ঢাকা ০৭:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে জিনদের সাক্ষাত হয়েছিল যেভাবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
  • ৬২ বার
পবিত্র কোরআনের ৭২ নম্বর সুরা জিন। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ২৮। এ সুরার প্রথম আয়াতের জিন শব্দ থেকে সুরাটির নাম করা হয়েছে।

আলোচ্য সুরায় রাসুল (সা.)-এর সুমধুর কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত শুনে মুগ্ধ হয়ে জিনদের ইসলাম গ্রহণ করার ঘটনা এবং সমাজে প্রচলিত জিনদের ব্যাপারে ভ্রান্ত ধারণা সংশোধন করা হয়েছে। সুরার শেষাংশে আল্লাহ তাআলার বক্তব্যের মাধ্যমে রাসুল (সা.)-এর ব্যক্তিত্বের অসাধারণ যে দৃশ্য অঙ্কিত করা হয়েছে, তা প্রত্যেক পাঠককে রাসুলপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। এ সুরার সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিম্নরূপ—জিনদের ইসলাম গ্রহণ

জিন মহান আল্লাহর এক আশ্চর্য সৃষ্টি। ওরা মানুষের মতো নারী-পুরুষ এবং ভালো-মন্দ উভয় শ্রেণিতে বিভক্ত।

রাসুল (সা.)-এর নবুয়ত লাভের আগে জিনরা আসমানের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পেত। সেখানকার খবরাখবর গণকদের কাছে সরবরাহ করত। কিন্তু কোরআন হিফাজতের উদ্দেশ্যে সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন শয়তানরা চিন্তিত হয়ে কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়ে।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) একদল সাহাবি নিয়ে উকাজ বাজারের উদ্দেশে রওনা হলেন। এ সময় জিনদের আসমানি খবর শোনার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে এবং ছুড়ে মারা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে লেলিহান অগ্নিশিখা। ফলে জিন শয়তানরা ফিরে এলে অন্য জিনরা তাদের বলল, তোমাদের কী হয়েছে? তারা বলল, আসমানি খবর শোনার ব্যাপারে আমাদের ওপর বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ছুড়ে মারা হয়েছে আমাদের প্রতি লেলিহান অগ্নিশিখা। তখন শয়তান বলল, আসমানের খবর শোনার ব্যাপারে তোমাদের ওপর যে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে অবশ্যই তা নতুন ঘটনা ঘটার কারণেই হয়েছে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত সফর করো এবং দেখো ব্যাপারটা কী ঘটেছে?

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যারা হিতামার উদ্দেশে বেরিয়েছিল তারা নাখলা নামক স্থানে রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে উপস্থিত হলো।

  রাসুল (সা.) এখান থেকে উকাজ বাজারের দিকে যাওয়ার জন্য মনস্থ করছিলেন। এ সময় রাসুল (সা.) সাহাবিদের নিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন। জিনদের ওই দল কোরআন শুনতে পেয়ে আরো বেশি মনোযোগ সহকারে তা শুনতে লাগল এবং বলতে লাগল আসমানি খবরা এবং তোমাদের মধ্যে এটাই মূলত বাধা সৃষ্টি করেছে। এরপর তারা তাদের কওমের কাছে ফিরে এসে বলল, হে আমাদের জাতি! আমরা এক বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি,যা সঠিক পথ নির্দেশ করে। এতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের কোনো শরিক স্থির করব না। এরপর আল্লাহ তাঁর রাসুল (সা.)-এর প্রতি নাজিল করলেন, বলুন! আপনার প্রতি ওহি প্রেরিত হয়েছে যে জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেছে। জিনদের উপরোক্ত কথা রাসুল (সা.)-কে ওহির মারফত জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। (বুখারি, হাদিস : ৪৫৬০; মুসলিম, হাদিস : ৮৯০)জিনদের উৎপাত যেভাবে শুরু হয়

ইবনে আবি হাতিম (রহ.) ইকরিমা (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, একসময় জিনরা মানুষকে ভয় করত, বরং অনেক বেশি ভয় করত। যেমন মানুষ জিনদের এখন ভয় করে। লোকেরা যখন পাহাড়-পর্বত আরোহণ করত জিনরা তখন তাদের দেখে পালিয়ে যেত। কিন্তু একটি সময়ে মানুষের দলপতি পাহাড়ে উঠে বলত, এই এলাকার বাসিন্দাদের দলপতির কাছে আমরা আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তখন জিনরা বলতে লাগল, আমরা তো লক্ষ করছি যে আমরা যাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াই তারাই তো আমাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এরপর জিনরা আস্তে আস্তে মানুষের কাছে আসতে শুরু করল এবং তাদের মস্তিষ্ক বিকৃত ও পাগলামিতে জড়িয়ে ফেলতে লাগল। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘এবং মানুষদের মধ্যে কিছু লোক জিনদের কিছু লোকের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করত। এভাবে তারা জিনদের আরো বেশি আত্মম্ভরী করে তুলেছিল।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ৬)

