্যবহার করতেন।ছোট সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে।

অপরাধের তালিকা

২০২৩ সালের ২৮ জানুয়ারি বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার ও মোহাম্মদ আনিসকে হত্যা, ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া এলাকায় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে গুলি করে হত্যা, ২০২৩ সালের ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় বাসায় ঢুকে গুলি চালানো, ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকায় ঠিকাদার মো. হাসানের বাসায় গুলি, ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর অক্সিজেন মোড়ে পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়া।

পুলিশের ওপর হুমকি ও লাইভে আসা

জানা যায়, গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসের শুরুতে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। পরে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন এলাকায় পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান তিনি। এতে পুলিশসহ পাঁচজন আহত হন।

পরে গত ২৮ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমানকে পেটানোর হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসেন ছোট সাজ্জাদ। এরপরই তার বিরুদ্ধে সিএমপি পুলিশ কমিশনার পুরস্কার ঘোষণা করেন।