আওয়ামী লীগে সবাই নেতা হতে চায়

পীর হাবিবুর রহমান

সবাই নেতা হতে চায়। আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল দরজায় কড়া নাড়ছে। উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলে একসময় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হওয়া ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। এখনো বিএনপি-জাতীয় পার্টির যেখানে নির্বাহী কমিটির কলেবর বিশাল, গুরুত্বহীন, সেখানে আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য সংখ্যা প্রেসিডিয়ামসহ ৭৩ জন। এবার কাউন্সিলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৮৩ জনে। এই ওয়ার্কিং কমিটির গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু একসময় দলের প্রেসিডিয়ামে ঠাঁই পেতেন জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব-পরিচিতি থাকা নেতারা। ওয়ান ইলেভেনের পর সেটিও হোঁচট খেয়েছে। বর্তমানে প্রেসিডিয়ামে যারা আছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন আছেন জাতীয় রাজনীতিতে নাম-যশ প্রভাব নিয়ে চলা। বাকিরা নিষ্প্রভ। ওয়ার্কিং কমিটিতে একসময় সদস্য হতেন সারাদেশ যাদের চিনতো। তৃণমূল বা কেন্দ্রের ছাত্র-যুবলীগের রাজনীতিতে নিজেদের ইমেজ তৈরি করে আসা প্রজ্ঞাবান নেতারা। সেটিও ব্যত্যয় ঘটেছে। দীর্ঘ ২৬ বছর ছাত্রসংসদ নির্বাচন না থাকায় ছাত্র রাজনীতি অর্থাৎ ছাত্রলীগ থেকে প্রডাকশন নেই। তবু নবীণ-প্রবীণদের সমন্বয়ে এবার ওয়ার্কিং কমিটিতে তারুণ্যের অভিষেক ঘটবে এমন খবরে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। নির্বাচনে যেমন সবাই দলের এমপি হতে মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছিল তেমনি এবার কাউন্সিলের বাতাস বইতে না বইতেই সবাই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হতে ছুটছেন। গণভবন, দলের কার্যালয়, নেতাদের বাড়ি- সর্বত্র ভিড়। সর্বত্র তদবির। হায় হায় শুরু হয়েছে। ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য পেতে নাটকও কম হচ্ছে না সহানুভূতি কমানোর।

নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী থাকতে হবে। বর্তমানে সৈয়দা জোহরা তাজ উদ্দিনের মৃত্যুতে ১১ জন আছেন শেখ হাসিনাসহ। এবার ৮১ জন হলে নারী থাকবেন ১৮ জন। দু-একজন বাদ থাকলে কয়েক জনের কপাল খুলবে। তাই বসে নেই দলের নারী কর্মীরাও। যারা এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন তারা তো আছেনই, যারা হননি তারাও ছুটছেন। দৌড় শুরু হয়েছে রীতিমতো সাবেক ছাত্রলীগের অনেকে কমিটিতেও নেই। সংসদেও নেই। আবার অনেকে মন্ত্রিসভা-সংসদে থাকলেও কমিটিতে নেই। নারী-পুরুষ সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ওয়ার্কিং কমিটিতে ঠাঁই নিতে। ওয়ান ইলেভেনের পর কাউন্সিলে হেভিওয়েট নেতারা বাদ পড়লে যারা কোনোদিন আশা করেননি, তারাও ঠাঁই চান ওয়ার্কিং কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে। তাই আশা দিন দিন বাড়ছেই কর্মীদের মাঝে। এখন কর্মীদের সান্ত্বনা দিতে কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক করা হয়েছিল কয়েক শ। যেখানে সেখানে ধাক্কা লাগলেই বলেন, কেন্দ্রীয় নেতা। এতে দলের নেতৃত্বও বিব্রত। তাই এখানে লাগাম টানা হবে এবার। সবাই জানেন ওয়ার্কিং কমিটিতে তা জানেন শুধু দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তবুও সবাই ছুটছেন। নেত্রী থেকে নেতারা পাবেন গণসালাম।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর