ঢাকা ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত ভুল অস্ত্রোপচার, যা ঘটেছিল প্রিয়াঙ্কা সঙ্গে সচিবালয়ে উপদেষ্টা হাসান আরিফের তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন সাবেক সচিব ইসমাইল রিমান্ডে অবশেষে বিল পাস করে ‘শাটডাউন’ এড়াল যুক্তরাষ্ট্র চাঁদাবাজদের ধরতে অভিযান শুরু হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার নির্বাচনের পর নিজের নিয়মিত কাজে ফিরে যাবেন ড. ইউনূস ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আহত ১৬ জুলাই আন্দোলন বিগত বছরগুলোর অনিয়মের সমষ্টি: ফারুকী তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ‘সড়কে নৈরাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব জড়িত

বাশার আল-আসাদ ও তার পরিবারের কী হবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:০১:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ১০ বার

সশস্ত্র বিদ্রোহীদের তোপের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। বর্তমানে তিনি রাশিয়ায় অবস্থান করছেন।এতে করে তার পরিবারের ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা স্বৈরশাসনের পতন হয়েছে। শুরু হয়েছে অন্তবর্তী সরকার গঠনের কাজ।

আসাদ, তার স্ত্রী ও তিন সন্তান এখন রাশিয়ায় রয়েছেন। সিরিয়া যুদ্ধে আসাদের বড় মিত্র ছিল রাশিয়া। সেখানে দুটি সামরিক ঘাঁটিও ছিল তাদের। ২০১৫ সালে রাশিয়ার বিমান হামলার পরেই ‍মূল আসাদের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।

কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যস্ত থাকায় মিত্র আসাদের পাশে সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি আসাদ। অন্যদিকে আরেক গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ইরান ও তাদের সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ব্যস্ত ছিল। ফলে কার্যত অনেকটা একা হয়ে যান আসাদ। সেই সুযোগেই সশস্ত্র বিদ্রোহীরা দামেস্ক দখল করে ও পালিয়ে যেতে বাধ্য হন আসাদ।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কোভকে আসাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে রাজি হননি।

২০১৯ সালের এক তদন্তে দেখা যায়, রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ১৮টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছে আসাদের পরিবার। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চললেও কোটি কোটি ডলার তারা বাইরে বিনিয়োগ করেছেন। আসাদের বড় ছেলে হাফেজ মস্কোর একজন পিএইচডি গবেষক।

আসাদের স্ত্রী ব্রিটিশ নাগরিক আসমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা লন্ডনেই। সেখানকার স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। এরপর একজন ব্যাংকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০০০ সালে তিনি সিরিয়ায় পাড়ি জমান। সে বছরই বাবার কাছ থেকে ক্ষমতা বুঝে নেন বাশার আল-আসাদ।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিকাল সাইন্স এর ফেলো ড. নেসরিন আলফ্রেয়াই বলেন, ‘আসমা চাইলেই রাশিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে ফিরে যেতে পারবেন। কারণ, তার ব্রিটিশ পাসপোর্ট রয়েছে। তবে আসমার বাবা ড. ফাওয়াজ আল আখরাসের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তিনিও রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। সে দিক বিবেচনায় আসমা হয়তো লন্ডনে ফিরবে না।’

আসমার চিকিৎসক বাবা ও কূটনীতিক মা সাহার এখন মস্কোতেই রয়েছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইন।আসাদ দম্পতির তিন সন্তান। বড় ছেলে হাফেজ, যিনি পিএইচডি করছেন; মেয়ে জেইন এবং ছোট ছেলে করিম।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আসাদ পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ ১০০ থেকে ২০০ কোটির ডলারের মধ্যে। তাদের সম্পদ বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট, রিয়েল এস্টেট এবং অফশোর ট্যাক্স হেভেনে লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাশার ও আসমা সিরিয়ার বৃহৎ অর্থনৈতিক খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। তাদের কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে অবৈধ কার্যক্রম থেকে অর্থ পাচার এবং সেই তহবিল শাসনব্যবস্থার কাছে পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

২০২০ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও অভিযোগ করেছিলেন, সিরিয়া যুদ্ধে সবচেয়ে লাভবান ব্যক্তিত্বদের মধ্যে একজন আসমা। তাদের পরিবারের ‘বিজনেস হেড’ হিসেবেও সম্বোধন করেছিলেন ট্রাম্প প্রশাসনের আরেক সিনিয়র কর্মকর্তা। বাশারের আরেক আত্মীয় রামি মাখলুফ। তিনি সিরিয়ায় অন্যতম ধনী ব্যক্তি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার, ব্যারেল বোমা হামলা, হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, গুম এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তার আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিচার হওয়া উচিত।

