২০২১ সালে প্রতি কেজি ভুট্টার দাম ছিল ২৮ টাকা। একই সময়ে ৫০ কেজির এক বস্তা পোলট্রি ফিডের দাম ছিল ২৫০০ টাকা। এক বছর পর ২০২২ সালে ভুট্টার দাম না বাড়লেও ৫০ কেজির এক বস্তা পোল্ট্রি ফিডের দাম ২০০ টাকা বেড়ে হয় ২৭০০ টাকা।
আর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে প্রতি কেজি ভুট্টার দাম এক লাফে ১৩ টাকা বেড়ে হয় ৪১ টাকা। একই সময়ে ৫০ কেজির এক বস্তা পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭৪০ টাকায়। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দাম বাড়ানোর পর পোল্ট্রির বাজার নিয়ন্ত্রণকারী করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রতি ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ফিডের দাম কমিয়েছে মাত্র ৭৫ টাকা
পোল্ট্রি পণ্যের এই অস্বাভাবিকভাব দাম বৃদ্ধি এবং মুষ্টিমেয় করপোরেট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পোল্ট্রির বাজার নিয়ন্ত্রণের ফলে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিরা এখন মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পোল্ট্রিকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন খামারিরা।
শনিবার (২০ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।
সেখানে তারা পোল্ট্রি শিল্পের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও প্রান্তিক খামারিদের নিশ্চিহ্ন করতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর নামে দাদন ব্যবসা শুরু করেছে। প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে অর্থাৎ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তিতে না গেলে কোম্পানিগুলো খামারিদের কাছে বাচ্চা বিক্রি করে না। প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, তাদের এক কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন করতে খরচ পরে ১৭০-১৭৫ টাকা।
অথচ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সিন্ডিকেটের কারণে তাদেরকে বাধ্য হয়ে উৎপাদন খরচের চেয়ে ২০-২৫ টাকা লোকসানে মুরগি বিক্রি করতে হয়। কারণ করপোরেটগুলো বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণ করে। তারা চাইলে দাম বাড়ে, আবার তারাই দাম কমায়। এতে তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খামারিরাই লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রান্তিক খামারিরা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, তেমনি ভোক্তাকেও বেশি দামে ডিম এবং ব্রয়লার মুরগি কিনতে হচ্ছে।
প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, করপোরেটদের এক কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন করতে খরচ ১১৯ টাকা থেকে ১৩০ টাকা। প্রান্তিক ও স্বাধীন খামারি যারা করপোরেটদের সঙ্গে চুক্তি করেনি তাদেরকে বাজার থেকে সরিয়ে দিতে নানারকম ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। এই অবস্থায় বাজার থেকে বৈষম্য দূর করতে না পারলে প্রান্তিক খামারিরা টিকে থাকতে পারবে না বলে দাবি করেন তারা।
বিপিএ নেতারা বলছেন, বাজারের ৮০ শতাংশ ডিম ও মুরগি প্রান্তিক খামারিরা সরবরাহ করলেও মাত্র ২০ শতাংশ সরবরাহকারি করপোরেট ব্যবসায়ীরা পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ভোক্তার স্বার্থে এবং ক্ষুদ্র, মাঝারি ও প্রান্তিক খামরিদের বাঁচিয়ে রাখাতে আগামী বাজেটে এক হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করে দেশের সকল ব্যাংক থেকে খামরিদের ঋণ সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিপিএ নেতাদের অভিযোগ, সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের রহস্যজনক নিষ্ক্রিয়তার কারণে করপোরেট ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পোল্ট্রি শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ক্ষুদ্র, মাঝারিও প্রান্তিক খামারিদের সুরক্ষা দেওয়া এবং তাদের শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে কোনোরকম ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন না। উল্টো ২০০৮ সালের পোল্ট্রি নীতিমালায় করপোরেটদের সবধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ওই নীতিমালার মাধ্যমে করপোরেট সিন্ডিকেটকে বাজার নিয়ন্ত্রেণের বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেছেন, বাজারে চাহিদার ৮০ শতাংশ ডিম সরবরাহকারি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও প্রান্তিক খামারিদের বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে আগামীতে চড়া দামেও ডিম এবং ব্রয়লার মুরগি কিনে খেতে পারবেন না সাধারণ মানুষ। এই অবস্থায় তিনি পোল্ট্রি শিল্প ও এর মূল চালিকাশক্তি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও প্রান্তিক খামারিদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।