ঢাকা ১২:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যাদের জাকাত দেওয়া যাবে, যাদের দেওয়া যাবে না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৩:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪
  • ৩৫ বার

জাকাত ইসলামের প্রধান আর্থিক ইবাদত এবং ইসলামের মৌলিক ভিত্তিগুলোর অন্যতম। মুসলিম সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণে এবং সমাজে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে জাকাতের ভূমিকা অপরিসীম।

পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে জাকাতের আদেশ করা হয়েছে। এক জায়গায় এসেছে, ‘তোমরা সালাত আদায় করো এবং জাকাত প্রদান করোতোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখছেন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১০)

ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.) জাকাতের বিরুদ্ধাচরণকারীদের মুরতাদ হিসেবে গণ্য করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! তারা যদি আমাকে জাকাতের একটি উটের দড়িও প্রদান করতে অস্বীকার করে, যা তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রদান করত, আমি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করব, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তা আদায় করে দেয়। (বুখারি, হাদিস : ৬৯২৪, ৬৯২৫)

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.)-এর ভাষায়, ‘জাকাত ইসলামের এমন এক অকাট্য বিধান, যে তা অস্বীকার করে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়। ’ (ফাতহুল বারি ৩/৩০৯)

 জাকাত আদায় না করার ভয়াবহ পরিণতি

জাকাত প্রদানে যারা কার্পণ্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআন এবং হাদিস শরিফে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদের দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তারা যেন কিছুতেই মনে না করে যে এটা তাদের জন্য মঙ্গল। বরং এটা তাদের জন্য অমঙ্গল। যে সম্পদে তারা কৃপণতা করেছে কিয়ামতের দিন তা-ই তাদের গলায় বেড়ি হবে।
(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮০)

হাদিস শরিফে এসেছে, যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার জাকাত দেয়নি কিয়ামতের দিন তা বিষধর সর্পরূপে উপস্থিত হবে এবং তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার উভয় অধরপ্রান্তে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ওই সম্পদ, আমিই তোমার পুঞ্জীভূত সম্পদ। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪০৩)

যাদের ওপর জাকাত ফরজ হয়

সুস্থ মস্তিষ্ক, আজাদ, বালেগ মুসলমান নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে জাকাত আদায় করা তার ওপর ফরজ হয়ে যায়। কাফির যেহেতু ইবাদতের যোগ্যতা রাখে না, তাই তাদের ওপর জাকাত আসে না।

এ ছাড়া অসুস্থ মস্তিষ্ক মুসলমানের ওপর এবং নাবালেগ শিশু-কিশোরের ওপরও জাকাত ফরজ নয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৬/৪৬১-৪৬২; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮-২৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৭৯,৮২)

যাদের জাকাত দেওয়া যাবে

পবিত্র কোরআনে জাকাতের খাত নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। এ খাত ছাড়া অন্য কোথাও জাকাত প্রদান করা জায়েজ নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘জাকাত তো শুধু নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও জাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য, যাদের মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। এ আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬০)

যে দরিদ্র ব্যক্তির কাছে অতি সামান্য সম্পদ আছে, অথবা কিছুই নেই, এমনকি একদিনের খোরাকিও নেই—এমন লোক ইসলামের দৃষ্টিতে গরিব। তাকে জাকাত দেওয়া যাবে। আর যে ব্যক্তির কাছে সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, বাণিজ্যদ্রব্য ইত্যাদি নিসাব পরিমাণ আছে সে ইসলামের দৃষ্টিতে ধনী। তাকে জাকাত দেওয়া যাবে না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তির কাছে জাকাতযোগ্য সম্পদ নিসাব পরিমাণ নেই, কিন্তু অন্য ধরনের সম্পদ আছে, যাতে জাকাত আসে না; যেমন—ঘরের আসবাব, পরিধেয় বস্ত্র, জুতা, গার্হস্থ্যসামগ্রী ইত্যাদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং নিসাব পরিমাণ আছে তাকেও জাকাত দেওয়া যাবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭১৫৬)

যাদের জাকাত দেওয়া যাবে না

নিজ মাতা-পিতা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, পরদাদা প্রমুখ ব্যক্তি, যাঁরা তার জন্মের উৎস, তাঁদের নিজের জাকাত দেওয়া জায়েজ নয়। এমনিভাবে নিজের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি এবং তাদের অধস্তনকে নিজ সম্পদের জাকাত দেওয়া জায়েজ নয়। স্বামী এবং স্ত্রী একে অন্যকে জাকাত দেওয়া জায়েজ নয়। কাফিরকে জাকাত দেওয়া যায় না। নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক ও তার নাবালক সন্তানকে জাকাত দেওয়া যাবে না। মসজিদ-মাদরাসা, পুল, রাস্তা, হাসপাতাল বানানোর কাজে এবং মৃতের দাফনের কাজে জাকাতের টাকা দেওয়া যাবে না। (তবে মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের জন্য জাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে)। (রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮)

