ঢাকা ০৭:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসনাত-তাহমিদকে জিজ্ঞাসাবাদের যতো কথা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৮:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ অগাস্ট ২০১৬
  • ৩৮৯ বার

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন ৫৪ ধারায় গ্রেফতার নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও হিযবুত তাহরীরের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত রেজা করিম এবং কানাডার টরোন্টো ইউনিভার্সিটির ছাত্র তাহমিদ হাসিব খানকে নিয়ে তদন্তে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা ।

জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন এই দুইজনকে ৮ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার চতুর্থ দিন পার হয়েছে মঙ্গলবার। ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্স ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম ইউনিট এই দুই জনকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

তদন্ত সংশ্লিস্ট একটি সূত্র জানায়, তদন্তের এক মাস পরও কর্মকর্তারা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি যে এই দুই জনের সঙ্গে জঙ্গি হামলার সংশ্লিষ্টতা আছে কি না। তদন্ত কর্মকর্তারা পূর্বপশ্চিমের কাছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন এই দুইজনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে এখনও আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে দেশের মানুষ এবং গণমাধ্যমে এই দুইজন নিয়ে সংবাদ ও ছবি প্রকাশ করায় তারাও বিষয়টি আরো গুরত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনার পূর্বাপর এ দুজনের সঙ্গে জঙ্গিদের কি ধরনের সম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে সেই রাতে ঘটনার সময় হাসনাত করিমের ভূমিকা ভাবাচ্ছে তদন্ত সংশিষ্টদের। সেই রাতে তাহমিদের হাতে যে অস্ত্রটি ছিল সেটি কি উদ্দেশ্যে তিনি নিজের কাছে রেখেছিলেন ? জঙ্গিরা জোরপূর্বক তার কাছে অস্ত্রটি দিয়েছিল নাকি তারা পরিকল্পিতভাবে জঙ্গিদের হয়ে হামলায় অংশ নিয়েছিলেন ? এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তদন্ত কর্মকর্তারা।

তিনি জানান, রিমান্ডে তাহমিদ ও হাসনাত দাবি করেছেন, জঙ্গিরা তাকে ও হাসনাতকে অস্ত্রের মুখে ছাদে নিয়েছিল। জঙ্গিরা যখন বুঝতে পেরেছিল তাদেরকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘিরে ফেলেছে, তখন একাধিক অস্ত্রের মধ্যে একটি অস্ত্র তাহমিদকে দিয়ে প্রস্তুত হতে বলেছিল জঙ্গিরা।

তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতেও তাহমিদ যে ভঙ্গিমায় অস্ত্রটি ধরে ছিলেন তাতে অনেক সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও তাহমিদ রিমান্ডে দাবি করেছেন, সেই রাতে তার হাতে যে অস্ত্রটি ছিল তাতে কোন গুলি ছিল না। হাফ অ্যান আওয়ার-এর মধ্যেই জিম্মিদের হত্যা করে জঙ্গিরা : একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক ও হিযবুত তাহরীরের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত রেজা করিমের স্ত্রী শারমিন বলেছেন, হামলাকারীরা প্রবেশের মাত্র ‘হাফ অ্যান আওয়ার’-এর (আধা ঘণ্টা) মধ্যেই জিম্মিদের হত্যা করে।

হামলার কতক্ষণের মধ্যে হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল, একঘণ্টা নাকি আরেকটু বেশি সময়ে- এ প্রশ্নের জবাবে শারমিন বলেন, ‘এক ঘণ্টা নয়, আধা ঘণ্টার মধ্যেই।’

হাসনাত করিম নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, ‘ওই রাতে যা কিছু তিনি করেছিলেন, সেটা তার পরিবারকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে করেছিলেন।’

শারমিন বলেন, ‘আমরা হাসনাতের পরিবার, এ বিষয়টি বুঝতে পেরে হামলাকারীরা সেটার সুবিধা নিতে চেয়েছিল। তারা জানতো, তিনি কখনোই আমাদের ছেড়ে যাবেন না। সে কারণেই তারা সে রাতে অনেক কিছু করতে তাকেই বেছে নেয় এবং তাকে সেদিন মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সারারাত আমাদের বন্দুকের সামনে রেখেছিল এবং আমার স্বামী হামলাকারীদের নির্দেশ মানতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাদের নির্দেশ মতো কাজ না করলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছিল। তারা তার (হাসনাতের) কাছ থেকে আইডি এবং মোবাইল ফোন নিয়ে তারপর ইন্টারনেট ব্যবহার করেছিল।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হাসনাত-তাহমিদকে জিজ্ঞাসাবাদের যতো কথা

