ঢাকা ০৬:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমজানে রোজার বরকত থেকে বঞ্চিত হবেন যারা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪
  • ৩৫ বার

পার্থিব কাজের বিচারে যেমন মানুষকে নানা স্তরে ভাগ করা যায়, তেমনি ইবাদত-বন্দেগির বিচারেও মানুষকে নানা স্তরে ভাগ করা যায়। যেমন রোজা। রোজাদার ব্যক্তির দ্বিনদারি, আত্মিক অবস্থা ও রোজার শিষ্টাচার রক্ষায় আন্তরিকতার বিচারে তাকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়।

রোজাদারের চার স্তর।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রোজাদার ব্যক্তিদের চার স্তরে বিভক্ত করা যায়:

১. যাদের রোজা নিষ্ফল: যে ব্যক্তি রোজাকে প্রথা-প্রচলনের চেয়ে বেশি কিছু মনে করে না। পরিবার ও সমাজে মুখ রক্ষার জন্য রোজা রাখে। তার রোজা সাহরি ও ইফতারের বাইরে সীমাবদ্ধ থাকে। রোজার শর্ত ও শিষ্টাচার কোনোটাই তার ভেতর পাওয়া যায় না।

তারা রোজা রেখেও শরিয়তবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে না। যেমন—মিথ্যা, পরনিন্দা, প্রতারণা ইত্যাদি মন্দ কাজ করতে থাকে।
এমন ব্যক্তি রোজার মর্যাদা ও বরকত থেকে বঞ্চিত হয়। রোজা তাদের জীবনে কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে না।

হাদিসের ভাষায় ক্ষুধা ও পিপাসা ছাড়া তাদের আর কোনো অর্জন নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কত রোজাদার এমন যাদের রোজা ক্ষুিপপাসা ছাড়া আর কিছুই না এবং কত তাহাজ্জুদ আদায়কারী এমন যাদের তাহাজ্জুদ রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছু না। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ২০১৪)

২. আল্লাহভীরু রোজাদার: যে ব্যক্তি ব্যক্তিগত জীবনে দ্বিনদার এবং যথাসম্ভব কবিরা ও সগিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। রোজা এমন রোজাদারের ভেতর আল্লাহভীতি তৈরি করে। যেন তারা নিম্নোক্ত আয়াতেরই দৃষ্টান্ত—‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩)

আল্লাহভীতির কারণে রোজাদার ব্যক্তি তার দৈনন্দিন আমলগুলোকে হালাল-হারামের দাঁড়িপাল্লায় মেপে নেয়। এমন রোজাদারের জন্য রোজা ঢালস্বরূপ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, রোজা ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন রোজা অবস্থায় অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোজাদার। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০৪)

৩. আল্লাহর পরিচয় লাভকারীর রোজা: আল্লাহর পরিচয় লাভকারী কামেল ব্যক্তি হলেন যিনি শুধু আল্লাহভীতিই অর্জন করেন না, বরং নিজের প্রবৃত্তির ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। এক ব্যক্তি খাজা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া মুলতানি (রহ.)-কে তাঁর রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রোজা হলো নিজের প্রবৃত্তি কামনা করে এমন বস্তু থেকে বিরত থাকা। নিম্নোক্ত আয়াতে তাদের রোজার ফলাফল বর্ণিত হয়েছে, ‘পক্ষান্তরে যে স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে জান্নাতই হবে তার আবাস। ’ (সুরা : নাজিয়াত, আয়াত : ৪০-৪১)

৪. মুশাহাদার স্তরে উপনীত ব্যক্তির রোজা: যে ব্যক্তি মুশাহাদার স্তরে উপনীত হয় সৃষ্টিজগৎ থেকে তার দৃষ্টি সরে গিয়ে মহান আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলিতে আবদ্ধ থাকে। তারা পৃথিবীতে জীবনযাপন করলেও পৃথিবীর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকে না। সৃষ্টিজগতের ব্যাপারে তারা থাকে অমুখাপেক্ষী। এমন ব্যক্তির রোজা তার ভেতর আল্লাহর নুরই বৃদ্ধি করে এবং রোজা তার জন্য আল্লাহর অধিকতর নৈকট্য লাভের মাধ্যম কেবল। এমন ব্যক্তি সম্পর্কেই হাদিসে বলা হয়েছে, সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, অবশ্যই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়েও উত্তম। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০৪)

রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, জান্নাতের রাইয়ান নামের একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোজা পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৯৬)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

