ঢাকা ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

শোকের মাতমে শেষ হলো ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৫:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০২৪
  • ২১ বার

মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ধর্মীয়ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হিজরি বছরের প্রথম মাস মুহররমের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা, যা মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক। আর এ উপলক্ষে শিয়া সম্প্রদায় শোক আর মাতমের মধ্য দিয়ে এ বছরের তাজিয়া মিছিল শেষ হয়েছে। পুরো মিছিল জুড়ে ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা।

বুধবার (১৭ জুলাই) শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে পুরাণ ঢাকা লালবাগের হোসেনি দালান ইমামবাড়ি থেকে তাজিয়া মিছিলটি শুরু হয়ে বকশীবাজার রোড, নিউমার্কেট হয়ে ধানমন্ডি লেকের পার্শ্ববর্তী সীমান্ত স্কয়ার সামনে থেকে শেষ হয়। এ সময় খালি পায়ে, বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতম তুলতে থাকেন।

পুরাণ ঢাকা লালবাগের হোসেনি দালান ইমামবাড়ি থেকে তাজিয়া মিছিলটি শুরু হয়। ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ

হোসেনি দালান ইমামবাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির আয়োজনে সব বয়সের নারী-পুরুষেরা মিছিলে অংশ নেয়। ছোট-বড় সবার গায়ে শোভা পায় কালো কাপড়ের জামা।

তাজিয়া মিছিল সাজানো হয়েছে কারবালার শোকের নানা প্রতিকৃতি দিয়ে। বিবি ফাতেমার স্মরণে মিছিলের শুরুতেই দুটি কালো গম্বুজ বহন করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা বহন করছেন বিভিন্ন নিশান। কারবালার রক্তাক্ত স্মৃতির স্মরণে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত নিজের দেহে ছুরি দিয়ে আঘাত করে রক্ত ঝরিয়ে মাতম করেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের অনুরোধে গত কয়েকবছর ধরেই ছুরি ব্যবহার করা হচ্ছে না।

এছাড়াও মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অনেকে বিভিন্ন আকারের নিশান বহন করতে দেখা গেছে। আয়োজিত মিছিলে বহন করা হয় ইমাম হোসেন (রা.)-এর সমাধির প্রতিকৃতি।

তাজিয়া মিছিল সাজানো হয়েছে কারবালার শোকের নানা প্রতিকৃতি দিয়ে।

মিছিলকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মত। ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলায় দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। এর পর থেকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে রেখে তাজিয়া মিছিল পরিচালনা করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), র‌্যাব, সোয়াত বিভিন্ন স্তরের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় মিছিলকে ঘিরে।

এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ডিএমপি কমিশনার।

মিছিলকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মত।

প্রসঙ্গত, হিজরি বছরের প্রথম মাস মুহররমের ১০ তারিখ, পবিত্র আশুরা। এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহিদ হন। যা মুসলিম বিশ্ব কারবালার ঘটনাকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক। যা মুসলিম বিশ্ব কারবালার ঘটনাকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক। এই দিনে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসল্লিরা ত্যাগ ও শোক পালনে তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করে থাকে।

তাজিয়া কারবালার যুদ্ধে নিহত হযরত মুহাম্মদের (স.) দৌহিত্র ইমাম হোসেনের (রা.) সমাধির প্রতিকৃতি। আরবি ‘তাজিয়া’ শব্দটি উর্দু ও ফারসি ভাষায়ও প্রচলিত এবং এর সাধারণ অর্থ শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করা। তবে বিশেষ অর্থে শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে শোকাবেগসঞ্চারী অনুষ্ঠানকেও তাজিয়া বলা হয় এবং ইমাম হোসেনের (রা.) শাহাদত লাভের বিষাদময় স্মৃতির উদ্দেশ্যে তা পালিত হয়। তাজিয়া নিয়ে মিছিল করার কারণে এর নাম হয়েছে তাজিয়া মিছিল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কল্যানমুখী দেশ গড়তে সর্বশ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান- এড.জুবায়ের

শোকের মাতমে শেষ হলো ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল

আপডেট টাইম : ১২:২৫:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০২৪

মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ধর্মীয়ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হিজরি বছরের প্রথম মাস মুহররমের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা, যা মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক। আর এ উপলক্ষে শিয়া সম্প্রদায় শোক আর মাতমের মধ্য দিয়ে এ বছরের তাজিয়া মিছিল শেষ হয়েছে। পুরো মিছিল জুড়ে ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা।

বুধবার (১৭ জুলাই) শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে পুরাণ ঢাকা লালবাগের হোসেনি দালান ইমামবাড়ি থেকে তাজিয়া মিছিলটি শুরু হয়ে বকশীবাজার রোড, নিউমার্কেট হয়ে ধানমন্ডি লেকের পার্শ্ববর্তী সীমান্ত স্কয়ার সামনে থেকে শেষ হয়। এ সময় খালি পায়ে, বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতম তুলতে থাকেন।

পুরাণ ঢাকা লালবাগের হোসেনি দালান ইমামবাড়ি থেকে তাজিয়া মিছিলটি শুরু হয়। ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ

হোসেনি দালান ইমামবাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির আয়োজনে সব বয়সের নারী-পুরুষেরা মিছিলে অংশ নেয়। ছোট-বড় সবার গায়ে শোভা পায় কালো কাপড়ের জামা।

তাজিয়া মিছিল সাজানো হয়েছে কারবালার শোকের নানা প্রতিকৃতি দিয়ে। বিবি ফাতেমার স্মরণে মিছিলের শুরুতেই দুটি কালো গম্বুজ বহন করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা বহন করছেন বিভিন্ন নিশান। কারবালার রক্তাক্ত স্মৃতির স্মরণে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত নিজের দেহে ছুরি দিয়ে আঘাত করে রক্ত ঝরিয়ে মাতম করেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের অনুরোধে গত কয়েকবছর ধরেই ছুরি ব্যবহার করা হচ্ছে না।

এছাড়াও মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অনেকে বিভিন্ন আকারের নিশান বহন করতে দেখা গেছে। আয়োজিত মিছিলে বহন করা হয় ইমাম হোসেন (রা.)-এর সমাধির প্রতিকৃতি।

তাজিয়া মিছিল সাজানো হয়েছে কারবালার শোকের নানা প্রতিকৃতি দিয়ে।

মিছিলকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মত। ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলায় দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। এর পর থেকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে রেখে তাজিয়া মিছিল পরিচালনা করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), র‌্যাব, সোয়াত বিভিন্ন স্তরের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় মিছিলকে ঘিরে।

এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ডিএমপি কমিশনার।

মিছিলকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মত।

প্রসঙ্গত, হিজরি বছরের প্রথম মাস মুহররমের ১০ তারিখ, পবিত্র আশুরা। এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহিদ হন। যা মুসলিম বিশ্ব কারবালার ঘটনাকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক। যা মুসলিম বিশ্ব কারবালার ঘটনাকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক। এই দিনে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসল্লিরা ত্যাগ ও শোক পালনে তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করে থাকে।

তাজিয়া কারবালার যুদ্ধে নিহত হযরত মুহাম্মদের (স.) দৌহিত্র ইমাম হোসেনের (রা.) সমাধির প্রতিকৃতি। আরবি ‘তাজিয়া’ শব্দটি উর্দু ও ফারসি ভাষায়ও প্রচলিত এবং এর সাধারণ অর্থ শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করা। তবে বিশেষ অর্থে শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে শোকাবেগসঞ্চারী অনুষ্ঠানকেও তাজিয়া বলা হয় এবং ইমাম হোসেনের (রা.) শাহাদত লাভের বিষাদময় স্মৃতির উদ্দেশ্যে তা পালিত হয়। তাজিয়া নিয়ে মিছিল করার কারণে এর নাম হয়েছে তাজিয়া মিছিল।