ঢাকা ১২:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সচিবালয় থেকে ৪ শতাধিক আনসার সদস্য আটক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০১:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪
  • ২২ বার

ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে সচিবালয় অবরোধ করে রাখা আনসার সদস্যরা পালিয়েছেন। এ সময় সচিবালয় ও আশপাশের এলাকা থেকে দুই নারী সদস্যসহ প্রায় চার শতাধিক আনসার সদস্যকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

রোববার দিবাগত রাতে আটক আনসার সদস্যদের ঢাকার শাহবাগ, রমনা, পল্টন ও মতিঝিলসহ আশপাশের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাত আড়াইটা পর্যন্ত সচিবালয় গেট থেকে আটক আনসার সদস্যদের পুলিশের প্রিয়জন ভ্যানে করে বিভিন্ন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

রাত দুইটা দিকে সচিবালয়ের দুই নম্বর গেটে দেখা যায়, যেসব আনসার সদস্য ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে সচিবালয়ের ভেতরে অবস্থানে নেন, তাদেরকে সেখান থেকে বের করে এনে সড়কে দাঁড় করে রাখা হয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় চারপাশে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।

সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েক হাজার আনসার সদস্য চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে সমাবেশ করে। বিকালের দিকে তারা সচিবালয়ের ৫ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। সন্ধ্যার পর আন্দোলনরত আনসারের নেতৃত্বের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বৈঠক করে তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেন। তারপরও আনসার সদস্যরা প্রজ্ঞাপনের দাবিতে অনড় থেকে সচিবালয়ের গেট অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়মুখী একটি ত্রাণের গাড়িও আটকে দেন।

একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে সচিবালযয়ে উপদেষ্টা ও সমন্বয়কদের অবরুদ্ধ করে রাখার খবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে আসলে আনসার সদস্যরা ইটপাটকেল ছুড়েন। এ সময় গুলির ঘটনাও ঘটে। পরে ছাত্ররা শিক্ষা ভবনের দিকে সরে গিয়ে আনসার সদস্যদের স্থান ত্যাগ করার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু তারা স্থান ত্যাগ না করে উল্টো ছাত্রদের ওপরে ছড়াও হতে থাকেন। একপর্যায়ে ছাত্ররা একত্রিত হয়ে আনসারদের ধাওয়া দিলে তারা দৌড়ে জিরো পয়েন্টের দিকে সরে যান। সেখানে আবার তারা সংঘটিত হয়ে ছাত্রদেরকে ধাওয়া করেন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে বাঁশের লাঠি ও স্ট্যাম্প দেখা যায়। এ ঘটনায় আনসার সদস্য, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা চারদিক থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে অভিমুখে রওনা হলে আনসার সদস্যরা পিছু হটেন। তখন সচিবালয় থেকে অবরুদ্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বের হয়ে আসতে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি যুগান্তরকে বলেন, সমন্বয়কদের সচিবালয়ে আনসাররা আটকে রেখেছে- এমন খবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের দিকে যাচ্ছিল। শিক্ষা ভবন পার হওয়ার পরেই আনসারদের দিক থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে মিছিলের সামনের দিকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিক আহত হন। ছাত্ররা তখন পেছনের দিকে চলে আসে এবং আনসারদের চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। কিন্ত আনসাররা ছাত্রদের দিকে আক্রমণ করতেই থাকেন। একপর্যায়ে ছাত্রদের ওপর গুলিও ছুড়েন। এ সময় বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়। পরে শিক্ষার্থী ও পুলিশ আনসারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। রাত সোয়া ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে সেনাবাহিনী। পরবর্তীতে ছাত্ররা ধাওয়া দিলে আনসাররা পল্টনের দিকে পালিয়ে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আনসারের একটি সূত্র জানায়, ১৯ সমন্বয়কের নেতৃত্বে আনসার সদস্যরা আন্দোলন করছে। এদের মধ্যে প্রধান সমন্বয়ক নাসির সন্ধ্যায় উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করে এক সপ্তাহ সময়ের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন। এতে কিছু উচ্ছৃঙ্খল আনসার সদস্য উত্তেজিত হয়ে তর্ক শুরু করেন এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অথচ তিন বছরের চুক্তিভিত্তিক হিসেবেই তারা চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছেন।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সচিবালয় থেকে ৪ শতাধিক আনসার সদস্য আটক

