প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট ও দল। আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টা এসব বৈঠক চলবে। এ বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রোডম্যাপ ইস্যুতে মতামত দেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট ও দল। তবে কোন কোন রাজনৈতিক দল এ মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রণ পেয়েছে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রক্রিয়া চালু রাখব, তাদের কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাব যা আসবে, সেগুলো গ্রহণ করব। সে ব্যাপারে একটা পদ্ধতির বিষয়ে কথা হয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টা দপ্তর সূত্র বলছে, ‘আমরা সব রাজনৈতিক দলকেই মতবিনিময়ে চাইছি। মতবিনিময়ে আগ্রহীরা সবাই আসবে। দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে বুঝতে পারবেন।’
তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব রাজনৈতিক জোট বা দলের সঙ্গে এখন পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার কোনো বৈঠক বা সাক্ষাৎ হয়নি; তাদের এবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এ ছাড়াও কয়েকটি ইসলামিক দলকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শপথ নেওয়ার পর এ পর্যন্ত তার সঙ্গে বিএনপির দুই দফা বৈঠক হয়েছে। গত ১২ আগস্ট ও ২৯ আগস্ট এসব বৈঠক হয়। এ ছাড়াও ১২ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টি, বাসদ, এনডিএম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (পার্থ) সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে দলগুলোর নেতাদের সূত্রে জানা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কী আলোচনা হতে পারে- এ বিষয়ে এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, গত ১৬ বছরে যেভাবে শেখ হাসিনা প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের সমস্ত কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে; আমরা এসবের সংস্কার চাই। আমরা এ-ও চাই, সংস্কারের মাধ্যমে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক, যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে সবাই ভোট দিতে পারে। আমরা এ জন্য একটি রোডম্যাপও চাই। এসব বিষয় নিয়েই মূলত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা আমাদের মতামত তুলে ধরব।
১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদত হোসেন সেলিম আমাদের সময়কে বলেন, সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত রোডম্যাপ, আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, নতুন তালিকা করে যৌথ অভিযান পরিচালনা- এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কথা বলব।
মতবিনিময়ে অংশ নেবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আমাদের কথাগুলো বলব। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের আলোচনা শুরু করতে হবে। এ সরকার কোন কোন কাজ করতে পারবে, সে কাজ করার জন্য কতদিন সময় প্রয়োজন হবে, তা আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বৈঠকের আমন্ত্রণ পেয়েছেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান ও এনপিপির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরিদ। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, আমরা যাব। সেখানে আমরা কী নিয়ে কথা বলব, তা যাওয়ার আগে জোটের বৈঠকে ঠিক করা হবে।
প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানানো হলেও গত ২৪ অগাস্ট থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন প্রশ্নে অতি দ্রুত সংলাপের দাবি জানান। এরপর জাতির উদ্দেশে ভাষণে ড. ইউনূস তার সরকারের যে কর্ম পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, সেখানে নির্বাচন প্রশ্নে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল না। তাতে ‘হতাশা’ প্রকাশ করেন ফখরুল। তিনি ছাড়াও দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার যমুনায় আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার ডাক পান বিএনপি নেতারা। সেখানে সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপি বলেছে, তারাও সংস্কারের পক্ষে। তবে লম্বা সময় নিয়ে সংস্কারের চিন্তার সঙ্গে একমত নয় দলটি। বিশ^স্ত সূত্রের বরাত দিয়ে নেতারা বলেছেন, সারা দেশে দ্রুত সময়ে সরকার একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করবে বলে জেনেছেন তারা। এক্ষেত্রে তারা বলেছেন, এই অভিযান পরিচালনার আগে যেন নতুন তালিকা করা হয়। কারণ, যে তালিকা আছে তা বিগত সরকারের তৈরি করা। সে ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বিএনপি।