কাতাদাহ (রহ.) বলেন, মানুষ যখন আল্লাহকে বাদ দিয়ে জিনদের কাছে আশ্রয় যাওয়া শুরু করে তখন থেকে জিনদের সাহস বেড়ে গেল। কারণ তারা মনে করল যে মানুষ তাদের ভয় করে। সুতরাং তারা নানা প্রকারে মানুষকে ভয় দেখাতে, কষ্ট দিতে ও উত্পীড়ন করতে লাগল। (তাফসিরে তাবারি : ২৩/৬৫৫, তাফসির ইবনে কাসির : ১৭/৬৮৮)

জিন কাকে কখন আছর বা ভর করে

দুষ্টু জিনরা নানা কারণে বিভিন্ন সময় মানুষের ওপর আছর করে। তবে সাধারণত পাঁচটি অবস্থায় মানুষের ওপর বেশি আছর করে থাকে। এক. ভীতসন্ত্রস্ত থাকলে। দুই. অত্যধিক রাগান্বিত থাকলে। তিন. উদাসীন অবস্থায় থাকলে। চার. কোনো গোনাহে লিপ্ত থাকলে। পাঁচ. বেশিক্ষণ অপবিত্র থাকলে। কোরআনে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্য এক শয়তান নিযুক্ত করে দিই। এরপর সে হয় তার সঙ্গী। আর তারাই মানুষকে সত্পথে চলতে বাধা দেয়, কিন্তু মানুষ মনে করে সে হিদায়াতের পথে আছে।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৩৬-৩৭)

জিন ও শয়তান একই গোত্রভুক্ত। শয়তানের মতো তারাও সহজে মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

জিনের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে কোরআনের আমল

প্রসিদ্ধ বেশ কিছু রুকইয়ার কিতাবে সুরা জিনের বিভিন্ন আমল বর্ণিত হয়েছে। যার কার্যকারিতা পরীক্ষিত। জিনের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কোরআনে অনেক আমল রয়েছে। খুব সহজ একটি আমল হলো নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। হাসান ইবনে আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে সে পরবর্তী নামাজ পর্যন্ত আল্লাহর হিফাজতে থাকে। (তাবারানি কাবির, হাদিস : ২৬৬৭)

আরেকটি আমল দৈনিক সকাল-সন্ধ্যায় তিন কুল পাঠ করা। আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা এক বৃষ্টিমুখর অন্ধকার রাতে আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে খুঁজতে বের হলাম। যেন তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন। অতঃপর নবীজির সঙ্গে দেখা হলো। তিনি বলেন, তুমি কুল পাঠ করো। আমি বললাম কী পাঠ করব? তখন রাসুল (সা.)বললেন, কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আউজু বিরাব্বিন্নাস প্রত্যহ সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়বে। এ সুরাগুলো সব কিছু থেকে তোমার হিফাজতের জন্য যথেষ্ট হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯৬; তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৭৫)

রাতে নিরাপত্তা লাভের আমল

দিনের চেয়ে রাতে জিনরা বেশি ডিস্টার্ব করে থাকে। তাই রাতে নিরাপদ থাকার জন্য তিনটি আমল করার কথা রয়েছে—

এক. সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করা।‌ রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ আয়াত পড়বে, ওই ব্যক্তির জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে।‌ অর্থাৎ জিনের ক্ষতি, মানুষের ক্ষতি, সব পেরেশানি ও মুসিবত থেকে হিফাজতের জন্য যথেষ্ট হবে। (বুখারি, হাদিস : ৪০০৮; মুসলিম, হাদিস : ১৮৭৮)

দুই. ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করে দেবেন এবং কোনো পুরুষ ও নারী জিন শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না। (বুখারি, হাদিস : ৫০১০)

তিন. তিন কুলের আমল করা। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) প্রতি রাতে যখন শয্যায় আশ্রয় নিতেন তখন তাঁর দুই অঞ্জলি একত্র করে তাতে ফুঁ দিতেন। সে সময় কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আউজু বিরাব্বিন্নাস পাঠ করতেন। তারপর উভয় হাতে যথাসম্ভব দেহে মাসেহ করতেন। মাথা, চেহারা ও শরীরের সামনের দিক থেকে তিনি তা শুরু করতেন। এভাবে তিনি তিনবার করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)

উপরোক্ত আমল করার পরও কারো কোনো সমস্যা দেখা দিলে শরিয়তসম্মত রুকইয়াকারীর শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে জিনদের সাক্ষাত হয়েছিল যেভাবে