আপডেট টাইম : ১২:৫৮:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ অগাস্ট ২০১৬

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন ৫৪ ধারায় গ্রেফতার নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও হিযবুত তাহরীরের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত রেজা করিম এবং কানাডার টরোন্টো ইউনিভার্সিটির ছাত্র তাহমিদ হাসিব খানকে নিয়ে তদন্তে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা ।

জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন এই দুইজনকে ৮ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার চতুর্থ দিন পার হয়েছে মঙ্গলবার। ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্স ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম ইউনিট এই দুই জনকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

তদন্ত সংশ্লিস্ট একটি সূত্র জানায়, তদন্তের এক মাস পরও কর্মকর্তারা এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি যে এই দুই জনের সঙ্গে জঙ্গি হামলার সংশ্লিষ্টতা আছে কি না। তদন্ত কর্মকর্তারা পূর্বপশ্চিমের কাছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন এই দুইজনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে এখনও আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে দেশের মানুষ এবং গণমাধ্যমে এই দুইজন নিয়ে সংবাদ ও ছবি প্রকাশ করায় তারাও বিষয়টি আরো গুরত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনার পূর্বাপর এ দুজনের সঙ্গে জঙ্গিদের কি ধরনের সম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে সেই রাতে ঘটনার সময় হাসনাত করিমের ভূমিকা ভাবাচ্ছে তদন্ত সংশিষ্টদের। সেই রাতে তাহমিদের হাতে যে অস্ত্রটি ছিল সেটি কি উদ্দেশ্যে তিনি নিজের কাছে রেখেছিলেন ? জঙ্গিরা জোরপূর্বক তার কাছে অস্ত্রটি দিয়েছিল নাকি তারা পরিকল্পিতভাবে জঙ্গিদের হয়ে হামলায় অংশ নিয়েছিলেন ? এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তদন্ত কর্মকর্তারা।

তিনি জানান, রিমান্ডে তাহমিদ ও হাসনাত দাবি করেছেন, জঙ্গিরা তাকে ও হাসনাতকে অস্ত্রের মুখে ছাদে নিয়েছিল। জঙ্গিরা যখন বুঝতে পেরেছিল তাদেরকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘিরে ফেলেছে, তখন একাধিক অস্ত্রের মধ্যে একটি অস্ত্র তাহমিদকে দিয়ে প্রস্তুত হতে বলেছিল জঙ্গিরা।

তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতেও তাহমিদ যে ভঙ্গিমায় অস্ত্রটি ধরে ছিলেন তাতে অনেক সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও তাহমিদ রিমান্ডে দাবি করেছেন, সেই রাতে তার হাতে যে অস্ত্রটি ছিল তাতে কোন গুলি ছিল না। হাফ অ্যান আওয়ার-এর মধ্যেই জিম্মিদের হত্যা করে জঙ্গিরা : একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক ও হিযবুত তাহরীরের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত রেজা করিমের স্ত্রী শারমিন বলেছেন, হামলাকারীরা প্রবেশের মাত্র ‘হাফ অ্যান আওয়ার’-এর (আধা ঘণ্টা) মধ্যেই জিম্মিদের হত্যা করে।

হামলার কতক্ষণের মধ্যে হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল, একঘণ্টা নাকি আরেকটু বেশি সময়ে- এ প্রশ্নের জবাবে শারমিন বলেন, ‘এক ঘণ্টা নয়, আধা ঘণ্টার মধ্যেই।’

হাসনাত করিম নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, ‘ওই রাতে যা কিছু তিনি করেছিলেন, সেটা তার পরিবারকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে করেছিলেন।’

শারমিন বলেন, ‘আমরা হাসনাতের পরিবার, এ বিষয়টি বুঝতে পেরে হামলাকারীরা সেটার সুবিধা নিতে চেয়েছিল। তারা জানতো, তিনি কখনোই আমাদের ছেড়ে যাবেন না। সে কারণেই তারা সে রাতে অনেক কিছু করতে তাকেই বেছে নেয় এবং তাকে সেদিন মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সারারাত আমাদের বন্দুকের সামনে রেখেছিল এবং আমার স্বামী হামলাকারীদের নির্দেশ মানতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাদের নির্দেশ মতো কাজ না করলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছিল। তারা তার (হাসনাতের) কাছ থেকে আইডি এবং মোবাইল ফোন নিয়ে তারপর ইন্টারনেট ব্যবহার করেছিল।’