হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রোটিন দুই ধরনের হয়। প্রাণিজ প্রোটিন ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন। প্রাণিজ প্রোটিন মাছ মাংস ডিম দুধ স্পিরুলিনা সয়াদুধ। উদ্ভিজ্জ প্রোটিন সব ধরনের ডাল, বাদাম, শিম, মটরশুঁটি, বীজ, বিন, লাল চাল, লাল আটা, পালং শাক।
প্রতিদিন যে-সব আমিষ জাতীয় খাবার আমরা খাই, তা হজম প্রক্রিয়ার নানা পর্যায় শেষে এমাইনো এসিড হিসেবে রক্তে প্রবেশ করে। এই এমাইনো এসিড শরীরের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণসহ বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। মানবদেহে ২২ ধরনের এমাইনো এসিড রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি হলো এসেনশিয়াল এমাইনো এসিড (Essential amino acid) এবং ১৩টি হলো নন-এসেনশিয়াল এমাইনো এসিড (Non-essential amino acid)। এদেরকে নন-এসেনশিয়াল বলা হচ্ছে, কারণ এই ১৩টির মধ্যে কোনোটির অভাব হলে লিভার তা নিজেই তৈরি করে নিতে পারে। কিন্তু ১টি এসেনশিয়াল এমাইনো এসিডের মধ্যে কোনোটির অভাব হলে আমাদের লিভার তা তৈরি করতে পারে না।
এসেনশিয়াল এমাইনো এসিডগুলো মূলত পাওয়া যায় মাছ মাংস ডিম দুধ অর্থাৎ সকল প্রাণিজ আমিষে। আর এ কারণে গত শতাব্দী থেকে বিজ্ঞানীরা বলে আসছেন— সুস্থ থাকার জন্যে প্রতিদিন মাছ মাংস ডিম বা দুধ খেতে হবে। তা না হলে বাচ্চাদের বৃদ্ধিসাধন হবে না এবং বড়দের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়বে।
কিন্তু এখন আর কথাটি অবধারিত সত্য নয়। কারণ যারা ভেগান অর্থাৎ মাছ মাংস ডিম দুধ কিছুই খান না তাদের যাবতীয় শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, তারা সবদিক থেকেই যথেষ্ট কর্মক্ষম এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও চমৎকার।
এখন প্রশ্ন হলো, মাছ মাংস ডিম দুধ না খাওয়ার পরও তারা কী করে সুস্থ আছেন? গবেষণায় দেখা গেছে, এককভাবে ভাত, রুটি, মটরশুঁটি বা ডালে ৯টি এসেনশিয়াল এমাইনো এসিড না থাকলেও যদি কেউ লাল চালের ভাত বা লাল আটার রুটির সাথে ডাল ও মটরশুঁটি জাতীয় বিন খান, তবে তার ৯টি এসেনশিয়াল এমাইনো এসিডের চাহিদা সহজেই পূরণ হয়ে যায়।
ভেগান মানেই তাই নিরামিষভোজী নন। তিনিও আমিষ খাচ্ছেন, তবে এর পুরোটাই আসছে উদ্ভিজ্জ আমিষ থেকে। তবে সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে, সয়াদুধ ও সামুদ্রিক শৈবাল স্পিরুলিনাতেও ৯টি এসেনশিয়াল এমাইনো এসিড থাকে।
তাই মাছ মাংস ডিম দুধ না খেয়েও একজন ভেগান চমৎকার সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারেন এবং তার হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক কিংবা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। আবার এসব রোগ নিরাময়ে ভেগান ডায়েট দারুণ কার্যকরী।
তবে ভেগান ডায়েট অনুসরণ করলে অবশ্যই ভিটামিন বি১২ ভিটামিন ডি ও মাল্টি ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে।
দ্য চায়না স্টাডি গ্রন্থের লেখক ড. টি. কলিন ক্যাম্পবেলের দীর্ঘ গবেষণায় উঠে এসেছে যে, বিশ্বব্যাপী এত উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ও ক্যান্সারের প্রধান কারণ মাত্রাতিরিক্ত প্রাণিজ আমিষ গ্রহণ। এ প্রসঙ্গে একটি বিশেষ গবেষণার উল্লেখ করেছেন তিনি। গবেষণাটি প্রথম পরিচালনা করেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার পর ড. টি. কলিন ক্যাম্পবেল কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষণাগারে একাধিকবার পরীক্ষাটির পুনরাবৃত্তি করেন এবং প্রতিবার একই ফল পান।
আফলাটক্সিন (Aflatoxin) একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান (Carcinogenic agent ), যা লিভার ক্যান্সারের জন্যে দায়ী। বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের দুটো দলের ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করেন। সবগুলো ইঁদুরের দেহে সমপরিমাণ আফলাটক্সিন প্রয়োগ করা হলো। এরপর এদের একদলকে প্রতিদিন ৫%-এর কম প্রাণিজ আমিষ খাওয়ানো হলো। দ্বিতীয় দলকে প্রতিদিন খাওয়ানো হলো ২০%-এর বেশি প্রাণিজ আমিষ।
নির্দিষ্ট সময় পর দেখা গেল, যে-সব ইঁদুরকে ৫%-এর কম প্রাণিজ আমিষ দেয়া হয়েছিল, তাদের কোনোটিরই ক্যান্সার হয় নি। কিন্তু যেগুলোকে ২০%-এর বেশি আমিষ দেয়া হয়েছিল, সেগুলোর প্রায় সবকটিরই লিভার ক্যান্সার দেখা দেয়। এ থেকে বিজ্ঞানীরা উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, অতিরিক্ত প্রাণিজ আমিষ টিউমারসহ নানা রকম ক্যান্সার সৃষ্টিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে ।
তাই এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ১০ শতাংশের কম প্রাণিজ খাবার এবং ৯০ শতাংশের বেশি উদ্ভিজ্জ খাবার থাকা জরুরি। তবেই আপনি সুস্থ কর্মময় দীর্ঘজীবনের প্রত্যাশা করতে পারেন।
সূত্র: এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