আপডেট টাইম : ১১:১৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
পবিত্র কোরআনের ৭২ নম্বর সুরা জিন। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ২৮। এ সুরার প্রথম আয়াতের জিন শব্দ থেকে সুরাটির নাম করা হয়েছে।

আলোচ্য সুরায় রাসুল (সা.)-এর সুমধুর কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত শুনে মুগ্ধ হয়ে জিনদের ইসলাম গ্রহণ করার ঘটনা এবং সমাজে প্রচলিত জিনদের ব্যাপারে ভ্রান্ত ধারণা সংশোধন করা হয়েছে। সুরার শেষাংশে আল্লাহ তাআলার বক্তব্যের মাধ্যমে রাসুল (সা.)-এর ব্যক্তিত্বের অসাধারণ যে দৃশ্য অঙ্কিত করা হয়েছে, তা প্রত্যেক পাঠককে রাসুলপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। এ সুরার সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিম্নরূপ—জিনদের ইসলাম গ্রহণ

জিন মহান আল্লাহর এক আশ্চর্য সৃষ্টি। ওরা মানুষের মতো নারী-পুরুষ এবং ভালো-মন্দ উভয় শ্রেণিতে বিভক্ত।

রাসুল (সা.)-এর নবুয়ত লাভের আগে জিনরা আসমানের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পেত। সেখানকার খবরাখবর গণকদের কাছে সরবরাহ করত। কিন্তু কোরআন হিফাজতের উদ্দেশ্যে সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন শয়তানরা চিন্তিত হয়ে কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়ে।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) একদল সাহাবি নিয়ে উকাজ বাজারের উদ্দেশে রওনা হলেন। এ সময় জিনদের আসমানি খবর শোনার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে এবং ছুড়ে মারা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে লেলিহান অগ্নিশিখা। ফলে জিন শয়তানরা ফিরে এলে অন্য জিনরা তাদের বলল, তোমাদের কী হয়েছে? তারা বলল, আসমানি খবর শোনার ব্যাপারে আমাদের ওপর বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ছুড়ে মারা হয়েছে আমাদের প্রতি লেলিহান অগ্নিশিখা। তখন শয়তান বলল, আসমানের খবর শোনার ব্যাপারে তোমাদের ওপর যে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে অবশ্যই তা নতুন ঘটনা ঘটার কারণেই হয়েছে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত সফর করো এবং দেখো ব্যাপারটা কী ঘটেছে?

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যারা হিতামার উদ্দেশে বেরিয়েছিল তারা নাখলা নামক স্থানে রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে উপস্থিত হলো।

  রাসুল (সা.) এখান থেকে উকাজ বাজারের দিকে যাওয়ার জন্য মনস্থ করছিলেন। এ সময় রাসুল (সা.) সাহাবিদের নিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন। জিনদের ওই দল কোরআন শুনতে পেয়ে আরো বেশি মনোযোগ সহকারে তা শুনতে লাগল এবং বলতে লাগল আসমানি খবরা এবং তোমাদের মধ্যে এটাই মূলত বাধা সৃষ্টি করেছে। এরপর তারা তাদের কওমের কাছে ফিরে এসে বলল, হে আমাদের জাতি! আমরা এক বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি,যা সঠিক পথ নির্দেশ করে। এতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের কোনো শরিক স্থির করব না। এরপর আল্লাহ তাঁর রাসুল (সা.)-এর প্রতি নাজিল করলেন, বলুন! আপনার প্রতি ওহি প্রেরিত হয়েছে যে জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেছে। জিনদের উপরোক্ত কথা রাসুল (সা.)-কে ওহির মারফত জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। (বুখারি, হাদিস : ৪৫৬০; মুসলিম, হাদিস : ৮৯০)জিনদের উৎপাত যেভাবে শুরু হয়

ইবনে আবি হাতিম (রহ.) ইকরিমা (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, একসময় জিনরা মানুষকে ভয় করত, বরং অনেক বেশি ভয় করত। যেমন মানুষ জিনদের এখন ভয় করে। লোকেরা যখন পাহাড়-পর্বত আরোহণ করত জিনরা তখন তাদের দেখে পালিয়ে যেত। কিন্তু একটি সময়ে মানুষের দলপতি পাহাড়ে উঠে বলত, এই এলাকার বাসিন্দাদের দলপতির কাছে আমরা আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তখন জিনরা বলতে লাগল, আমরা তো লক্ষ করছি যে আমরা যাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াই তারাই তো আমাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এরপর জিনরা আস্তে আস্তে মানুষের কাছে আসতে শুরু করল এবং তাদের মস্তিষ্ক বিকৃত ও পাগলামিতে জড়িয়ে ফেলতে লাগল। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘এবং মানুষদের মধ্যে কিছু লোক জিনদের কিছু লোকের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করত। এভাবে তারা জিনদের আরো বেশি আত্মম্ভরী করে তুলেছিল।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ৬)

