ঢাকা ০৮:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউরোপে প্রাণিজ ফ্যাট দিয়ে বিমানের জ্বালানি তৈরির উদ্যোগ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪২:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৩
  • ৮১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পরিবেশ দূষণ কমাতে বিকল্প জ্বালানির সন্ধান সঠিক পদক্ষেপ৷ কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সেই সীমিত বিকল্পের সন্ধান নতুন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে৷ ইউরোপে বিমানের জ্বালানিতে প্রাণিজ ফ্যাট ব্যবহার করতে গিয়ে এমন হয়েছে৷

বিমানের ট্যাংকে প্রায় ৯,০০০ মৃত শুকর ভরে প্যারিস থেকে নিউ ইয়র্ক উড়ে যাওয়া কি সম্ভব? এক পরিবেশ সংরক্ষণের হিসেব অনুযায়ী কাগজেকলমে সেটা অবশ্যই সম্ভব৷ কারণ এই প্রাণীর শরীরে অনেক মেদ রয়েছে, যা দিয়ে বিমানের জ্বালানি তৈরি করা যেতে পারে৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নও বিমানের জ্বালানির ট্যাংকে দ্রুত পশুর মেদ দেখতে চায়৷ ফুয়েল্সইউরোপ সংগঠনের কর্ণধার জন কুপার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘আমরা প্রাণীর মেদ ব্যবহার করি, কারণ কম মানের অ্যানিমাল ফ্যাট সহজেই টেকসই এভিয়েশন ফুয়েল বা ডিজেলে রূপান্তরিত করা যায়৷ সেই প্রক্রিয়ার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিতে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে আমরা প্রাণীর ফ্যাট ব্যবহার করতে পারছি৷”

রায়ানএয়ারের মতো কিছু বিমান সংস্থা প্রাণিজাত জ্বালানি যত দ্রুত সম্ভব কাজে লাগাতে চায়৷ তবে সেই লক্ষ্যে আলাদা করে পশু জবাই করার প্রয়োজন হবে না৷ জবাইয়ের সময়ে সৃষ্টি হওয়া বর্জ্য থেকেই ফ্যাট বার করে নেওয়া হবে৷ বিমানের প্রচলিত জ্বালানির মধ্যেই সেই ফ্যাট মেশানো হবে৷

কিন্তু এত বড় কর্মযজ্ঞের অর্থ কী? ইউরোপীয় পরিবহণ ও পরিবেশ সংগঠনের প্রতিনিধি বারবারা স্মাইলাজিচ বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিধির কারণে এভিয়েশন ক্ষেত্রে প্রাণিজ ফ্যাট ব্যবহারের চাহিদা বেড়েই চলেছে৷ সেই উৎসকেও টেকসই এভিয়েশন ফুয়েল হিসেবে গণ্য করা যায়৷”

বিমানের ট্যাংকে মৃত প্রাণী কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমাতে সাহায্য করে৷ ইউরোপে এই ক্ষেত্র এভাবে আরো পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠবে, এমনটা আশা করা হচ্ছে৷ তবে এতকাল প্রাণিজ ফ্যাটের অন্যান্য ব্যবহারকারীদের জন্য সেটা দুঃসংবাদ৷ যেমন কসমেটিক ও খাদ্য শিল্প৷ প্রাণিজ ফ্যাটের অভাব দেখা দেবে বলে এই শিল্পক্ষেত্র আশঙ্কা করছে৷ শুকর তো আর গাছে ফলে না!

