ঢাকা ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী কর কর্মকর্তাকে কার পরিকল্পনায় অপহরণ, জানাল র‌্যাব

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪৬:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৩
  • ১০৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যুগ্ম কমিশনার (ট্যাক্স) মাসুমা খাতুনকে অপহরণ ও নির্যাতনের পরিকল্পনা করেছিলেন তার সাবেক স্বামী হারুন অর রশীদ।

শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এ ঘটনায় গতকাল (শুক্রবার) ওই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- ওই নারী কর্মকর্তার গাড়িচালক মাসুদ, আবদুল জলিল ও হাফিজ। এ নিয়ে মামলার ছয়জন আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। অপর তিন আসামি হলেন- সাইফুল ইসলাম, আবু বকর ও ইয়াছিন আরাফাত।

র‌্যাব বলছে, ওই নারী কর্মকর্তাকে অপহরণে জড়িত পাঁচজনই গাড়িচালক মাসুদের ঘনিষ্ঠ।

ঘটনার বিস্তারিত জানাতেই সংবাদ সম্মেলনে আসে র‌্যাব। সেখানে খন্দকার আল মঈন বলেন, মাসুদসহ গ্রেফতার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর জানা গেছে নারী কর্মকর্তাকে অপহরণের পরিকল্পনায় ছিলেন তার সাবেক স্বামী হারুন অর রশীদ। গ্রেফতার মাসুদ ভুক্তভোগীর গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ১ আগস্ট ব্যক্তিগত শৃঙ্খলাজনিত কারণে ভুক্তভোগী তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন। ফলে গ্রেফতার মাসুদের মধ্যে ভুক্তভোগীর প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রোশের সৃষ্টি হয়। মাসুদ জানান, তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামী হারুন অর রশিদ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ভুক্তভোগীকে উচিত শিক্ষা দিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য মাসুদকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখান।

মাসুদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী হারুন অর রশিদ তাকে অগ্রিম ৭০ হাজার টাকা দেন এবং কাজ সম্পাদনের পর তাকে আর ড্রাইভিং করতে হবে না এবং উন্নত জীবনযাপন করার সব ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় গ্রেফতার মাসুদ তার সহযোগী হাফিজ, পনু, রাজু, সাব্বির, সাইফুল ও শান্তকে পরিকল্পনার কথা জানান এবং সবার মধ্যে ওই টাকা বণ্টন করে দেন। তারা রাজধানীর বেইলি রোড এলাকা থেকে ভুক্তভোগীকে অপহরণের সিদ্ধান্ত নেন। ভুক্তভোগীর বর্তমান গাড়ি চালকের সঙ্গে গ্রেফতার হাফিজের সুসম্পর্ক থাকায় ভুক্তভোগীর অবস্থান গাড়ি চালক থেকে জেনে মাসুদকে জানান।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১৭ আগস্ট রাত আটটায় তারা রাজধানীর বেইলি রোড এলাকায় অবস্থান নেন। ভুক্তভোগী রাত সোয়া আটটায় রাজধানীর মগবাজার থেকে নিজ গাড়িযোগে বেইলি রোড এলাকায় পৌঁছালে তারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশা দিয়ে ভুক্তভোগীর গাড়ির গতিরোধ করেন।

এ সময় ভুক্তভোগীর ড্রাইভার মোটরসাইকেল ও রিকশা সরানোর জন্য নামলে তাকে মারধর করেন এবং মাসুদ ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। এসময় গ্রেফতার পনুসহ অন্যান্য সহযোগীরা গাড়িতে উঠে বসে ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক অপহরণ করে হাতিরঝিলের দিকে নিয়ে যান। অপহরণের বিষয়টি ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামীকে জানান। তখন ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামী তাদের হাতিরঝিলে একটি বাসার ঠিকানা বলে দেন এবং তাকে সেখানে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা ওই বাসার মেইন গেইট বন্ধ পাওয়ায় ভুক্তভোগীকে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে করে ঘুরে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।

পরে আনুমানিক রাত ১২টায় কাঁচপুর এলাকায় গ্রেফতার মাসুদের পরিচিত একটি গ্যারেজে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন এবং তার কাছে থাকা নগদ দেড় লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন বলে ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন। পরে তাকে নিয়ে অপহরণকারীরা ১৮ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মাদারটেক এলাকায় যান এবং জুমার নামাজ পর্যন্ত অবস্থান করেন।

এ সময় গ্রেফতার মাসুদ ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তাদের জুমার নামাজের পর সেখানে নিয়ে যেতে বলেন। পরে দুপুরে খাবারের সময় হলে মাসুদ, রাজু ও সাব্বির খাবার আনতে যান এবং পনু, সাইফুল ও শান্ত গাড়ি বাইরে পাহারায় থাকেন। এসময় সুযোগ বুঝে ভুক্তভোগী বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে আটক করে এবং গ্রেফতার মাসুদ, পনু ও শান্ত কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে ভুক্তভোগীকে হেফাজতে নেয় এবং সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীর ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় ১৮ আগস্ট রমনা থানায় একটি মামলার করেন ভুক্তভোগী নারী কর্মকর্তা।

র‍্যাব জানায়, নারী কর কর্মকর্তাকে অপহরণ ও নির্যাতনে সরাসরি জড়িত চালক মাসুদ গাড়ি চুরিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া বাস চালানোর সময় দুর্ঘটনায় কয়েকজন নিহত হওয়ার এক মামলায় মাসুদ আসামি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

নারী কর কর্মকর্তাকে কার পরিকল্পনায় অপহরণ, জানাল র‌্যাব

আপডেট টাইম : ০৬:৪৬:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৩

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যুগ্ম কমিশনার (ট্যাক্স) মাসুমা খাতুনকে অপহরণ ও নির্যাতনের পরিকল্পনা করেছিলেন তার সাবেক স্বামী হারুন অর রশীদ।

শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এ ঘটনায় গতকাল (শুক্রবার) ওই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- ওই নারী কর্মকর্তার গাড়িচালক মাসুদ, আবদুল জলিল ও হাফিজ। এ নিয়ে মামলার ছয়জন আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। অপর তিন আসামি হলেন- সাইফুল ইসলাম, আবু বকর ও ইয়াছিন আরাফাত।

র‌্যাব বলছে, ওই নারী কর্মকর্তাকে অপহরণে জড়িত পাঁচজনই গাড়িচালক মাসুদের ঘনিষ্ঠ।

ঘটনার বিস্তারিত জানাতেই সংবাদ সম্মেলনে আসে র‌্যাব। সেখানে খন্দকার আল মঈন বলেন, মাসুদসহ গ্রেফতার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর জানা গেছে নারী কর্মকর্তাকে অপহরণের পরিকল্পনায় ছিলেন তার সাবেক স্বামী হারুন অর রশীদ। গ্রেফতার মাসুদ ভুক্তভোগীর গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ১ আগস্ট ব্যক্তিগত শৃঙ্খলাজনিত কারণে ভুক্তভোগী তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন। ফলে গ্রেফতার মাসুদের মধ্যে ভুক্তভোগীর প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রোশের সৃষ্টি হয়। মাসুদ জানান, তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামী হারুন অর রশিদ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ভুক্তভোগীকে উচিত শিক্ষা দিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য মাসুদকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখান।

মাসুদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী হারুন অর রশিদ তাকে অগ্রিম ৭০ হাজার টাকা দেন এবং কাজ সম্পাদনের পর তাকে আর ড্রাইভিং করতে হবে না এবং উন্নত জীবনযাপন করার সব ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় গ্রেফতার মাসুদ তার সহযোগী হাফিজ, পনু, রাজু, সাব্বির, সাইফুল ও শান্তকে পরিকল্পনার কথা জানান এবং সবার মধ্যে ওই টাকা বণ্টন করে দেন। তারা রাজধানীর বেইলি রোড এলাকা থেকে ভুক্তভোগীকে অপহরণের সিদ্ধান্ত নেন। ভুক্তভোগীর বর্তমান গাড়ি চালকের সঙ্গে গ্রেফতার হাফিজের সুসম্পর্ক থাকায় ভুক্তভোগীর অবস্থান গাড়ি চালক থেকে জেনে মাসুদকে জানান।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১৭ আগস্ট রাত আটটায় তারা রাজধানীর বেইলি রোড এলাকায় অবস্থান নেন। ভুক্তভোগী রাত সোয়া আটটায় রাজধানীর মগবাজার থেকে নিজ গাড়িযোগে বেইলি রোড এলাকায় পৌঁছালে তারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশা দিয়ে ভুক্তভোগীর গাড়ির গতিরোধ করেন।

এ সময় ভুক্তভোগীর ড্রাইভার মোটরসাইকেল ও রিকশা সরানোর জন্য নামলে তাকে মারধর করেন এবং মাসুদ ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। এসময় গ্রেফতার পনুসহ অন্যান্য সহযোগীরা গাড়িতে উঠে বসে ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক অপহরণ করে হাতিরঝিলের দিকে নিয়ে যান। অপহরণের বিষয়টি ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামীকে জানান। তখন ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামী তাদের হাতিরঝিলে একটি বাসার ঠিকানা বলে দেন এবং তাকে সেখানে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা ওই বাসার মেইন গেইট বন্ধ পাওয়ায় ভুক্তভোগীকে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে করে ঘুরে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।

পরে আনুমানিক রাত ১২টায় কাঁচপুর এলাকায় গ্রেফতার মাসুদের পরিচিত একটি গ্যারেজে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন এবং তার কাছে থাকা নগদ দেড় লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন বলে ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন। পরে তাকে নিয়ে অপহরণকারীরা ১৮ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মাদারটেক এলাকায় যান এবং জুমার নামাজ পর্যন্ত অবস্থান করেন।

এ সময় গ্রেফতার মাসুদ ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তাদের জুমার নামাজের পর সেখানে নিয়ে যেতে বলেন। পরে দুপুরে খাবারের সময় হলে মাসুদ, রাজু ও সাব্বির খাবার আনতে যান এবং পনু, সাইফুল ও শান্ত গাড়ি বাইরে পাহারায় থাকেন। এসময় সুযোগ বুঝে ভুক্তভোগী বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে আটক করে এবং গ্রেফতার মাসুদ, পনু ও শান্ত কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে ভুক্তভোগীকে হেফাজতে নেয় এবং সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীর ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় ১৮ আগস্ট রমনা থানায় একটি মামলার করেন ভুক্তভোগী নারী কর্মকর্তা।

র‍্যাব জানায়, নারী কর কর্মকর্তাকে অপহরণ ও নির্যাতনে সরাসরি জড়িত চালক মাসুদ গাড়ি চুরিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া বাস চালানোর সময় দুর্ঘটনায় কয়েকজন নিহত হওয়ার এক মামলায় মাসুদ আসামি।