কাতাদাহ (রহ.) বলেন, মানুষ যখন আল্লাহকে বাদ দিয়ে জিনদের কাছে আশ্রয় যাওয়া শুরু করে তখন থেকে জিনদের সাহস বেড়ে গেল। কারণ তারা মনে করল যে মানুষ তাদের ভয় করে। সুতরাং তারা নানা প্রকারে মানুষকে ভয় দেখাতে, কষ্ট দিতে ও উত্পীড়ন করতে লাগল। (তাফসিরে তাবারি : ২৩/৬৫৫, তাফসির ইবনে কাসির : ১৭/৬৮৮)

জিন কাকে কখন আছর বা ভর করে

দুষ্টু জিনরা নানা কারণে বিভিন্ন সময় মানুষের ওপর আছর করে। তবে সাধারণত পাঁচটি অবস্থায় মানুষের ওপর বেশি আছর করে থাকে। এক. ভীতসন্ত্রস্ত থাকলে। দুই. অত্যধিক রাগান্বিত থাকলে। তিন. উদাসীন অবস্থায় থাকলে। চার. কোনো গোনাহে লিপ্ত থাকলে। পাঁচ. বেশিক্ষণ অপবিত্র থাকলে। কোরআনে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্য এক শয়তান নিযুক্ত করে দিই। এরপর সে হয় তার সঙ্গী। আর তারাই মানুষকে সত্পথে চলতে বাধা দেয়, কিন্তু মানুষ মনে করে সে হিদায়াতের পথে আছে।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৩৬-৩৭)

জিন ও শয়তান একই গোত্রভুক্ত। শয়তানের মতো তারাও সহজে মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

জিনের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে কোরআনের আমল

প্রসিদ্ধ বেশ কিছু রুকইয়ার কিতাবে সুরা জিনের বিভিন্ন আমল বর্ণিত হয়েছে। যার কার্যকারিতা পরীক্ষিত। জিনের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কোরআনে অনেক আমল রয়েছে। খুব সহজ একটি আমল হলো নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। হাসান ইবনে আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে সে পরবর্তী নামাজ পর্যন্ত আল্লাহর হিফাজতে থাকে। (তাবারানি কাবির, হাদিস : ২৬৬৭)

আরেকটি আমল দৈনিক সকাল-সন্ধ্যায় তিন কুল পাঠ করা। আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা এক বৃষ্টিমুখর অন্ধকার রাতে আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে খুঁজতে বের হলাম। যেন তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন। অতঃপর নবীজির সঙ্গে দেখা হলো। তিনি বলেন, তুমি কুল পাঠ করো। আমি বললাম কী পাঠ করব? তখন রাসুল (সা.)বললেন, কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আউজু বিরাব্বিন্নাস প্রত্যহ সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়বে। এ সুরাগুলো সব কিছু থেকে তোমার হিফাজতের জন্য যথেষ্ট হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯৬; তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৭৫)

রাতে নিরাপত্তা লাভের আমল

দিনের চেয়ে রাতে জিনরা বেশি ডিস্টার্ব করে থাকে। তাই রাতে নিরাপদ থাকার জন্য তিনটি আমল করার কথা রয়েছে—

এক. সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করা।‌ রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ আয়াত পড়বে, ওই ব্যক্তির জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে।‌ অর্থাৎ জিনের ক্ষতি, মানুষের ক্ষতি, সব পেরেশানি ও মুসিবত থেকে হিফাজতের জন্য যথেষ্ট হবে। (বুখারি, হাদিস : ৪০০৮; মুসলিম, হাদিস : ১৮৭৮)

দুই. ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করে দেবেন এবং কোনো পুরুষ ও নারী জিন শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না। (বুখারি, হাদিস : ৫০১০)

তিন. তিন কুলের আমল করা। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) প্রতি রাতে যখন শয্যায় আশ্রয় নিতেন তখন তাঁর দুই অঞ্জলি একত্র করে তাতে ফুঁ দিতেন। সে সময় কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আউজু বিরাব্বিন্নাস পাঠ করতেন। তারপর উভয় হাতে যথাসম্ভব দেহে মাসেহ করতেন। মাথা, চেহারা ও শরীরের সামনের দিক থেকে তিনি তা শুরু করতেন। এভাবে তিনি তিনবার করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)

উপরোক্ত আমল করার পরও কারো কোনো সমস্যা দেখা দিলে শরিয়তসম্মত রুকইয়াকারীর শরণাপন্ন হওয়া উচিত।