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

যাদের জাকাত দেওয়া যাবে, যাদের দেওয়া যাবে না

আপডেট টাইম : ১১:৫৩:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪

জাকাত ইসলামের প্রধান আর্থিক ইবাদত এবং ইসলামের মৌলিক ভিত্তিগুলোর অন্যতম। মুসলিম সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণে এবং সমাজে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে জাকাতের ভূমিকা অপরিসীম।

পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে জাকাতের আদেশ করা হয়েছে। এক জায়গায় এসেছে, ‘তোমরা সালাত আদায় করো এবং জাকাত প্রদান করোতোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখছেন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১০)

ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.) জাকাতের বিরুদ্ধাচরণকারীদের মুরতাদ হিসেবে গণ্য করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! তারা যদি আমাকে জাকাতের একটি উটের দড়িও প্রদান করতে অস্বীকার করে, যা তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রদান করত, আমি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করব, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তা আদায় করে দেয়। (বুখারি, হাদিস : ৬৯২৪, ৬৯২৫)

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.)-এর ভাষায়, ‘জাকাত ইসলামের এমন এক অকাট্য বিধান, যে তা অস্বীকার করে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়। ’ (ফাতহুল বারি ৩/৩০৯)

 জাকাত আদায় না করার ভয়াবহ পরিণতি

জাকাত প্রদানে যারা কার্পণ্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআন এবং হাদিস শরিফে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদের দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তারা যেন কিছুতেই মনে না করে যে এটা তাদের জন্য মঙ্গল। বরং এটা তাদের জন্য অমঙ্গল। যে সম্পদে তারা কৃপণতা করেছে কিয়ামতের দিন তা-ই তাদের গলায় বেড়ি হবে।
(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮০)

হাদিস শরিফে এসেছে, যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার জাকাত দেয়নি কিয়ামতের দিন তা বিষধর সর্পরূপে উপস্থিত হবে এবং তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার উভয় অধরপ্রান্তে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ওই সম্পদ, আমিই তোমার পুঞ্জীভূত সম্পদ। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪০৩)

যাদের ওপর জাকাত ফরজ হয়

সুস্থ মস্তিষ্ক, আজাদ, বালেগ মুসলমান নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে জাকাত আদায় করা তার ওপর ফরজ হয়ে যায়। কাফির যেহেতু ইবাদতের যোগ্যতা রাখে না, তাই তাদের ওপর জাকাত আসে না।

এ ছাড়া অসুস্থ মস্তিষ্ক মুসলমানের ওপর এবং নাবালেগ শিশু-কিশোরের ওপরও জাকাত ফরজ নয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৬/৪৬১-৪৬২; রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮-২৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৭৯,৮২)

যাদের জাকাত দেওয়া যাবে

পবিত্র কোরআনে জাকাতের খাত নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। এ খাত ছাড়া অন্য কোথাও জাকাত প্রদান করা জায়েজ নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘জাকাত তো শুধু নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও জাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য, যাদের মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। এ আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬০)

যে দরিদ্র ব্যক্তির কাছে অতি সামান্য সম্পদ আছে, অথবা কিছুই নেই, এমনকি একদিনের খোরাকিও নেই—এমন লোক ইসলামের দৃষ্টিতে গরিব। তাকে জাকাত দেওয়া যাবে। আর যে ব্যক্তির কাছে সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, বাণিজ্যদ্রব্য ইত্যাদি নিসাব পরিমাণ আছে সে ইসলামের দৃষ্টিতে ধনী। তাকে জাকাত দেওয়া যাবে না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তির কাছে জাকাতযোগ্য সম্পদ নিসাব পরিমাণ নেই, কিন্তু অন্য ধরনের সম্পদ আছে, যাতে জাকাত আসে না; যেমন—ঘরের আসবাব, পরিধেয় বস্ত্র, জুতা, গার্হস্থ্যসামগ্রী ইত্যাদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং নিসাব পরিমাণ আছে তাকেও জাকাত দেওয়া যাবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭১৫৬)

যাদের জাকাত দেওয়া যাবে না

নিজ মাতা-পিতা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, পরদাদা প্রমুখ ব্যক্তি, যাঁরা তার জন্মের উৎস, তাঁদের নিজের জাকাত দেওয়া জায়েজ নয়। এমনিভাবে নিজের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি এবং তাদের অধস্তনকে নিজ সম্পদের জাকাত দেওয়া জায়েজ নয়। স্বামী এবং স্ত্রী একে অন্যকে জাকাত দেওয়া জায়েজ নয়। কাফিরকে জাকাত দেওয়া যায় না। নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক ও তার নাবালক সন্তানকে জাকাত দেওয়া যাবে না। মসজিদ-মাদরাসা, পুল, রাস্তা, হাসপাতাল বানানোর কাজে এবং মৃতের দাফনের কাজে জাকাতের টাকা দেওয়া যাবে না। (তবে মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের জন্য জাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে)। (রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮)