জিন মহান আল্লাহর এক আশ্চর্য সৃষ্টি। ওরা মানুষের মতো নারী-পুরুষ এবং ভালো-মন্দ উভয় শ্রেণিতে বিভক্ত।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যারা হিতামার উদ্দেশে বেরিয়েছিল তারা নাখলা নামক স্থানে রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে উপস্থিত হলো।
ইবনে আবি হাতিম (রহ.) ইকরিমা (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, একসময় জিনরা মানুষকে ভয় করত, বরং অনেক বেশি ভয় করত। যেমন মানুষ জিনদের এখন ভয় করে। লোকেরা যখন পাহাড়-পর্বত আরোহণ করত জিনরা তখন তাদের দেখে পালিয়ে যেত। কিন্তু একটি সময়ে মানুষের দলপতি পাহাড়ে উঠে বলত, এই এলাকার বাসিন্দাদের দলপতির কাছে আমরা আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তখন জিনরা বলতে লাগল, আমরা তো লক্ষ করছি যে আমরা যাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াই তারাই তো আমাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এরপর জিনরা আস্তে আস্তে মানুষের কাছে আসতে শুরু করল এবং তাদের মস্তিষ্ক বিকৃত ও পাগলামিতে জড়িয়ে ফেলতে লাগল। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘এবং মানুষদের মধ্যে কিছু লোক জিনদের কিছু লোকের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করত। এভাবে তারা জিনদের আরো বেশি আত্মম্ভরী করে তুলেছিল।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ৬)
কাতাদাহ (রহ.) বলেন, মানুষ যখন আল্লাহকে বাদ দিয়ে জিনদের কাছে আশ্রয় যাওয়া শুরু করে তখন থেকে জিনদের সাহস বেড়ে গেল। কারণ তারা মনে করল যে মানুষ তাদের ভয় করে। সুতরাং তারা নানা প্রকারে মানুষকে ভয় দেখাতে, কষ্ট দিতে ও উত্পীড়ন করতে লাগল। (তাফসিরে তাবারি : ২৩/৬৫৫, তাফসির ইবনে কাসির : ১৭/৬৮৮)
জিন কাকে কখন আছর বা ভর করে
দুষ্টু জিনরা নানা কারণে বিভিন্ন সময় মানুষের ওপর আছর করে। তবে সাধারণত পাঁচটি অবস্থায় মানুষের ওপর বেশি আছর করে থাকে। এক. ভীতসন্ত্রস্ত থাকলে। দুই. অত্যধিক রাগান্বিত থাকলে। তিন. উদাসীন অবস্থায় থাকলে। চার. কোনো গোনাহে লিপ্ত থাকলে। পাঁচ. বেশিক্ষণ অপবিত্র থাকলে। কোরআনে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্য এক শয়তান নিযুক্ত করে দিই। এরপর সে হয় তার সঙ্গী। আর তারাই মানুষকে সত্পথে চলতে বাধা দেয়, কিন্তু মানুষ মনে করে সে হিদায়াতের পথে আছে।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৩৬-৩৭)
জিন ও শয়তান একই গোত্রভুক্ত। শয়তানের মতো তারাও সহজে মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
জিনের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে কোরআনের আমল
প্রসিদ্ধ বেশ কিছু রুকইয়ার কিতাবে সুরা জিনের বিভিন্ন আমল বর্ণিত হয়েছে। যার কার্যকারিতা পরীক্ষিত। জিনের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কোরআনে অনেক আমল রয়েছে। খুব সহজ একটি আমল হলো নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। হাসান ইবনে আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে সে পরবর্তী নামাজ পর্যন্ত আল্লাহর হিফাজতে থাকে। (তাবারানি কাবির, হাদিস : ২৬৬৭)
আরেকটি আমল দৈনিক সকাল-সন্ধ্যায় তিন কুল পাঠ করা। আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা এক বৃষ্টিমুখর অন্ধকার রাতে আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে খুঁজতে বের হলাম। যেন তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন। অতঃপর নবীজির সঙ্গে দেখা হলো। তিনি বলেন, তুমি কুল পাঠ করো। আমি বললাম কী পাঠ করব? তখন রাসুল (সা.)বললেন, কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আউজু বিরাব্বিন্নাস প্রত্যহ সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়বে। এ সুরাগুলো সব কিছু থেকে তোমার হিফাজতের জন্য যথেষ্ট হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯৬; তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৭৫)
রাতে নিরাপত্তা লাভের আমল
দিনের চেয়ে রাতে জিনরা বেশি ডিস্টার্ব করে থাকে। তাই রাতে নিরাপদ থাকার জন্য তিনটি আমল করার কথা রয়েছে—
এক. সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ আয়াত পড়বে, ওই ব্যক্তির জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ জিনের ক্ষতি, মানুষের ক্ষতি, সব পেরেশানি ও মুসিবত থেকে হিফাজতের জন্য যথেষ্ট হবে। (বুখারি, হাদিস : ৪০০৮; মুসলিম, হাদিস : ১৮৭৮)
দুই. ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করে দেবেন এবং কোনো পুরুষ ও নারী জিন শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না। (বুখারি, হাদিস : ৫০১০)
তিন. তিন কুলের আমল করা। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) প্রতি রাতে যখন শয্যায় আশ্রয় নিতেন তখন তাঁর দুই অঞ্জলি একত্র করে তাতে ফুঁ দিতেন। সে সময় কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আউজু বিরাব্বিন্নাস পাঠ করতেন। তারপর উভয় হাতে যথাসম্ভব দেহে মাসেহ করতেন। মাথা, চেহারা ও শরীরের সামনের দিক থেকে তিনি তা শুরু করতেন। এভাবে তিনি তিনবার করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)
উপরোক্ত আমল করার পরও কারো কোনো সমস্যা দেখা দিলে শরিয়তসম্মত রুকইয়াকারীর শরণাপন্ন হওয়া উচিত।