প্রতিমাসে এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কোনো মাসে গ্যাসের দাম বাড়ে, কোনো মাসে কমে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত এ মূল্যে কখনোই এলপিজি কিনতে পারেন না তারা। অন্যদিকে ডিলার ও আমদানি সংশ্লিষ্টদের দাবি, আমদানিতে খরচ বেশি, সরকার-নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব নয়।
গত ৩ জুলাই ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৯৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে ক্রেতাদের তা কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দামে বিক্রয় হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার।
সেখানে কথা হয় আরমান হোসেন নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, সবসময় দেখে আসলাম যে সরকারি দামে সিলিন্ডার বিক্রি হয় না। এবার দাম ১ হাজার টাকা হলেও তা ১২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাহলে সরকারের এ দাম নির্ধারণে লাভ কী?
লালমাটিয়া নিবাসী ক্রেতা হাফিজ আহমেদ বলেন, সবকিছুর দামই এখন বেড়েছে। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিলও বেড়েছে। সিলিন্ডারের দামটা কমলে তো মিনিমাম কিছু সেভ হয়। কিন্তু সেটাও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো থেকে সাপ্লাই কমে যাওয়ায় সরবরাহ সংকট তৈরি হচ্ছে। ফলে ডিলার পয়েন্ট থেকে অতিরিক্ত মূল্যে কিনতে হচ্ছে এলপি গ্যাস।
টাউন হলের বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মকবুল ইসলাম বলেন, ডিলারের কাছ থেকে যদি কম দামে না পাই, তাহলে নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিলার বলেন, ডলার ক্রাইসিসের জন্য কোম্পানিগুলো রেগুলার গ্যাস আনতে পারছে না। তাছাড়া আগের তুলনায় আমদানির খরচ বেড়ে গেছে। তাই সরকারিভাবে যে দাম নির্ধারণ করা হয়, সে দামে বিক্রি করলে কোম্পানির ১০০ থেকে ২০০ টাকা লস হয়। সেটা সমন্বয় করতেই খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের প্রশাসন ও আইন বিষয়ক সদস্য সচিব খলিলুর রহমান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বরাবরই বলে এসেছি যে এলপিজি সিলিন্ডার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করতে হবে। যদি কোনো ব্যবসায়ী তা না মানেন তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া মূল্য নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসক পর্যায়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজে নামব।
২০২১ সালের ১২ এপ্রিল প্রথম এলপি গ্যাসের দর ঘোষণা করে বিইআরসি। তখন এলপিজি আমদানিকারক, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার জন্য ১২ কেজির সিলিন্ডারে মোট ৩৫৯ দশমিক ৪০ টাকা কমিশন নির্ধারণ করা হয়েছিল। দর ঘোষণার দিনেই কমিশনের পরিমাণ নিয়ে আপত্তি তোলেন লোয়াব (এলপিজি আমদানিকারকদের সংগঠন)। এরপর থেকে বিইআরসির সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয় লোয়াবের। তারা প্রতিমাসের দর ঘোষণাও বর্জন করে বিভিন্নভাবে বিইআরসির ওপর চাপ তৈরি করে।
প্রথমবারের মতো এলপি গ্যাসের দর ঘোষণার সময় বলা হয়, যেহেতু পণ্যটি প্রায় ৯৮ শতাংশ আমদানির ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে প্রতি মাসের ভিত্তি মূল্য ধরা হয়েছে। সৌদির দর ওঠা-নামা করলে এলপিজির মূল্য উঠা-নামা করবে। আমদানিকারকের অন্যান্য কমিশন ও খরচ অপরিবর্তিত থাকবে। কমিশনের সেই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি মাসে দর ঘোষণা করে এসেছে।
গত ৩ জুলাইয়ের ঘোষণায় সাড়ে পাঁচ কেজির সিলিন্ডার ৪৫৭ টাকা, ১২ কেজির এলপিজির দাম ৯৯৯ ও ১৫ কেজির এলপিজির দাম এক হাজার ২৪৮ টাকা। ১৬ কেজির সিলিন্ডার এক হাজার ৩৩১ টাকা, ১৮ কেজির দাম এক হাজার ৪৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া, ২০ কেজি এলপিজি এক হাজার ৬৬৪, ২২ কেজির দাম এক হাজার ৮৩১, ২৫ কেজির দাম দুই হাজার ৮০, ৩০ কেজির দাম দুই হাজার ৪৯৬, ৩৩ কেজির দাম দুই হাজার ৭৪৬, ৩৫ কেজির সিলিন্ডার দুই হাজার ৯১২ ও ৪৫ কেজির দাম তিন হাজার ৭৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।