গত মঙ্গলবার সিরিয়ায় বিদ্রোহী নেতা জানান, আসাদ প্রশাসনের সিনিয়র কোনো কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে।রাশিয়ার আইন অনুযায়ী, তারা তাদের নাগরিকদের অন্য কোনো দেশে প্রেরণ করে না। তাই আসাদ রাশিয়া ছেড়ে এমন কোনো দেশে যাওয়ার সম্ভাবনা কম, যেখানে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

বাশার আল-আসাদ ও তার পরিবারের কী হবে

আপডেট টাইম : ০৬:০১:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সশস্ত্র বিদ্রোহীদের তোপের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। বর্তমানে তিনি রাশিয়ায় অবস্থান করছেন।এতে করে তার পরিবারের ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা স্বৈরশাসনের পতন হয়েছে। শুরু হয়েছে অন্তবর্তী সরকার গঠনের কাজ।

আসাদ, তার স্ত্রী ও তিন সন্তান এখন রাশিয়ায় রয়েছেন। সিরিয়া যুদ্ধে আসাদের বড় মিত্র ছিল রাশিয়া। সেখানে দুটি সামরিক ঘাঁটিও ছিল তাদের। ২০১৫ সালে রাশিয়ার বিমান হামলার পরেই ‍মূল আসাদের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।

কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যস্ত থাকায় মিত্র আসাদের পাশে সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি আসাদ। অন্যদিকে আরেক গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ইরান ও তাদের সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ব্যস্ত ছিল। ফলে কার্যত অনেকটা একা হয়ে যান আসাদ। সেই সুযোগেই সশস্ত্র বিদ্রোহীরা দামেস্ক দখল করে ও পালিয়ে যেতে বাধ্য হন আসাদ।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কোভকে আসাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে রাজি হননি।

২০১৯ সালের এক তদন্তে দেখা যায়, রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ১৮টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছে আসাদের পরিবার। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চললেও কোটি কোটি ডলার তারা বাইরে বিনিয়োগ করেছেন। আসাদের বড় ছেলে হাফেজ মস্কোর একজন পিএইচডি গবেষক।

আসাদের স্ত্রী ব্রিটিশ নাগরিক আসমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা লন্ডনেই। সেখানকার স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। এরপর একজন ব্যাংকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০০০ সালে তিনি সিরিয়ায় পাড়ি জমান। সে বছরই বাবার কাছ থেকে ক্ষমতা বুঝে নেন বাশার আল-আসাদ।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিকাল সাইন্স এর ফেলো ড. নেসরিন আলফ্রেয়াই বলেন, ‘আসমা চাইলেই রাশিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে ফিরে যেতে পারবেন। কারণ, তার ব্রিটিশ পাসপোর্ট রয়েছে। তবে আসমার বাবা ড. ফাওয়াজ আল আখরাসের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তিনিও রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। সে দিক বিবেচনায় আসমা হয়তো লন্ডনে ফিরবে না।’

আসমার চিকিৎসক বাবা ও কূটনীতিক মা সাহার এখন মস্কোতেই রয়েছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইন।আসাদ দম্পতির তিন সন্তান। বড় ছেলে হাফেজ, যিনি পিএইচডি করছেন; মেয়ে জেইন এবং ছোট ছেলে করিম।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আসাদ পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ ১০০ থেকে ২০০ কোটির ডলারের মধ্যে। তাদের সম্পদ বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট, রিয়েল এস্টেট এবং অফশোর ট্যাক্স হেভেনে লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাশার ও আসমা সিরিয়ার বৃহৎ অর্থনৈতিক খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। তাদের কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে অবৈধ কার্যক্রম থেকে অর্থ পাচার এবং সেই তহবিল শাসনব্যবস্থার কাছে পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

২০২০ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও অভিযোগ করেছিলেন, সিরিয়া যুদ্ধে সবচেয়ে লাভবান ব্যক্তিত্বদের মধ্যে একজন আসমা। তাদের পরিবারের ‘বিজনেস হেড’ হিসেবেও সম্বোধন করেছিলেন ট্রাম্প প্রশাসনের আরেক সিনিয়র কর্মকর্তা। বাশারের আরেক আত্মীয় রামি মাখলুফ। তিনি সিরিয়ায় অন্যতম ধনী ব্যক্তি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার, ব্যারেল বোমা হামলা, হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, গুম এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তার আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিচার হওয়া উচিত।

গত মঙ্গলবার সিরিয়ায় বিদ্রোহী নেতা জানান, আসাদ প্রশাসনের সিনিয়র কোনো কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে।রাশিয়ার আইন অনুযায়ী, তারা তাদের নাগরিকদের অন্য কোনো দেশে প্রেরণ করে না। তাই আসাদ রাশিয়া ছেড়ে এমন কোনো দেশে যাওয়ার সম্ভাবনা কম, যেখানে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হতে পারে।