হাওর বার্তা ডেস্কঃ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিবেদ-কোন্দল ভুলে সব নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বার্তা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে। এরপর থেকে সারাদেশে নেতায় নেতায় দূরত্ব কমিয়ে সম্পর্ক মেরামতের কাজ চলছে তৃণমূল আওয়ামী লীগে। তবে এখানে ব্যতিক্রম নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ।
আবারও বিবাদের সুর বেজে উঠেছে এখানে। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ‘ভাই-বোন’ খ্যাত সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর মধ্যে বিবাদের এই সুরে এবার প্রথম ‘কণ্ঠ’ দিয়েছেন আইভী নিজেই।
শামীম ওসমানের অনুসারীদের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে শামীম ওসমান দীর্ঘদিন সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কোনো মন্তব্য বা বক্তব্য না দিলেও গত ১১ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের বাজেট ঘোষণাকালে কোন্দলের আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলেছেন আইভী।
ওই অনুষ্ঠানে তিনি নগরীর যানজট ও ফুটপাত ইস্যু নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শামীম ওসমান ও তার বড় ভাই সেলিম ওসমান এমপিকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিয়েছেন। ক্ষোভ ঝেড়েছেন জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ওপরও।
মেয়র আইভীর এমন বক্তব্যের পর দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙ্গে কথা বলেছেন শামীম ওসমানও। সরাসরি নাম না নিয়ে মেয়র আইভীকে উদ্দেশ করে একটি কর্মিসভায় তার (আইভী) কথার জবাব দিয়েছেন তিনি। ফলে এই দুই প্রভাবশালী নেতার বিবাদ আবারো দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদেরকে ঐক্যবদ্ধের বদলে হতাশ করেছে।
নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বলাবলি করছেন, এই বিবাদ জাতীয় নির্বাচনের আগে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে কঠিন সমীকরণ নিয়ে আসবে।
জানা গেছে, গত ১১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বাজেট অধিবেশন শেষে সুধী সমাজের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মেয়র আইভী দলীয় এমপি শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বক্তব্য দিয়েছেন। বাদ পড়েননি জেলার পুলিশ সুপার ও সদ্য যোগদান করা জেলা প্রশাসকও।
মেয়র আইভী অভিযোগ করেন, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন এই দুই এমপির (শামীম ও সেলিম ওসমান) কথা ছাড়া চলে না। নগরীর যানজট ইস্যুতে কথা বলতে গিয়ে মেয়র আইভী সরাসরি সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানকে দায়ী করার পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশকেও দায়ী করেন।
এমনকি ২০১৮ সালের হকার উচ্ছেদ নিয়ে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা স্মরণ করে মেয়র আইভী বলেন, ওই ঘটনায় শামীম ওসমানের নির্দেশে হকাররা তার ওপর হামলা চালিয়েছিল এবং শামীম ওসমান তাকে রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছিলেন।
এমন বক্তব্যের পর গত ১২ সেপ্টেম্বর এক কর্মিসভায় মেয়র আইভীকে উদ্দেশ করে শামীম ওসমান বলেছেন, নাসিক নির্বাচনের আগে কেউ বলেন শামীম ওসমান আমার বড় ভাই, উনার সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নাই। আর নির্বাচন গেলে সুর পালটে যায়। কেউ যদি বলে ডিসি-এসপি আমাদের টাকা খায়, তবে আপনি প্রপার জায়গায় কেন অভিযোগ করেন না। সামনে নির্বাচন, এ সময়ে হঠাৎ করে ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়া হলো কেন? হঠাৎ করে এমপি-মন্ত্রীদের নিয়ে এই যে বিষোদ্গার করা হচ্ছে, তার কারণ হলো নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা।
এদিকে নতুন করে ‘ভাই-বোনের’ এই বিবাদ চাঙ্গা হওয়ার নেপথ্যে মেয়র আইভীকেই দুষছেন দলের শীর্ষ ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল জানান, জেলা আওয়ামী লীগের নতুন (অংশিক) কমিটি হওয়ার পর ১৮-২০টির মতো কর্মসূচির মধ্যে মাত্র ২টিতে এসেছিলেন মেয়র আইভী। অথচ তিনি আগের কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। পৌরসভা আমল থেকে সিটি করপোরেশনের এই দেড় যুগে মেয়র আইভী দলের জন্য কী করেছেন বা কর্মীদের জন্য কী করেছেন সেই ফিরিস্তি তিনি দিতে না পারলেও বিভেদ সৃষ্টিতে যা করেছেন তা বলতে গেলে উপাখ্যান হয়ে যাবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল জানান, মেয়র আইভীর এমন আচরণ নতুন কিছু না। জাতীয় নির্বাচনের সময় এলেই তিনি কনফিউজড হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগ আর জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসবেন কিনা।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেন, এ ব্যাপারে বেশি কিছু বলার রুচি আমার নেই। আর যদি বলতেই হয় তবে বলব- মেয়র আইভী এসি রুম থেকে বের হয়ে আসুন। তার সিটি করপোরেশনের ৩টি এলাকায় জনসভা করুন, যে ভাষায় আমাদের দল ও নেত্রী বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে, বিদেশি চক্রের বিরুদ্ধে, তথাকথিত সুশীলদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, সেই ভাষায় আইভী বক্তব্য রাখুন। আমার বিশ্বাস আইভী তার জীবদ্দশায় এমনটি করবেন না।
এ বিষয়ে ফোনে জানতে চাইলে শামীম ওসমান বলেন, নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) গত মাসে আমাদের যখন ডেকেছিলেন, ঐক্যের ওয়াদা করিয়েছিলেন, সেদিন আমি ছোট বোন আইভীর মাথায় হাত রেখেছিলাম। তাকে ঐক্যের ডাক দিয়ে রাজপথে দুর্বার শক্তি নিয়ে নামতে আহবান জানিয়ে বিশদ এসএমএসও দিয়েছি। কিন্তু সে দেখেও আজ অবধি সাড়া দেয়নি। আমার এখন এসব নিয়ে ভাববার বা কথা বলার সময় নেই।
শামীম ওসমান বলেন, শেখ হাসিনা আবারো প্রধানমন্ত্রী হবেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবেন, দলকে গোছাতে হবে, শক্তিশালী করতে হবে- এসব নিয়েই ভাবতে চাই।
এ ব্যাপারে জানতে মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে একাধিকবার ফোন ও খুদেবার্তা দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।