ইউরোপীয় পরিবহণ ও পরিবেশ সংগঠনের প্রতিনিধি স্মাইলাজিচ বলেন, ‘‘সমস্যা হলো সেই ফ্যাট যত বেশি বায়োফুয়েল উৎপাদনের কাজে লাগানো হবে, এই শিল্পশাখাগুলিকে বিকল্প খুঁজতে ততটাই হয়রান হতে হবে৷ প্রায়ই বিকল্প হিসেবে ভেজিটেবল অয়েল, বিশেষ করে পাম অয়েল বেছে নিতে হয়৷ সেটাই সবচেয়ে সস্তার পথ এবং এর বৈশিষ্ট্যও প্রাণিজ ফ্যাটের মতো৷ কিন্তু তার ফলে আবার অরণ্য নিধন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য অনেক সমস্যা দেখা দেয়৷”

পরিবেশ সংরক্ষণকারীদের আশঙ্কা, পাম অয়েলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হয়ে উঠবে৷ আরো বেশি পাম অয়েল উৎপাদন করতে হলে প্লান্টেশনের আয়তন বাড়াতে হবে৷ তখন রেইন ফরেস্টে থাবা বসাতে হবে৷ ফুয়েল্সইউরোপ সংগঠনের কর্ণধার জন কুপার মনে করেন, ‘‘ইউরোপীয় কমিশন যে এই সমস্যা সম্পর্কে অবগত, সেটা মনে রাখতে হবে৷ এভিয়েশন রিফুয়েল সংক্রান্ত বিধিনিয়ম প্রস্তুত হচ্ছে৷ ইইউ-র নিয়ম অনুযায়ী টেকসই এভিয়েশন ফুয়েলে সর্বোচ্চ তিন শতাংশ প্রাণিজ ফ্যাট ব্যবহার করা যাবে৷”

ইউরোপীয় পরিবহণ ও পরিবেশ সংগঠনের বারবারা স্মাইলাজিচ বলেন, ‘‘আমাদের হিসেব অনুযায়ী এর ফলে বাড়তি আরো দশ লাখ টন প্রাণিজ ফ্যাটের প্রয়োজন পড়বে৷”

ইউরোপকে আরো পরিবেশবান্ধব করে তুলতে বিমানযাত্রা শেষ পর্যন্ত আরো কম করাই অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে৷

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউরোপে প্রাণিজ ফ্যাট দিয়ে বিমানের জ্বালানি তৈরির উদ্যোগ

আপডেট টাইম : ১০:৪২:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৩

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পরিবেশ দূষণ কমাতে বিকল্প জ্বালানির সন্ধান সঠিক পদক্ষেপ৷ কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সেই সীমিত বিকল্পের সন্ধান নতুন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে৷ ইউরোপে বিমানের জ্বালানিতে প্রাণিজ ফ্যাট ব্যবহার করতে গিয়ে এমন হয়েছে৷

বিমানের ট্যাংকে প্রায় ৯,০০০ মৃত শুকর ভরে প্যারিস থেকে নিউ ইয়র্ক উড়ে যাওয়া কি সম্ভব? এক পরিবেশ সংরক্ষণের হিসেব অনুযায়ী কাগজেকলমে সেটা অবশ্যই সম্ভব৷ কারণ এই প্রাণীর শরীরে অনেক মেদ রয়েছে, যা দিয়ে বিমানের জ্বালানি তৈরি করা যেতে পারে৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নও বিমানের জ্বালানির ট্যাংকে দ্রুত পশুর মেদ দেখতে চায়৷ ফুয়েল্সইউরোপ সংগঠনের কর্ণধার জন কুপার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘আমরা প্রাণীর মেদ ব্যবহার করি, কারণ কম মানের অ্যানিমাল ফ্যাট সহজেই টেকসই এভিয়েশন ফুয়েল বা ডিজেলে রূপান্তরিত করা যায়৷ সেই প্রক্রিয়ার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিতে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে আমরা প্রাণীর ফ্যাট ব্যবহার করতে পারছি৷”

