ঢাকা ০২:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের পরিচালক ভুয়া সনদে ২৩ বছরের চাকরি: তদন্ত দাবি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৫০:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৩ বার

জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের (এনআইএমসি) বর্তমান পরিচালক (প্রশিক্ষণ কৌশল) মো. নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভুয়া সনদের মাধ্যমে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে সরকারি চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে। একাধিক সূত্রের বরাতে জানা যায়, ২০০১ সালে সহকারী পরিচালক (ক্যামেরা ও আলোকসজ্জা) হিসেবে যোগদানের সময় তিনি একটি ভুয়া ডিপ্লোমা সনদ জমা দিয়েছিলেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, “মিতালী ফিল্ম স্টুডিও” নামের একটি অপ্রচলিত প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি সনদটি সংগ্রহ করেন। অথচ সরকারি নথি ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড নিশ্চিত করেছে যে, এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান কখনো অনুমোদিত ছিল না।

সনদ নিয়ে বিতর্ক ও নজরুল ইসলামের দাবি

নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি সঠিক নিয়মেই চাকরির আবেদন করেছি, এবং আমার সনদটি সরকারি কমিশন কর্তৃক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।”

তবে, অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে নজরুল ইসলামের হাতে লেখা নথি ও সনদের কপির মধ্যে সাদৃশ্য পাওয়া গেছে। এনআইএমসির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক থাকলেও, বাস্তবে সকল কার্যক্রম পরিচালনায় নজরুল ইসলামের প্রভাব সর্বোচ্চ।

তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড জানায়, “মিতালী ফিল্ম স্টুডিও” কোনো সরকারি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান নয় এবং তারা কোনো সনদ প্রদান করতে পারে না। ভুয়া সনদ যাচাইয়ের পর বোর্ডের উপপরিচালক রাজু মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, “এটি একটি জাল সনদ।”

সংশ্লিষ্ট অন্য একটি তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সনদে প্রদত্ত ঠিকানা “এইচ-৭০, আমতলী, মহাখালী, ঢাকা-১২১২” নামে কোনো প্রতিষ্ঠান মহাখালী এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সরকারি নীতিমালা এবং আইনি জটিলতা

১৯৯৬ সালের নিয়োগ বিধিমালায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত ডিপ্লোমা সনদ চাকরির জন্য আবশ্যক। অথচ নজরুল ইসলাম এই শর্ত পূরণ করেননি। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পর্যন্ত গড়িয়েছে।

ঢাকার সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট কামরুজ্জামান বলেন, “ভুয়া সনদ দিয়ে চাকরিতে প্রবেশ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এই ধরনের সনদ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের প্রতিক্রিয়া

ঘটনাটি প্রকাশ পাওয়ার পর গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নজরুল ইসলাম নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সব অভিযোগ ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছেন।

এই ঘটনায় স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের সদস্যরা।

প্রকাশিত বিভিন্ন সূত্র:

1. বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রতিবেদন

2. জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তাদের বক্তব্য

3. দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন

4. সাংবাদিকদের সঙ্গের সরাসরি সাক্ষাৎকার

এই ঘটনা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতার অভাবের একটি চিত্র তুলে ধরেছে। বিষয়টি নিয়ে গভীর তদন্ত এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের পরিচালক ভুয়া সনদে ২৩ বছরের চাকরি: তদন্ত দাবি

আপডেট টাইম : ০৬:৫০:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের (এনআইএমসি) বর্তমান পরিচালক (প্রশিক্ষণ কৌশল) মো. নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভুয়া সনদের মাধ্যমে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে সরকারি চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে। একাধিক সূত্রের বরাতে জানা যায়, ২০০১ সালে সহকারী পরিচালক (ক্যামেরা ও আলোকসজ্জা) হিসেবে যোগদানের সময় তিনি একটি ভুয়া ডিপ্লোমা সনদ জমা দিয়েছিলেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, “মিতালী ফিল্ম স্টুডিও” নামের একটি অপ্রচলিত প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি সনদটি সংগ্রহ করেন। অথচ সরকারি নথি ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড নিশ্চিত করেছে যে, এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান কখনো অনুমোদিত ছিল না।

সনদ নিয়ে বিতর্ক ও নজরুল ইসলামের দাবি

নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি সঠিক নিয়মেই চাকরির আবেদন করেছি, এবং আমার সনদটি সরকারি কমিশন কর্তৃক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।”

তবে, অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে নজরুল ইসলামের হাতে লেখা নথি ও সনদের কপির মধ্যে সাদৃশ্য পাওয়া গেছে। এনআইএমসির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক থাকলেও, বাস্তবে সকল কার্যক্রম পরিচালনায় নজরুল ইসলামের প্রভাব সর্বোচ্চ।

তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড জানায়, “মিতালী ফিল্ম স্টুডিও” কোনো সরকারি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান নয় এবং তারা কোনো সনদ প্রদান করতে পারে না। ভুয়া সনদ যাচাইয়ের পর বোর্ডের উপপরিচালক রাজু মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, “এটি একটি জাল সনদ।”

সংশ্লিষ্ট অন্য একটি তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সনদে প্রদত্ত ঠিকানা “এইচ-৭০, আমতলী, মহাখালী, ঢাকা-১২১২” নামে কোনো প্রতিষ্ঠান মহাখালী এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সরকারি নীতিমালা এবং আইনি জটিলতা

১৯৯৬ সালের নিয়োগ বিধিমালায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত ডিপ্লোমা সনদ চাকরির জন্য আবশ্যক। অথচ নজরুল ইসলাম এই শর্ত পূরণ করেননি। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পর্যন্ত গড়িয়েছে।

ঢাকার সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট কামরুজ্জামান বলেন, “ভুয়া সনদ দিয়ে চাকরিতে প্রবেশ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এই ধরনের সনদ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের প্রতিক্রিয়া

ঘটনাটি প্রকাশ পাওয়ার পর গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নজরুল ইসলাম নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সব অভিযোগ ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছেন।

এই ঘটনায় স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের সদস্যরা।

প্রকাশিত বিভিন্ন সূত্র:

1. বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রতিবেদন

2. জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তাদের বক্তব্য

3. দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন

4. সাংবাদিকদের সঙ্গের সরাসরি সাক্ষাৎকার

এই ঘটনা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতার অভাবের একটি চিত্র তুলে ধরেছে। বিষয়টি নিয়ে গভীর তদন্ত এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।