কথাটি গতানুগতিকভাবে চিন্তা করলেও হৃদয়ে নাড়া দেয় যে মানুষের শিরা-উপশিরায়ও শয়তানের প্রভাব রয়েছে।
মহান আল্লাহর হুকুমে রক্তের কণাগুলো এই বিশাল পথে ছুটে চলে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, সুস্থ রাখার জন্য। আবার শয়তান এই বিশাল পথে ছুটে চলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য, কষ্টে ফেলার জন্য। আখিরাত থেকে বঞ্চিত করার জন্য।
আমেরিকার বিজ্ঞান জাদুঘর ও বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ফ্রাংকলিন ইনস্টিটিউট জানাচ্ছে, মানুষের শরীরে রক্ত সংবহনতন্ত্র যেভাবে ছড়িয়ে থাকে, তাতে মানব শরীর আক্ষরিক অর্থেই রক্তিম বলা চলে।
শরীরের পুরো ত্বকের নিচেই আছে রক্তের উপস্থিতি। তাই তো আঘাত বা যেকোনো ছোটখাটো কাটাছেঁড়ায়ই রক্তারক্তি কাণ্ড হয়। এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, মানবদেহের প্রতিটি অংশেই শয়তান উপস্থিত হতে পারে এবং মানুষকে কুমন্ত্রণা দিতে পারে। শয়তানের বিচরণের গতি ও পরিধি মানুষের কল্পনার বাইরে। এর আরেকটি উদাহরণ হলো শয়তান একসময় আসমান থেকে খবর চুরি করে আনত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি (আল্লাহ) প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান থেকে আকাশকে নিরাপদ করে দিয়েছি।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ১৭)
ইবনে আব্বাস (রা.) উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, একসময় আকাশে শয়তানের প্রবেশাধিকার ছিল। শয়তানরা আকাশে গিয়ে ফেরেশতাদের কথোপকথন থেকে গায়েব বা অদৃশ্যের কিছু খবরাখবর শুনত।
পরে সেগুলো পাদ্রি বা জ্যোতির্বিদদের কাছে বলত। ঈসা (আ.)-এর জন্মের পর প্রথম তিন আসমানে তাদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়। আর মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মের পর সব আসমানে শয়তানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এর পর থেকে যখনই কোনো শয়তান ঊর্ধ্বাকাশে উঠতে চেষ্টা করে, জ্বলন্ত আগুন বা উল্কা তাকে ধাওয়া করে। (তাফসিরে রাজি : ৯/১৬৯, কাশশাফ : ২/১৮৮)
পৃথিবী থেকে প্রথম আসমান ঠিক কত দূরে তা জানা দুষ্কর। তবে গণমাধ্যমের তথ্য মতে, ২০২২ সালে বিজ্ঞানীরা ইরেন্ডেল নামের নতুন একটি নক্ষত্র আবিষ্কার করেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, নক্ষত্রটি পৃথিবী থেকে কমপক্ষে ১২.৯ মিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরে রয়েছে। আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার। আলো যদি এই বেগে টানা এক বছর ভ্রমণ করে, তাহলে যে দূরত্ব অতিক্রম করবে, তাকে বলে এক আলোক বর্ষ।
প্রথম আসমানের নিচে এমন আরো অনেক নক্ষত্র রয়েছে, যেগুলোর তথ্য এখনো মানুষের অজানা। যা হোক একসময় শয়তান মুহূর্তে সেই দূরত্ব থেকেও খবর চুরি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করত।
তাই মুমিনের উচিত শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে সদা সতর্ক থাকা। সব সময় মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। কারণ মহান আল্লাহ বান্দাকে এই নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় চাও। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০০)