ঢাকা ১০:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংসদে শেষ ভাষণে যা বলে গেলেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০১:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ এপ্রিল ২০২৩
  • ১৬২ বার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের গণতন্ত্র নিরাপদ ও সুরক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি আরও বলেছেন, বর্তমানে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধি ব্যতীত অন্য কোনো গোষ্ঠী বা অসাংবিধানিক শক্তির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ নেই।

জাতীয় সংসদের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার আয়োজিত ‘বিশেষ অধিবেশনে’ ভাষণদানকালে এসব কথা বলেন মো. আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে ৭ এপ্রিল একটি ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭৩ সালের এই দিনে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল। সদ্য স্বাধীন দেশে যাত্রা শুরু হয়েছিল সংসদীয় গণতন্ত্রের। তবে এই যাত্রার পেছনে রয়েছে ২৪ বছরের অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতনের করুণ ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও বাঙালি জাতি আবারও পাকিস্তানের একটি প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানে নতুন করে পাকিস্তানিদের পরাধীনতার কবলে পড়ে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-তে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮-তে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধিকার আন্দোলন। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে, ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি গণতন্ত্রের উন্নয়নকেও সমান গুরুত্ব দিতেন। তাই ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেছেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও তৎকালীন শাসক চক্রের চক্রান্তের জন্য সংসদে বসার সুযোগ হয়নি।

তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের গণপরিষদ এবং ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্যদের বেশিরভাগই আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। বর্তমান সংসদে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে তোফায়েল আহমেদ, আমি এবং প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে আমির হোসেন আমু, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ও রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু জীবিত আছেন।

হয়ত সারাদেশে ১৫ থেকে ২০ জন বেঁচে থাকতে পারেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন বা কাছে থেকে দেখেছেন তাদের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী ও অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যাও দিন দিন কমছে।  তাই জাতীয় সংসদের ইতিহাস নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এই বিশেষ অধিবেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। আমি আশা করি, সংসদ সদস্যরা তাদের বক্তব্যে সংসদের ইতিহাসের পাশাপাশি সংসদ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর রীতিনীতি, কর্মকৌশল এবং স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সংসদে শেষ ভাষণে যা বলে গেলেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ

আপডেট টাইম : ১০:০১:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ এপ্রিল ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের গণতন্ত্র নিরাপদ ও সুরক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি আরও বলেছেন, বর্তমানে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধি ব্যতীত অন্য কোনো গোষ্ঠী বা অসাংবিধানিক শক্তির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ নেই।

জাতীয় সংসদের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার আয়োজিত ‘বিশেষ অধিবেশনে’ ভাষণদানকালে এসব কথা বলেন মো. আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে ৭ এপ্রিল একটি ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭৩ সালের এই দিনে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল। সদ্য স্বাধীন দেশে যাত্রা শুরু হয়েছিল সংসদীয় গণতন্ত্রের। তবে এই যাত্রার পেছনে রয়েছে ২৪ বছরের অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতনের করুণ ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও বাঙালি জাতি আবারও পাকিস্তানের একটি প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানে নতুন করে পাকিস্তানিদের পরাধীনতার কবলে পড়ে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-তে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮-তে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধিকার আন্দোলন। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে, ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি গণতন্ত্রের উন্নয়নকেও সমান গুরুত্ব দিতেন। তাই ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেছেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও তৎকালীন শাসক চক্রের চক্রান্তের জন্য সংসদে বসার সুযোগ হয়নি।

তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের গণপরিষদ এবং ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্যদের বেশিরভাগই আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। বর্তমান সংসদে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে তোফায়েল আহমেদ, আমি এবং প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে আমির হোসেন আমু, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ও রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু জীবিত আছেন।

হয়ত সারাদেশে ১৫ থেকে ২০ জন বেঁচে থাকতে পারেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন বা কাছে থেকে দেখেছেন তাদের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী ও অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যাও দিন দিন কমছে।  তাই জাতীয় সংসদের ইতিহাস নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এই বিশেষ অধিবেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। আমি আশা করি, সংসদ সদস্যরা তাদের বক্তব্যে সংসদের ইতিহাসের পাশাপাশি সংসদ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর রীতিনীতি, কর্মকৌশল এবং স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরবেন।