লাগামহীন গতিতে ছুটছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। সপ্তাহঘুরেই কেজি প্রতি ৩০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। অপরদিকে সরকার নির্ধারিত দামের দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আলু। এদিকে বাজারে কয়েকটি সবজির দাম কমেছে গত সপ্তাহের চেয়ে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
খুচরা বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছিল সবজি। এরমধ্যে গত সপ্তাহটা হরতাল, অবরোধে কেটেছে, যে কারণে ক্রেতাদের শঙ্কা ছিল বাজারের সবজির দাম আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। তবে সেটা হয়নি বরং গত সপ্তাহের তুলনায় কয়েকটি সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে।এরমধ্যে পটল, ঢেঁড়স, বরবটির দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা কমে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় নেমেছে। এ ছাড়া বাজারে প্রতি কেজি বেগুন, বরবটি, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, উস্তা ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা একশো টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা দরে বিক্রির কথা থাকলেও সে নির্দেশনা উপেক্ষা করে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও সপ্তাহঘুরে তা এখন ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে গত সপ্তাহে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজ ১০ টাকা বেড়ে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা পর্যায়ে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সরকারের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতি কেজি আলু ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে প্রতি পিস ডিম ১৪ টাকা দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে পিসপ্রতি দুই টাকা কমিয়ে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজারে আলু-পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিক্রেতা মোশাররফ মিয়া বলেন, আমাদের করার কিছুই নেই। আড়ত থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনে আনি। পরিবহন ও মুনাফা মিলিয়ে এই পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হয়। দেশি পেঁয়াজের ঝাঝ আরও বেশি। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে পাইকারি কিনে সব খরচ ও লাভ মিলিয়ে ১৩০ টাকায় বিক্রি করি।
তিনি বলেন, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে আড়ত মালিকরা। তারাই ইচ্ছামাফিক দাম বাড়ায়। তাদের থেকে বেশি দামে কিনে আমাদেরও বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। এদিকে ক্রেতারা সেই পেঁয়াজ কিংবা আলু কিনতে সক্ষম কি না সেটা আমলে নেয়া হয় না। আগে পেঁয়াজের দাম কম থাকায় প্রতিদিন দুই থেকে তিন বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি করতাম। পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকা থাকায় ক্রেতারা একসঙ্গে ৫ কেজি ১০ কেজি পেঁয়াজ কিনতেন। কিন্তু এখন তারা এসে বলেন ২০ টাকার পেঁয়াজ দেন, ৩০ টাকার পেঁয়াজ দেন!
বাজার করতে আসা ফাতেমা বেগম বলেন, সবকিছুরই দাম বাড়ছে। আমরা কিছুই কিনতে পারছি না। সবকিছুর দাম বাড়ল, আমাদের আয় তো বাড়েনি। আমার স্বামী আগে যেমন ৪০০ টাকা রোজ আয় করতো এখনও তাই করে। অনেক জিনিস প্রয়োজন থাকার পরও কিনতে পারি না। সরকার প্রধানের কাছে অনুরোধ থাকবে জিনিসপত্রের দাম কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
বাজার করতে আসা বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জুবায়ের আহমেদ বলেন, সবকিছুতেই আগুন। কিনে খাবার মতো কিছুই নেই। আলু, পেঁয়াজ, ডিম, মরিচ কিছুই সাধ্যের মধ্যে আর নেই৷ আগে তো একসাথে ২০-৩০ কেজি পেঁয়াজ কিনে রাখতাম। এখন এক থেকে দুই কেজির বেশি কিনতে পারি না। প্রতি সপ্তাহে দাম বাড়ছে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণহীন। মানুষ ভালো নেই।