সুদানে থাকা দেড় হাজার বাংলাদেশির মধ্যে ৭০০ জন দেশে ফিরতে ইচ্ছুক বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; তাদেরকে সৌদি আরবের জেদ্দায় নিয়ে যেতে কাজ করছে আফ্রিকার দেশটিতে বাংলাদেশের দূতাবাস।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আটকে পড়া বাংলাদেশিদেরকে প্রথমে খার্তুম থেকে পোর্ট সুদান এবং সেখান থেকে পোর্ট জেদ্দায় আনা হবে। জেদ্দা থেকে বাংলাদেশ বিমানের কয়েকটি ফ্লাইটে তাদের ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
এদিকে, সুদান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরাতে বাংলাদেশ বিমান প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম।
নিয়মিত ফ্লাইটগুলোতে সুদান ফেরতদের জন্য আসন রাখা, প্রয়োজনে বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থার কথা বলেছেন তিনি।
গত ১৫ এপ্রিলে সুদানে সশস্ত্র বাহিনী এসএএফ ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ এর মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর ৪০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন হাজারো মানুষ।
এতে রাজধানী খার্তুম ও আশপাশের আবাসিক এলাকাগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতাল ও অন্যান্য পরিষেবা।
এমন পরিস্থিতিতে মানবিক ত্রাণ কাজ সহজ করতে দুপক্ষ ৭২ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয়েছিল। সুদানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুদানের সেনাবাহিনী আরেক দফায় ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। কয়েক ঘণ্টা পর প্রতিপক্ষ আরএসএফও যুদ্ধবিরতি নবায়নে একমত হয়।
সুদানে যুদ্ধবিরতির সময় বাড়লেও লড়াই চলছে তবে ঘোষিত যুদ্ধবিরতির মধ্যেও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর পাওয়ার কথা তুলে ধরা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে।
উদ্ধারের প্রক্রিয়া তুলে ধরে সেখানে বলা হয়, রাজধানী খার্তুম থেকে পোর্ট সুদানের দূরত্ব ৮৫০ কিলোমিটার। খার্তুম ও এর আশপাশের শহর থেকে তাদের বন্দরের উদ্দেশে নেওয়ার নয়টি বাসের ব্যবস্থা করেছে দূতাবাস।
উদ্ধার প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য রবিবার জেদ্দায় বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেল থেকে একটি দল সুদান পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়টির মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন।
তিনি বলেন, পোর্ট সুদান থেকে পোর্ট জেদ্দায় পরিবহনের জন্য সৌদি সরকার বিনামূল্যে নৌবাহিনীর জাহাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘২ মে’র মধ্যে সব বাংলাদেশিকে পোর্ট সুদানে নিয়ে আসা সম্ভব হবে; ৩ বা ৪ মে’র মধ্যে তারা জেদ্দা পৌঁছে যাবেন মর্মে আশা করা হচ্ছে।’
জেদ্দায় বাংলাদেশি দুটি স্কুলে তাদের জন্য খাদ্য, পানীয়, ওষুধ ও সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সুদানে সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যে দেশটির রাজধানী খার্তুমে বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনেও গুলি লেগেছে।
তিনি বলেন, ‘খার্তুম থেকে পোর্ট সুদানে প্রায় ১২ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে প্রবাসীদের যেন শারীরিক কোনো সমস্যা না হয় এ বিষয়টি মাথায় রেখে পোর্ট সুদানেও বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের জন্য খাদ্য, পানীয়, ওষুধ ও সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
‘সুদান প্রবাসীরা যেদিন জেদ্দা পৌঁছাবেন সেদিন থেকেই বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে তাদের ঢাকায় ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের এমডি শফিউল আজিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের প্রথমদিন থেকে যোগাযোগ আছে। আমাদের সেখানকার রিজিওনাল ম্যানেজার ও কনসুলেট জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘অ্যাম্বাসির লোকজন সেখানে গেছেন। লাস্ট নিউজ হল- তারা হয়ত ৪ তারিখে প্যাসেঞ্জার দিতে পারবেন। আমরা এটা জরুরি হিসেবে নিচ্ছি। আমরা রেডি আছি। প্যাসেঞ্জার ফ্লাইটেও সিট রাখছি। প্রয়োজনে স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।’
বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তনে ইচ্ছুক সুদানে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের যোগাযোগের জন্য দুটি হটলাইন নম্বরও সরবরাহ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দুটি হল +234 909 755 1790 (একরামুল হক, তৃতীয় সচিব, খার্তুমে বাংলাদেশ দূতাবাস), এবং +8801737125349 (জাহাঙ্গীর আলম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, খার্তুমে বাংলাদেশ দূতাবাস)।