ফুসলিয়ে যৌন হয়রানির পর গোপন ক্যামেরায় অন্তত অর্ধশত নারীকে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার এক বিকৃত যুবক বিপ্লব খানকে খুঁজছে পুলিশ। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের ৫০ থেকে ৬০ জন নারী বিপ্লবের এ প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যৌন প্রতারণার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিপ্লবকে গ্রেফতারে পাথরঘাটার নতুন বাজার এলাকায় বৃহস্পতিবার দিনব্যাপি অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। অভিযানের খবর পেয়ে এ সময় কৌশলে গা ঢাকা দেয় প্রতারক বিপ্লব।
ছবি তুলতে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী পুষ্পর (ছদ্মনাম) পরিচয় হয় স্টুডিও মালিক বিপ্লবের সঙ্গে। একপর্যায়ে সেই পরিচিতি থেকে দুজনের ঘনিষ্ঠতা। কিন্তু পুষ্প বুঝতে পারেনি এটা বিপ্লবের একটি ফাঁদ। স্টুডিওর ভেতরে পেতে রাখা গোপন ক্যামেরায় উঠে যায় দুজনের একান্ত মুহূর্তের ভিডিও চিত্র। আর তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে এই লম্পট। এভাবে প্রায় অর্ধশত নারীকে এই লম্পটের ফাঁদে ফেলার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে বরগুনার পাথরঘাটায়।
জানা গেছে, আপত্তিকর ভিডিওকে অস্ত্র বানিয়ে প্রতারক বিপ্লব মেয়েটিকে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে—‘এটা করো, ওটা করো। টাকা দাও। নইলে এই ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেব।’ এ অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়ে মেয়েটি। অথচ মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারে না। একটাই ভয়, যদি এই লম্পট সত্যি সত্যিই এই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়! এমনই অবস্থায় একদিন পুষ্প বিপ্লবের স্টুডিওতে কম্পিউটার নাড়াচাড়া করতে গিয়ে একটি গোপন ফোল্ডারে দেখতে পায় একই স্টুডিওতে পেতে রাখা গোপন ক্যামেরায় তোলা তার মতো আরো প্রায় অর্ধশত নারীর আপত্তিকর ভিডিও। তাঁরা সবাই এখন বিপ্লবের গোপন ক্যামেরার ফাঁদে বন্দি।
সম্প্রতি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে পাথরঘাটার বখাটে লম্পট বিপ্লবের প্রতারণার এই ভয়াবহ চিত্র। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা প্রায় অর্ধশত নারীর আপত্তিকর ভিডিও বিপ্লব ইতিমধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে তার বন্ধুদের মোবাইলে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘বিপ্লবের গোপন ক্যামেরায় তোলা বিভিন্ন বয়সের প্রায় অর্ধশত নারীর গোপন ভিডিও এখন ছড়িয়ে গেছে পাথরঘাটার তরুণ প্রজন্মের মোবাইল থেকে মোবাইলে। আর তাতে করে লোকলজ্জার ভয়ে ঘরবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন ওই সব নারী।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে পাথরঘাটা শহরের নতুন বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপ্লবের কম্পিউটার জব্দ করে পুলিশ। এ সময় ওই কম্পিউটার থেকে বিভিন্ন বয়সের ভিন্ন ভিন্ন নারীর একান্ত মুহূর্তের অর্ধশত ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করা হয়। পরে বিপ্লবের বড় ভাই সাইফুলকে আটক করে তারা।
এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক জানান, বিপ্লবকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ভুক্তভোগী পর্নগ্রাফি আইন-২০১২ এর কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বলেন, পাথরঘাটার বিপ্লবের এসব গোপন ক্যামেরার ফুটেজ যার কাছে পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ।