মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় সরকারি চাকরিজীবীদের ৫ শতাংশ বিশেষ ইনক্রিমেন্ট দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। জুলাই মাস থেকে বর্ধিত বেতন পাবেন প্রায় ২০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী। তবে, এ ঘোষণায় ক্ষুব্ধ চাকরিতে থাকা বিপুল সংখ্যক কর্মচারী।
১১ থেকে ২০ গ্রেড পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ কর্মচারী’র বেতন বাড়বে মাত্র ৪শ’ থেকে ৬০০ টাকা। আর, সচিব পর্যায়ে এ বৃদ্ধির হার ৪ হাজার টাকার বেশি! বলা হচ্ছে, বেতন বৈষম্য কমিয়ে না আনলে তীব্র হবে সংকট। সরকারি পেনশনভোগীরাও পাবেন বাড়তি সুবিধা।
দিন দিন বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। খাদ্যপণ্য কিনতেই শেষ হচ্ছে আয়ের সিংহভাগ অর্থ। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতির পারদ। এমন সংকট বিবেচনায় সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে দেয়া হবে আরও ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা। কিন্তু, এমন ঘোষণায় অসন্তুষ্ট অনেক চাকরিজীবী।
সব মিলিয়ে দেশে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ২০ লাখ। যাদেরকে ২০টি গ্রেড করে দেয়া হয় বেতন। সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে বৈষম্যের শিকার হবেন নিম্নস্তরের বড় সংখ্যাক কর্মচারীরা। ১১ থেকে ২০ গ্রেড অর্থাৎ সরকারের তৃতীয় শ্রেণীর মোট কর্মচারীর সংখ্যা ৯ লাখ ৬০ হাজার। ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধি হলে সর্বসাকুল্যে তাদের মূল বেতন বাড়বে মাত্র ৪১২ টাকা!
আর, চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিজীরীর সংখ্যা ২ লাখ ৩২ হাজার। ৫ শতাংশ হারে বিশেষ ইনক্রিমেন্টে মূল বেতনের সঙ্গে তাদের জন্য বাড়তি অর্থ যোগ হবে ৬২৫ টাকা।
সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতির সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, ১১ থেকে ২০ গ্রেডে যারা তারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। তারা যে বেতন পান বর্তমান পরিস্থিতিতে টা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। ৫ শতাংশে একজন কর্মচারীর বেতন বাড়লও মাত্র ৪১২ টাকা। অথচও, ২০১৫ সালে পে স্কেল দেয়ার পর থেকে দেশে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ হারে।
চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, বাজারের পরিস্থিতি এমন যে এখন বাজারে গেলে চোখে পানি চলে আসে। আমরা খালি বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাসায় ফেরত আসি।
যেমন ধরেন-একজনের বেতন ৮০ হাজার কিন্তু সে আরও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার হিসেব দেখিয়ে দেড় লাখ টাকার বেতন নিয়ে যায়। আর, আমরা যারা ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি, আমরা পাই মাত্র ৮ হাজার ২০০ টাকা।
এদিকে, দেশে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার সংখ্যা ১ লাখ ৯৬ হাজার। এরমধ্যে, সচিব পর্যায়ে যারা আছেন ৫ শতাংশ যোগ করলে তাদের বাড়বে ৩ হাজার ৯০০ টাকা। সরকারের উচ্চস্তর থেকে নিম্নস্তরের মধ্যে বেতন বৃদ্ধিতে বৈষম্যের কথা স্বীকার করেন পরিকল্পনামন্ত্রী্ও।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, যে ১০০টাকা পায় তার বেতন বেড়ে হলো ১০৫ টাকা। আবার, যে ২০০ টাকা পায় তার বেতন বেড়ে হলো ২১০ টাকা। এতে বৈষম্য আরও প্রকট হলো। তবে বেতন কিন্তু বাড়েনি। স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এটা আপদকালীন সময়ের জন্য ক্ষতিপূরণ।
প্রসঙ্গত, বর্ধিত বেতনের বিষয়ে এখনও প্রজ্ঞাপন জারি করেনি মন্ত্রণালয়। বাড়তি বেতন হাতে পাবার আগেই বৈষম্য কমানোর দাবি সরকারী কর্মচারীদের।