আম্পায়ার নারী দেখে খেলতে চায়নি তামিম-মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহদের দল’ এবং ‘ডিপিএল: নারী আম্পায়ারের অধীনে খেলতে আপত্তি ক্রিকেটারদের’- দুই শীর্ষ গণমাধ্যমের দুই শিরোনামে রীতিমতো উত্তাল দেশের ক্রিকেটাঙ্গন।
নারীরা যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে, শত বাঁধা পেরিয়ে অজেয়কে জয় করছে, সেখানে তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের মতো সুপারস্টার এমন লিঙ্গ বৈষম্য করেছে? নারী আম্পায়ার বলে মাঠেই নামবেন না তারা? বিষয়টি কি আসলেও এমন হয়েছে? ক্রিকেটারদের কি কোনো আপত্তি ছিল?
উত্তরটা শুনুন সাথিরা জাকির জেসির মুখেই। যিনি এখন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) আন্তর্জাতিক প্যানেলের আম্পায়ার, ‘আমি রীতিমত বিস্মিত। ক্রিকেটাররা মাঠে কখন নামতে আপত্তি করলো? আমি গণমাধ্যমেই পড়লাম এমন খবর। অথচ মাঠে তো সবাই আমার প্রশংসা করলো…।’ জেসি নিজের কথা শেষ করতে পারেননি…
জেসি যখন এমন খবর উড়িয়ে দিয়েছেন তখন অভিযোগের তীর সরাসরি ক্লাবগুলোর ওপরই পড়ে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় মিরপুর শের-ই-বাংলায়। অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সিসিডিএম প্রথমবারের মতো একজন নারী আম্পায়ারকে অনফিল্ডে দায়িত্ব পালন করতে পাঠায়। তার সঙ্গে ছিলেন এ আই এম মনিরুজ্জামান।
ম্যাচটি এমনিতেই আলোচনায় ছিল মুশফিকুর রহিমের সীমানায় ক্যাচ নিয়ে। আবু হায়দার রনি দারুণ ক্যাচ নিলেও তার পা বাউন্ডারি রোপ ছুঁয়েছিল কিনা তা নিয়েই যত বিতর্ক। রনি আত্মবিশ্বাসী এবং শতভাগ নিশ্চিত থাকায় মুশফিককে ফিরতে হয় ড্রেসিংরুমে। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যাচ্ছিল, তার পা রোপে আলতো চুমু খেয়েছে। এ নিয়ে কম কিছু হয়নি।
তবে ওই ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টে যায় পরদিন। জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টার খবর প্রকাশ করে, ‘ডিপিএলের উভয় দলই নারী আম্পায়ারের নিয়োগে অসন্তুষ্ট ছিল।’ খবরের ভেতরে ছিল, দল এবং ক্লাব কর্মকর্তারা নারী আম্পায়ার নিয়োগ নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল। তবে খেলোয়াড়দের থেকে বেশি কর্মকর্তারাই বেশি আওয়াজ তুলেছিলেন।
এই খবরের সত্যতা প্রকাশ করেছেন বিসিবির পরিচালক ও আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ মিঠু। তার দাবি ক্লাব কর্মকর্তারা জেসির নিয়োগ নিয়ে কথা বলেছে। কিন্তু কোনো অভিযোগ করেনি। ম্যাচের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাচ নিয়ে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়, সেখানে অধিনায়ক ও কোচের কোনো অভিযোগ ছিল না জেসির নিয়োগ নিয়ে। বরং জানা গেছে, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে গিয়ে জেসিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
গুঞ্জন ছড়িয়েছে সেই ম্যাচ শুরু হতে বিলম্ব হয়েছিল। কিন্তু রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদক সেদিন মাঠে উপস্থিত ছিলেন। মাঠে খেলা শুরু হতে কোনো বিলম্বই হয়নি। অভিযোগের তীরটা যখন ক্লাব কর্মকর্তার ওপর তখন তাদের ব্যাখ্যাও জানা প্রয়োজন।
যোগাযোগ করা হলে দুই ক্লাবের কর্মকর্তাদের ভাবনা প্রায় একই রকম পাওয়া গেছে। তারা কেউই নারী আম্পায়ার নিয়ে কোনো আপত্তি তুলেননি। তারা জেসির অভিজ্ঞতা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন।
মোহামেডান ক্লাবের প্রধান সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ‘আমরা জেসিকে দেখি একটু অবাকই হয়েছিলাম। কিন্তু কেন তিনি আম্পায়ারিং করবেন এটা নিয়ে কোনো প্রশ্নই তোলা হয়নি। আমাদের তরফ থেকে কোনো আপত্তি করা হয়নি। আমরা নিজেরা বলাবলি করেছি, সংশয় প্রকাশ করেছি কারণ মাত্রই তার আম্পায়ারিং সফর শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ঢাকা লিগের ম্যাচ সব সময়ই উত্তেজনা থাকে। আমরা চেয়েছিলাম আরো ভালো আম্পায়ার। কিন্তু জেসি তো ভালো ডিসিশন নিয়েছে। আমাদের সংশয় ছিল। সেটা দূর হয়ে গেছে সহজেই।’
প্রাইম ব্যাংকের ম্যানেজার শিকদার আবুল হাশেম, ‘আমাদের সংশয়ের জায়গাটা ছিল কেবল অভিজ্ঞতা। এখানে খেলব না, দেরিতে খেলা শুরু হবে এমন কিছুই হয়নি। আমরা মাঠে নেমেছি, খেলা যথাসময়ে শুরু হয়েছে। তবে যেহেতু মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও প্রাইম ব্যাংক বড় দল। বিগ বাজেটেরও দল। আমরা চেয়েছিলাম আারো ভালো ও অভিজ্ঞতা আছে এমন আম্পায়ারকে দিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করতে। যেটাই হয়েছে, আমাদের আলোচনা নিয়ে আমরা কোনো লিখিত বা মৌখিত অভিযোগ করিনি। আমরা পুরো ম্যাচটাই ভালোভাবে শেষ করতে চেয়েছি।’
এদিকে দৈনিক খবরের কাগজ -কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেসি বলেছেন, ‘মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাইসহ, তামিম ভাই, ইমরুল ভাই, মুশফিক ভাই সবাই আমার পরিচিত। তাদের জন্য আমার কাজ করাটা সহজ হয়েছিল। নতুন যারা ছিল-জাকির, নাঈম ওরাও খুব ভালো। সবার কাছ থেকে খুব ভালো সমর্থন পেয়েছি। ভালো ব্যাপার হলো ম্যাচ শেষে দুই দলের ক্রিকেটাররা অনেক প্রশংসা করেছে।’
এছাড়া ম্যাচের আম্পায়ারিং নিয়ে রাইজিংবিডিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেসিন বলেছিলেন, ‘মেয়েদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকেও এখানে অনেক চাপ থাকে। এখানে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা খেলে। সঙ্গে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের আলাদা চাপ। সবকিছু মিলিয়ে ভালোভাবে করে বের হয়ে আসতে পেরেছি। এটাই আমার কাছে বড় ব্যাপার।’