ঢাকা ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধানের দাম কম উৎপাদন খরচ ফেরত পাঁচ্ছে না চাষীরা, ক্ষতির মুখে কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৮:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩
  • ৭২ বার

হাটবাজারে উঠতে শুরু করেছে আমন ধান। জমে উঠছে বেচাকেনা। কিন্তু ফলন ভালো হলেও কৃষকদের মুখে হাসি নেই। বাজারে ধানের দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচ ফেরত পাঁচ্ছে না চাষীরা। সাথে যোগ হয়েছে হরতাল অবরোধ এতে বেড়েছে পরিবহন খরচ। সব মিলিয়ে দিশে হারা কৃষকরা। এ বছর উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কম দামে ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচই ঘরে তুলতে পারছেনা কৃষকরা। তবে ধান কাঁটার সময় খুচরা পর্যায়ে ধানের দাম বেড়েছে। ধানের দাম কম থাকায় কৃষকদের উপর প্রভাব ফেলছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফসল আমন দান, যা বৃষ্টিনির্ভর। এই মৌসুমে মারাত্মক খরা এবং কম বৃষ্টিপাতের কারনে কৃষকদের সেচের উপর নির্ভর করতে হয়েছে, এতে খরচ বেড়েছে অনেকটা। এ ছাড়া সারের দাম এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ। দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষকরা আমন ধানের আবাদ করেছেন এবং ৪০% কাটা শেষ হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, লক্ষ্মীপুরবগুড়া, রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আমন ধান প্রতি মণ (৪০ কেজি) ৯০০-৯৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২০২২ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ফসল কাঁটার সময় প্রতি মণ আমন ধানের দাম ছিল ১,২০০-১,৩৫০ টাকা। গত বছর আমন ধানের উৎপাদন খরচ ছিল প্রতি কেজি ২৫ টাকা, যা এ বছর ২৮ টাকা বেড়েছে বলে সূত্র জানায়। তাই কৃষকের কাছে ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২২.৫-২৪.৫ টাকা যা উৎপাদন খরচের তুলনায় ৩.৫-৫.৫ টাকা কম। কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এএসএম গোলাম হাফিজ বলেন, ধানের দাম কম হওয়ায় চাষিরা ব্যাপক লোকসান গুনছেন, দীর্ঘমেয়াদে ধান উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছেন। তিনি বলেন, “কৃষকরা তাদের ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং মিলার ও ব্যবসায়ীরা ধানের দাম বাড়াচ্ছে। বগুড়ার ধানচাষি আবির হোসেন জানান, নতুন কাটা আমন ধান প্রতি মণ ৯০০ থেকে ৯৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দামে বিক্রি করলে উৎপাদন খরচও তুলতে পারবেন না বলে জানান তিনি। সারাদেশের বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, বোরো মৌসুমে লোকসানের মুখে তারা বিকল্প পণ্য চাষ করছেন। তারা বোরো ধানের পরিবর্তে গম, ভুট্টা, সবজি ও অন্যান্য অর্থকরী ফসল চাষ করছে। এদিকে, পিক কাঁটার মৌসুমে খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) অনুসারে এক মাসে উন্নত মানের চালের দাম বেড়েছে ৩.৭৯%, মাঝারি মানের একের দাম ২.৮০% এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে ২%। প্রচুর পরিমাণ আমন ধান কাটা হচ্ছে এবং বাজারে প্রচুর ফলন এসেছে, যা চালের দাম কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে রাজধানীসহ সারাদেশে চালের খুচরা দামে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। ঝিনাইদহের কৃষক মন্টু বলেন, আমরা সেচ দিয়ে আমন ধান উৎপাদন করেছি। এ বছর সার ও শ্রমিকের খরচ বেশি ছিল। এজন্য বিগত বছরের তুলনায় এবার আমন উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় দাম কম।” তিনি বলেন, মিলাররা আগের মজুদ থাকায় পুরোদমে ধান কিনছেন না, যার কারণে তারা কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া অবরোধ ও হরতালের কারণে ট্রাক না থাকায় তারা ধান বিক্রি করতে পারছেন না বলে জানান তিনি। চলতি আমন মৌসুমে ৫৯.৩৩৫ লাখ হেক্টর জমি থেকে ১.৭২ কোটি টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। তবে, কৃষকরা এ বছর একর পরিমাণ ছাড়িয়েছে, যার ফলে ধানের উৎপাদন বাড়বে বলে জানিয়েছেন ডিএই কর্মকর্তারা। মাগুরা কৃষি ও প্রকৃতিবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা পল্লী প্রকৃতির নির্বাহীর একজন পরিচালক বলেন, ‘ধানের বাম্পার উৎপাদন হলে বাজারে এর মূল্য কম হতে পারে। এই মুহূর্তে একমাত্র সরকারি নিয়ন্ত্রণই পারে কৃষকের স্বার্থরক্ষা করতে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ধানের দাম কম উৎপাদন খরচ ফেরত পাঁচ্ছে না চাষীরা, ক্ষতির মুখে কৃষক

