ঢাকা ০৮:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আদানি বিদ্যুৎ না দিলে বাংলাদেশও প্রস্তুত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৭:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪
  • ১৯ বার

বিদ্যুৎ বিক্রির বকেয়া টাকা না পেলে ৭ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে আদানি পাওয়ার। ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৮৫ কোটি ডলারের বকেয়া নিষ্পত্তির সুরাহা না হলে ভারতের বৃহত্তম এই বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিটি আগামী ৭ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হবে। বিষয়টি কীভাবে দেখা হচ্ছে? জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন, রেল যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ জ¦ালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমকে বলেন, আদানি যদি সত্যিই বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমরা এটা মোকাবিলায় প্রস্তুত আছি।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, আদানি গ্রুপের বকেয়া পেমেন্ট দেওয়ার গতি বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে। পূর্বের যে বিল বাকি, তার জন্য মূলত দায়ী পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার।

তিনি বলেন, আদানি গ্রুপকে গত মাসে ৯ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করা হয়েছে, যা আগস্ট বা আগের মাসের চেয়ে দ্বিগুণ। আমাদের তরফ থেকে সর্বোচ্চ ও দ্রুত পেমেন্টের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে আদানির স্থানীয় (বাংলাদেশ) প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে পাঠানো এক ক্ষুদে বার্তায় বলা হয়েছে, পুরো টাকা পরিশোধ না করলে আদানি বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেবে- এমন মর্মে কোনো আলটিমেটাম দেয়নি। প্রয়োজনীয় অর্থ পরিশোধে এলসি করতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে এবং পিডিবির সঙ্গে আলোচনা করে সহযোগিতা করবে আদানি পাওয়ার।

প্রসঙ্গত, ঝাড়খ- রাজ্যের গোড্ডায় আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে প্রতিদিন ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছিল। বকেয়া অর্থ না পাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানায় আদানি পাওয়ার।

বকেয়া অর্থ পরিশোধে গত ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ১৭ কোটি ডলারের ঋণপত্র (এলসি) পরিশোধ করতে বলেছিল আদানি পাওয়ার। চুক্তি অনুযায়ী আদানিকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করার কথা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। তবে ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকটি অপারগতা প্রকাশ করায় সেই অর্থ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পাঠাতে চেয়েছিলেন বলে সূত্রের বরাতে লিখেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। তবে তা চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় আদানি পাওয়ার তাতে সম্মতি দেয়নি। এ পরিস্থিতিতে আদানি পাওয়ার একটি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশের চলমান লোডশেডিং আরও বেড়েছে। পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের (পিজিবি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়েছে ভারতীয় ওই কোম্পানি।

ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। সক্ষমতার বিচারে এরপর আছে পায়রা (১,২৪৪ মেগাওয়াট), রামপাল (১,২৩৪ মেগাওয়াট) ও এসএস পাওয়ার ওয়ান (১,২২৪ মেগাওয়াট)।

টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে- কয়লা সংকটের কারণে রামপাল ও এসএস পাওয়ার ওয়ান সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম উৎপাদন করছে। শিল্প খাতের সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, সময়মতো বিল না পেয়ে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানি কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ঋণ পরিশোধে ধীরগতির কারণে বকেয়ার পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

অক্টোবরে আদানি পাওয়ারকে প্রায় ৯ কোটি ডলার পরিশোধের কথা বলা হচ্ছে, যেখানে আগের মাসগুলোতে ৯-১০ কোটি ডলারের বিলের বিপরীতে ২-৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হতো।

ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা কয়লার দাম ধরে আদানি পাওয়ারের ঝাড়খ- কেন্দ্র প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে ১০-১২ টাকায়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার কাছে কোনো মন্তব্য করেনি আদানি। তবে এর আগে কোম্পানিটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তারা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আশাবাদী।

এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, আমরা অক্টোবর মাসে আদানি পাওয়ারের পাওনা প্রায় ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছি; সেপ্টেম্বরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া তাদের জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭ কোটি ডলারের এলসি করা হয়েছে। এর পরও তাদের এমন আচরণ খুব আশ্চর্যজনক, বিস্ময়কর ও দুঃখজনক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদানি যদি সত্যিই বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমরা এটা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত আছি। গ্রাহকরা যাতে ভোগান্তির মধ্যে না পড়ে, সে জন্য আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছি।

টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে- বিল পরিশোধে বিলম্ব, বিশেষ করে এ বিষয়ে ‘স্পষ্টতার অভাব’ ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিকে চরম পদক্ষেপ নিতে ‘প্রভাবিত’ করেছে। কারণ আদানি পাওয়ারকেও ঋণদাতাদের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।

বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে কেন্দ্রটির বাণিজ্যিক সফলতা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, ওই কেন্দ্রের একমাত্র ক্রেতা বাংলাদেশ এবং ৮০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের মধ্যে একটিকে অলস ফেলে রাখতে হচ্ছে। মাসে ৯-১০ কোটি ডলারের বিল হলে বছরে ১১০ কোটি আয় করার সুযোগ আছে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের। টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে- বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরপরই চাহিদা ও অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিতে অভ্যন্তরীণ বাজারে নজর দিয়েছে আদানি। বিহারের লখিসরাই সাব-স্টেশনের মাধ্যমে স্থানীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে বলা হয়েছে তাদের।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে রেমিট্যান্সের গতি বেড়েছে। ফলে এখন সেন্ট্রাল রিজার্ভে হাত না দিয়েই আন্তর্জাতিক পেমেন্টগুলো করতে পারছি। ভারতের আদানি গ্রুপের বকেয়া পেমেন্ট দেওয়ার গতি বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে। সেই সক্ষমতা সরকারের আছে। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় ফরেস সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানান তিনি।

প্রেস সচিব বলেন, বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারতের আদানি গ্রুপ টাকা পায়, এটা সত্য। তাদের পেমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে গতি বাড়িয়েছি। পূর্বের যে বিল বাকি আছে, সেটার জন্য মূলত দায়ী পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার। তারা বিশাল ফাইল অব বেকলট রেখে গিয়েছিল। তিনি বলেন, আদানি গ্রুপকে গত মাসে ৯ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করা হয়েছে, যা আগস্ট বা আগের মাসের চেয়ে দ্বিগুণ। আমাদের তরফ থেকে সর্বোচ্চ পেমেন্ট আরও দ্রুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দেশের রিজার্ভ বাড়তে শুরু হয়েছে- জানিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক পেমেন্টগুলো রিজার্ভে হাত না দিয়েই করতে পারছি। পেমেন্ট ৭০০ মিলিয়ন ডলার বাকি আছে। সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে করে দিতে পারব। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমরা কারও দ্বারা পাওয়ার হোস্টেজ (জ্বালানি নির্ভরতা) হব না। নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আদানি বিদ্যুৎ না দিলে বাংলাদেশও প্রস্তুত

আপডেট টাইম : ১০:৫৭:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪

বিদ্যুৎ বিক্রির বকেয়া টাকা না পেলে ৭ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে আদানি পাওয়ার। ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৮৫ কোটি ডলারের বকেয়া নিষ্পত্তির সুরাহা না হলে ভারতের বৃহত্তম এই বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিটি আগামী ৭ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হবে। বিষয়টি কীভাবে দেখা হচ্ছে? জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন, রেল যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ জ¦ালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমকে বলেন, আদানি যদি সত্যিই বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমরা এটা মোকাবিলায় প্রস্তুত আছি।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, আদানি গ্রুপের বকেয়া পেমেন্ট দেওয়ার গতি বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে। পূর্বের যে বিল বাকি, তার জন্য মূলত দায়ী পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার।

তিনি বলেন, আদানি গ্রুপকে গত মাসে ৯ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করা হয়েছে, যা আগস্ট বা আগের মাসের চেয়ে দ্বিগুণ। আমাদের তরফ থেকে সর্বোচ্চ ও দ্রুত পেমেন্টের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে আদানির স্থানীয় (বাংলাদেশ) প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে পাঠানো এক ক্ষুদে বার্তায় বলা হয়েছে, পুরো টাকা পরিশোধ না করলে আদানি বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেবে- এমন মর্মে কোনো আলটিমেটাম দেয়নি। প্রয়োজনীয় অর্থ পরিশোধে এলসি করতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে এবং পিডিবির সঙ্গে আলোচনা করে সহযোগিতা করবে আদানি পাওয়ার।

প্রসঙ্গত, ঝাড়খ- রাজ্যের গোড্ডায় আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে প্রতিদিন ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছিল। বকেয়া অর্থ না পাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানায় আদানি পাওয়ার।

বকেয়া অর্থ পরিশোধে গত ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ১৭ কোটি ডলারের ঋণপত্র (এলসি) পরিশোধ করতে বলেছিল আদানি পাওয়ার। চুক্তি অনুযায়ী আদানিকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করার কথা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। তবে ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকটি অপারগতা প্রকাশ করায় সেই অর্থ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পাঠাতে চেয়েছিলেন বলে সূত্রের বরাতে লিখেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। তবে তা চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় আদানি পাওয়ার তাতে সম্মতি দেয়নি। এ পরিস্থিতিতে আদানি পাওয়ার একটি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশের চলমান লোডশেডিং আরও বেড়েছে। পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের (পিজিবি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার ৭২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়েছে ভারতীয় ওই কোম্পানি।

ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। সক্ষমতার বিচারে এরপর আছে পায়রা (১,২৪৪ মেগাওয়াট), রামপাল (১,২৩৪ মেগাওয়াট) ও এসএস পাওয়ার ওয়ান (১,২২৪ মেগাওয়াট)।

টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে- কয়লা সংকটের কারণে রামপাল ও এসএস পাওয়ার ওয়ান সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম উৎপাদন করছে। শিল্প খাতের সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, সময়মতো বিল না পেয়ে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানি কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ঋণ পরিশোধে ধীরগতির কারণে বকেয়ার পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

অক্টোবরে আদানি পাওয়ারকে প্রায় ৯ কোটি ডলার পরিশোধের কথা বলা হচ্ছে, যেখানে আগের মাসগুলোতে ৯-১০ কোটি ডলারের বিলের বিপরীতে ২-৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হতো।

ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা কয়লার দাম ধরে আদানি পাওয়ারের ঝাড়খ- কেন্দ্র প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে ১০-১২ টাকায়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার কাছে কোনো মন্তব্য করেনি আদানি। তবে এর আগে কোম্পানিটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তারা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আশাবাদী।

এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, আমরা অক্টোবর মাসে আদানি পাওয়ারের পাওনা প্রায় ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছি; সেপ্টেম্বরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া তাদের জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭ কোটি ডলারের এলসি করা হয়েছে। এর পরও তাদের এমন আচরণ খুব আশ্চর্যজনক, বিস্ময়কর ও দুঃখজনক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদানি যদি সত্যিই বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমরা এটা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত আছি। গ্রাহকরা যাতে ভোগান্তির মধ্যে না পড়ে, সে জন্য আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছি।

টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে- বিল পরিশোধে বিলম্ব, বিশেষ করে এ বিষয়ে ‘স্পষ্টতার অভাব’ ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিকে চরম পদক্ষেপ নিতে ‘প্রভাবিত’ করেছে। কারণ আদানি পাওয়ারকেও ঋণদাতাদের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।

বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে কেন্দ্রটির বাণিজ্যিক সফলতা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, ওই কেন্দ্রের একমাত্র ক্রেতা বাংলাদেশ এবং ৮০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের মধ্যে একটিকে অলস ফেলে রাখতে হচ্ছে। মাসে ৯-১০ কোটি ডলারের বিল হলে বছরে ১১০ কোটি আয় করার সুযোগ আছে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের। টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে- বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরপরই চাহিদা ও অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিতে অভ্যন্তরীণ বাজারে নজর দিয়েছে আদানি। বিহারের লখিসরাই সাব-স্টেশনের মাধ্যমে স্থানীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে বলা হয়েছে তাদের।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে রেমিট্যান্সের গতি বেড়েছে। ফলে এখন সেন্ট্রাল রিজার্ভে হাত না দিয়েই আন্তর্জাতিক পেমেন্টগুলো করতে পারছি। ভারতের আদানি গ্রুপের বকেয়া পেমেন্ট দেওয়ার গতি বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে। সেই সক্ষমতা সরকারের আছে। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় ফরেস সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানান তিনি।

প্রেস সচিব বলেন, বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারতের আদানি গ্রুপ টাকা পায়, এটা সত্য। তাদের পেমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে গতি বাড়িয়েছি। পূর্বের যে বিল বাকি আছে, সেটার জন্য মূলত দায়ী পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার। তারা বিশাল ফাইল অব বেকলট রেখে গিয়েছিল। তিনি বলেন, আদানি গ্রুপকে গত মাসে ৯ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করা হয়েছে, যা আগস্ট বা আগের মাসের চেয়ে দ্বিগুণ। আমাদের তরফ থেকে সর্বোচ্চ পেমেন্ট আরও দ্রুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দেশের রিজার্ভ বাড়তে শুরু হয়েছে- জানিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক পেমেন্টগুলো রিজার্ভে হাত না দিয়েই করতে পারছি। পেমেন্ট ৭০০ মিলিয়ন ডলার বাকি আছে। সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে করে দিতে পারব। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমরা কারও দ্বারা পাওয়ার হোস্টেজ (জ্বালানি নির্ভরতা) হব না। নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হব।