রায়ানএয়ারের মতো কিছু বিমান সংস্থা প্রাণিজাত জ্বালানি যত দ্রুত সম্ভব কাজে লাগাতে চায়৷ তবে সেই লক্ষ্যে আলাদা করে পশু জবাই করার প্রয়োজন হবে না৷ জবাইয়ের সময়ে সৃষ্টি হওয়া বর্জ্য থেকেই ফ্যাট বার করে নেওয়া হবে৷ বিমানের প্রচলিত জ্বালানির মধ্যেই সেই ফ্যাট মেশানো হবে৷

কিন্তু এত বড় কর্মযজ্ঞের অর্থ কী? ইউরোপীয় পরিবহণ ও পরিবেশ সংগঠনের প্রতিনিধি বারবারা স্মাইলাজিচ বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিধির কারণে এভিয়েশন ক্ষেত্রে প্রাণিজ ফ্যাট ব্যবহারের চাহিদা বেড়েই চলেছে৷ সেই উৎসকেও টেকসই এভিয়েশন ফুয়েল হিসেবে গণ্য করা যায়৷”

বিমানের ট্যাংকে মৃত প্রাণী কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমাতে সাহায্য করে৷ ইউরোপে এই ক্ষেত্র এভাবে আরো পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠবে, এমনটা আশা করা হচ্ছে৷ তবে এতকাল প্রাণিজ ফ্যাটের অন্যান্য ব্যবহারকারীদের জন্য সেটা দুঃসংবাদ৷ যেমন কসমেটিক ও খাদ্য শিল্প৷ প্রাণিজ ফ্যাটের অভাব দেখা দেবে বলে এই শিল্পক্ষেত্র আশঙ্কা করছে৷ শুকর তো আর গাছে ফলে না!

ইউরোপীয় পরিবহণ ও পরিবেশ সংগঠনের প্রতিনিধি স্মাইলাজিচ বলেন, ‘‘সমস্যা হলো সেই ফ্যাট যত বেশি বায়োফুয়েল উৎপাদনের কাজে লাগানো হবে, এই শিল্পশাখাগুলিকে বিকল্প খুঁজতে ততটাই হয়রান হতে হবে৷ প্রায়ই বিকল্প হিসেবে ভেজিটেবল অয়েল, বিশেষ করে পাম অয়েল বেছে নিতে হয়৷ সেটাই সবচেয়ে সস্তার পথ এবং এর বৈশিষ্ট্যও প্রাণিজ ফ্যাটের মতো৷ কিন্তু তার ফলে আবার অরণ্য নিধন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য অনেক সমস্যা দেখা দেয়৷”

পরিবেশ সংরক্ষণকারীদের আশঙ্কা, পাম অয়েলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হয়ে উঠবে৷ আরো বেশি পাম অয়েল উৎপাদন করতে হলে প্লান্টেশনের আয়তন বাড়াতে হবে৷ তখন রেইন ফরেস্টে থাবা বসাতে হবে৷ ফুয়েল্সইউরোপ সংগঠনের কর্ণধার জন কুপার মনে করেন, ‘‘ইউরোপীয় কমিশন যে এই সমস্যা সম্পর্কে অবগত, সেটা মনে রাখতে হবে৷ এভিয়েশন রিফুয়েল সংক্রান্ত বিধিনিয়ম প্রস্তুত হচ্ছে৷ ইইউ-র নিয়ম অনুযায়ী টেকসই এভিয়েশন ফুয়েলে সর্বোচ্চ তিন শতাংশ প্রাণিজ ফ্যাট ব্যবহার করা যাবে৷”

ইউরোপীয় পরিবহণ ও পরিবেশ সংগঠনের বারবারা স্মাইলাজিচ বলেন, ‘‘আমাদের হিসেব অনুযায়ী এর ফলে বাড়তি আরো দশ লাখ টন প্রাণিজ ফ্যাটের প্রয়োজন পড়বে৷”

ইউরোপকে আরো পরিবেশবান্ধব করে তুলতে বিমানযাত্রা শেষ পর্যন্ত আরো কম করাই অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে৷

সূত্র: ডয়েচে ভেলে