রমজানে রোজার বরকত থেকে বঞ্চিত হবেন যারা

আপডেট টাইম : ১১:১৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪

পার্থিব কাজের বিচারে যেমন মানুষকে নানা স্তরে ভাগ করা যায়, তেমনি ইবাদত-বন্দেগির বিচারেও মানুষকে নানা স্তরে ভাগ করা যায়। যেমন রোজা। রোজাদার ব্যক্তির দ্বিনদারি, আত্মিক অবস্থা ও রোজার শিষ্টাচার রক্ষায় আন্তরিকতার বিচারে তাকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়।

রোজাদারের চার স্তর।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রোজাদার ব্যক্তিদের চার স্তরে বিভক্ত করা যায়:

১. যাদের রোজা নিষ্ফল: যে ব্যক্তি রোজাকে প্রথা-প্রচলনের চেয়ে বেশি কিছু মনে করে না। পরিবার ও সমাজে মুখ রক্ষার জন্য রোজা রাখে। তার রোজা সাহরি ও ইফতারের বাইরে সীমাবদ্ধ থাকে। রোজার শর্ত ও শিষ্টাচার কোনোটাই তার ভেতর পাওয়া যায় না।

তারা রোজা রেখেও শরিয়তবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে না। যেমন—মিথ্যা, পরনিন্দা, প্রতারণা ইত্যাদি মন্দ কাজ করতে থাকে।
এমন ব্যক্তি রোজার মর্যাদা ও বরকত থেকে বঞ্চিত হয়। রোজা তাদের জীবনে কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে না।

হাদিসের ভাষায় ক্ষুধা ও পিপাসা ছাড়া তাদের আর কোনো অর্জন নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কত রোজাদার এমন যাদের রোজা ক্ষুিপপাসা ছাড়া আর কিছুই না এবং কত তাহাজ্জুদ আদায়কারী এমন যাদের তাহাজ্জুদ রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছু না। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ২০১৪)

২. আল্লাহভীরু রোজাদার: যে ব্যক্তি ব্যক্তিগত জীবনে দ্বিনদার এবং যথাসম্ভব কবিরা ও সগিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। রোজা এমন রোজাদারের ভেতর আল্লাহভীতি তৈরি করে। যেন তারা নিম্নোক্ত আয়াতেরই দৃষ্টান্ত—‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩)

আল্লাহভীতির কারণে রোজাদার ব্যক্তি তার দৈনন্দিন আমলগুলোকে হালাল-হারামের দাঁড়িপাল্লায় মেপে নেয়। এমন রোজাদারের জন্য রোজা ঢালস্বরূপ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, রোজা ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন রোজা অবস্থায় অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোজাদার। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০৪)

৩. আল্লাহর পরিচয় লাভকারীর রোজা: আল্লাহর পরিচয় লাভকারী কামেল ব্যক্তি হলেন যিনি শুধু আল্লাহভীতিই অর্জন করেন না, বরং নিজের প্রবৃত্তির ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। এক ব্যক্তি খাজা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া মুলতানি (রহ.)-কে তাঁর রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রোজা হলো নিজের প্রবৃত্তি কামনা করে এমন বস্তু থেকে বিরত থাকা। নিম্নোক্ত আয়াতে তাদের রোজার ফলাফল বর্ণিত হয়েছে, ‘পক্ষান্তরে যে স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে জান্নাতই হবে তার আবাস। ’ (সুরা : নাজিয়াত, আয়াত : ৪০-৪১)

৪. মুশাহাদার স্তরে উপনীত ব্যক্তির রোজা: যে ব্যক্তি মুশাহাদার স্তরে উপনীত হয় সৃষ্টিজগৎ থেকে তার দৃষ্টি সরে গিয়ে মহান আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলিতে আবদ্ধ থাকে। তারা পৃথিবীতে জীবনযাপন করলেও পৃথিবীর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকে না। সৃষ্টিজগতের ব্যাপারে তারা থাকে অমুখাপেক্ষী। এমন ব্যক্তির রোজা তার ভেতর আল্লাহর নুরই বৃদ্ধি করে এবং রোজা তার জন্য আল্লাহর অধিকতর নৈকট্য লাভের মাধ্যম কেবল। এমন ব্যক্তি সম্পর্কেই হাদিসে বলা হয়েছে, সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, অবশ্যই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়েও উত্তম। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০৪)

রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, জান্নাতের রাইয়ান নামের একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোজা পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৯৬)