আপডেট টাইম : ১১:০১:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪

ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে সচিবালয় অবরোধ করে রাখা আনসার সদস্যরা পালিয়েছেন। এ সময় সচিবালয় ও আশপাশের এলাকা থেকে দুই নারী সদস্যসহ প্রায় চার শতাধিক আনসার সদস্যকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

রোববার দিবাগত রাতে আটক আনসার সদস্যদের ঢাকার শাহবাগ, রমনা, পল্টন ও মতিঝিলসহ আশপাশের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাত আড়াইটা পর্যন্ত সচিবালয় গেট থেকে আটক আনসার সদস্যদের পুলিশের প্রিয়জন ভ্যানে করে বিভিন্ন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

রাত দুইটা দিকে সচিবালয়ের দুই নম্বর গেটে দেখা যায়, যেসব আনসার সদস্য ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে সচিবালয়ের ভেতরে অবস্থানে নেন, তাদেরকে সেখান থেকে বের করে এনে সড়কে দাঁড় করে রাখা হয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় চারপাশে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।

সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েক হাজার আনসার সদস্য চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে সমাবেশ করে। বিকালের দিকে তারা সচিবালয়ের ৫ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। সন্ধ্যার পর আন্দোলনরত আনসারের নেতৃত্বের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বৈঠক করে তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেন। তারপরও আনসার সদস্যরা প্রজ্ঞাপনের দাবিতে অনড় থেকে সচিবালয়ের গেট অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়মুখী একটি ত্রাণের গাড়িও আটকে দেন।

একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে সচিবালযয়ে উপদেষ্টা ও সমন্বয়কদের অবরুদ্ধ করে রাখার খবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে আসলে আনসার সদস্যরা ইটপাটকেল ছুড়েন। এ সময় গুলির ঘটনাও ঘটে। পরে ছাত্ররা শিক্ষা ভবনের দিকে সরে গিয়ে আনসার সদস্যদের স্থান ত্যাগ করার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু তারা স্থান ত্যাগ না করে উল্টো ছাত্রদের ওপরে ছড়াও হতে থাকেন। একপর্যায়ে ছাত্ররা একত্রিত হয়ে আনসারদের ধাওয়া দিলে তারা দৌড়ে জিরো পয়েন্টের দিকে সরে যান। সেখানে আবার তারা সংঘটিত হয়ে ছাত্রদেরকে ধাওয়া করেন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে বাঁশের লাঠি ও স্ট্যাম্প দেখা যায়। এ ঘটনায় আনসার সদস্য, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা চারদিক থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে অভিমুখে রওনা হলে আনসার সদস্যরা পিছু হটেন। তখন সচিবালয় থেকে অবরুদ্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বের হয়ে আসতে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি যুগান্তরকে বলেন, সমন্বয়কদের সচিবালয়ে আনসাররা আটকে রেখেছে- এমন খবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের দিকে যাচ্ছিল। শিক্ষা ভবন পার হওয়ার পরেই আনসারদের দিক থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে মিছিলের সামনের দিকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিক আহত হন। ছাত্ররা তখন পেছনের দিকে চলে আসে এবং আনসারদের চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। কিন্ত আনসাররা ছাত্রদের দিকে আক্রমণ করতেই থাকেন। একপর্যায়ে ছাত্রদের ওপর গুলিও ছুড়েন। এ সময় বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়। পরে শিক্ষার্থী ও পুলিশ আনসারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। রাত সোয়া ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে সেনাবাহিনী। পরবর্তীতে ছাত্ররা ধাওয়া দিলে আনসাররা পল্টনের দিকে পালিয়ে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আনসারের একটি সূত্র জানায়, ১৯ সমন্বয়কের নেতৃত্বে আনসার সদস্যরা আন্দোলন করছে। এদের মধ্যে প্রধান সমন্বয়ক নাসির সন্ধ্যায় উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করে এক সপ্তাহ সময়ের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন। এতে কিছু উচ্ছৃঙ্খল আনসার সদস্য উত্তেজিত হয়ে তর্ক শুরু করেন এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অথচ তিন বছরের চুক্তিভিত্তিক হিসেবেই তারা চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছেন।