শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে। এ সময় অনেকে চলাফেরা কম করেন, বিশেষ করে বয়স্ক মানুষের। এতে করে বিভিন্ন ব্যথা-বেদনায় শীতে অনেকেরই কোমর-ব্যথা হাঁটুব্যথা আপ্রাইটিজনিত ব্যথায় খুব কষ্ট করে থাকেন। কোমর-ব্যথা এমন এক ব্যথা, যা সহজে মুক্তি দিতে চায় না। উঠতে, বসতে, এমনকি ঘুমাতে গেলেও ব্যথা থেকে যায়। দীর্ঘসময় বসে একটানা কাজ করলে এ ব্যথা বাড়ে। তবে কোমর ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে ডিক্সের সমস্যা স্পনডাইলোসিস একটি। কোমরের অংশে পাঁচটি হাড় আছে। এ হাড়গুলো যদি বয়স বা বংশগত কারণে ক্ষয় হয়, তখন তাকে লাম্বার স্পনডাইলোসিস বলে।
কোমর-ব্যথার অন্যতম কারণ পিএল আইডি। ৩০-৪০ বছর বয়সী মানুষ এ সমস্যায় বেশি ভোগেন। মানুষের হাড়ের মধ্যে ফাঁকা জায়গা থাকে। এ ফাঁকা জায়গাটি পূরণ থাকে তালের শাঁসের মতো ডিস্ক বা চাকতি দিয়ে। এ চাকতি যদি কোনও কারণে বের হয়ে যায় অথবা স্নায়ুর ওপর চাপ ফেলে, তা হলে ব্যথা তৈরি হয়। নন স্পেসিফিক লো ব্যাক পেইন মূলত অনির্দিষ্ট কারণে হাড়, মাংসপেশি, স্নায়ুর উপাদান নষ্ট হলে হয়। এ সমস্যাটি তরুণ বয়সে বেশি হয়।
অন্যান্য কারণ হলো- মেরুদণ্ডে টিউমার ও ইনফেকশন হলে কোমর-ব্যথা হয়। মাংসপেশি শক্ত হয়ে গেলে বা মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়লে কোমরে ব্যথা হয়। শরীরের ওজন বেড়ে গেলে কোমর-ব্যথা হয়। একটানা হাঁটলে বা দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা কোলে কিছু বহন করলে কোমরে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
লক্ষণ : কোমরের পেছন দিয়ে ঊরুর পেছনে, কাফ মাসেলের পেছন দিয়ে পায়ের বুড়ো বা ছোট আঙুলে চলে আসে। এছাড়া কিছু সাধারণ উপসর্গ আছে, যেমনÑ দীর্ঘ সময়ের জন্য বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা আরও বেড়ে যায়। অনেক সময় ব্যথা পা ও হাঁটুতে এ ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে। উঠতে ও বসতে পিঠে সারাক্ষণ ব্যথা হয়।
ঘরোয়া চিকিৎসা : কোমরের যে স্থানে ব্যথা হয়, সেখানে সেঁক দিলে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে কোন ধরনের সেঁক দেবেন, পরামর্শ মোতাবেক গরম বা ঠাণ্ডা সেঁক দিলে উপকার পাবেন।
আদা : আদায় প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। এটির অভাবে নার্ভের সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন নিয়ম মেনে আদা খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
হলুদ : দুধের সঙ্গে হলুদ খেলে কোমর-ব্যথা কমে।
লেবুর শরবত : লেবুতে প্রচুর ভিটামিন-সি থাকে। ভিটামিন-সি যন্ত্রণা উপশমে খুবই উপকারী।
অ্যালোভেরা : প্রতিদিন নিয়ম করে অ্যালোভেরার শরবত খেলে ব্যথা থেকে মুক্তি মেলে।
প্রতিদিন নিয়ম করে দুধ, ঘি, পনির, ফল, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এছাড়া একই স্থানে বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না। জায়গা ছেড়ে হাঁটুন। ফোনে কথা বলার সময় হেঁটে হেঁটে কথা বলুন। দিনে যত বেশি হাঁটবেন, তত দীর্ঘদিন শরীরের অবস্থা ভালো থাকবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না। এছাড়া ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় ব্যথা থেকে উপশম মেলে। কিছু কন্ডিশনে সার্জারির প্রয়োজন হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ব্যায়াম ও কিছু নিয়ম মানলে ব্যথামুক্ত থাকবেন।