আপডেট টাইম : ১১:৫৮:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

হাটবাজারে উঠতে শুরু করেছে আমন ধান। জমে উঠছে বেচাকেনা। কিন্তু ফলন ভালো হলেও কৃষকদের মুখে হাসি নেই। বাজারে ধানের দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচ ফেরত পাঁচ্ছে না চাষীরা। সাথে যোগ হয়েছে হরতাল অবরোধ এতে বেড়েছে পরিবহন খরচ। সব মিলিয়ে দিশে হারা কৃষকরা। এ বছর উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কম দামে ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচই ঘরে তুলতে পারছেনা কৃষকরা। তবে ধান কাঁটার সময় খুচরা পর্যায়ে ধানের দাম বেড়েছে। ধানের দাম কম থাকায় কৃষকদের উপর প্রভাব ফেলছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফসল আমন দান, যা বৃষ্টিনির্ভর। এই মৌসুমে মারাত্মক খরা এবং কম বৃষ্টিপাতের কারনে কৃষকদের সেচের উপর নির্ভর করতে হয়েছে, এতে খরচ বেড়েছে অনেকটা। এ ছাড়া সারের দাম এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ। দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষকরা আমন ধানের আবাদ করেছেন এবং ৪০% কাটা শেষ হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, লক্ষ্মীপুরবগুড়া, রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আমন ধান প্রতি মণ (৪০ কেজি) ৯০০-৯৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২০২২ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ফসল কাঁটার সময় প্রতি মণ আমন ধানের দাম ছিল ১,২০০-১,৩৫০ টাকা। গত বছর আমন ধানের উৎপাদন খরচ ছিল প্রতি কেজি ২৫ টাকা, যা এ বছর ২৮ টাকা বেড়েছে বলে সূত্র জানায়। তাই কৃষকের কাছে ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২২.৫-২৪.৫ টাকা যা উৎপাদন খরচের তুলনায় ৩.৫-৫.৫ টাকা কম। কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এএসএম গোলাম হাফিজ বলেন, ধানের দাম কম হওয়ায় চাষিরা ব্যাপক লোকসান গুনছেন, দীর্ঘমেয়াদে ধান উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছেন। তিনি বলেন, “কৃষকরা তাদের ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং মিলার ও ব্যবসায়ীরা ধানের দাম বাড়াচ্ছে। বগুড়ার ধানচাষি আবির হোসেন জানান, নতুন কাটা আমন ধান প্রতি মণ ৯০০ থেকে ৯৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দামে বিক্রি করলে উৎপাদন খরচও তুলতে পারবেন না বলে জানান তিনি। সারাদেশের বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, বোরো মৌসুমে লোকসানের মুখে তারা বিকল্প পণ্য চাষ করছেন। তারা বোরো ধানের পরিবর্তে গম, ভুট্টা, সবজি ও অন্যান্য অর্থকরী ফসল চাষ করছে। এদিকে, পিক কাঁটার মৌসুমে খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) অনুসারে এক মাসে উন্নত মানের চালের দাম বেড়েছে ৩.৭৯%, মাঝারি মানের একের দাম ২.৮০% এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে ২%। প্রচুর পরিমাণ আমন ধান কাটা হচ্ছে এবং বাজারে প্রচুর ফলন এসেছে, যা চালের দাম কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে রাজধানীসহ সারাদেশে চালের খুচরা দামে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। ঝিনাইদহের কৃষক মন্টু বলেন, আমরা সেচ দিয়ে আমন ধান উৎপাদন করেছি। এ বছর সার ও শ্রমিকের খরচ বেশি ছিল। এজন্য বিগত বছরের তুলনায় এবার আমন উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় দাম কম।” তিনি বলেন, মিলাররা আগের মজুদ থাকায় পুরোদমে ধান কিনছেন না, যার কারণে তারা কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া অবরোধ ও হরতালের কারণে ট্রাক না থাকায় তারা ধান বিক্রি করতে পারছেন না বলে জানান তিনি। চলতি আমন মৌসুমে ৫৯.৩৩৫ লাখ হেক্টর জমি থেকে ১.৭২ কোটি টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। তবে, কৃষকরা এ বছর একর পরিমাণ ছাড়িয়েছে, যার ফলে ধানের উৎপাদন বাড়বে বলে জানিয়েছেন ডিএই কর্মকর্তারা। মাগুরা কৃষি ও প্রকৃতিবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা পল্লী প্রকৃতির নির্বাহীর একজন পরিচালক বলেন, ‘ধানের বাম্পার উৎপাদন হলে বাজারে এর মূল্য কম হতে পারে। এই মুহূর্তে একমাত্র সরকারি নিয়ন্ত্রণই পারে কৃষকের স্বার্থরক্ষা করতে।’