রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেছেন, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) নতুন বছরে একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে স্পিকার, সংসদ সদস্য ও দেশবাসীকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
এ দিন ভাষণে রাষ্ট্রপতি সদ্য শেষ হওয়া ২০২২ এ হারানো বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বর কথা স্মরণ করে তাঁদের রুহের মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন।
দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতিবাচক। মাথাপিছু জাতীয় আয় পূর্ববর্তী অর্থবছর থেকে ২৩৩ মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানি আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে।
কৃষি উৎপাদনের সাফল্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গত অর্থবছরে মোট ১৫ হাজার ১৭২ দশমিক ৭৯ কোটি টাকা ভর্তুকি এবং ৩৯ হাজার কোটি টাকা সরল সুদে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বিশেষ প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার বীজ, সার এবং কীটনাশক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, সরকার ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ স্লোগান নিয়ে ৫০ লাখ ১০ হাজারের অধিক নিম্নআয়ের পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল এবং ২৪ টাকা দরে ৫ কেজি আটা বিতরণ করছে। খোলা বাজারে খাদ্য বিক্রয় (ওএমএস) চালু আছে দেশের সকল উল্লেখযোগ্য হাট-বাজারে। এছাড়া সরকার টিসিবি’র মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল সরবরাহ করছে।
সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের সকল নাগরিকের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত অর্থবছরে সারাদেশে ১০ লাখ ৪০ হাজার উপকারভোগীকে প্রতি মাসে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগী ১২ লাখ ৫৪ হাজার জনকে মাসিক ৮০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
করোনাকালে সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, অতিমারি মোকাবিলায় টিকাদান এবং সামাজিক তৎপরতার ওপর ভিত্তি করে ‘নিক্কেই কোভিড-১৯ রিকোভারি সূচক’-এ বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে সরকার প্রায় ১৫ কোটি জনগণকে কোভিড টিকাদান কর্মসূচির আওতায় এনেছে। বর্তমানে চতুর্থ ডোজ টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে একটি রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এ সময় জাতীয় সংসদকে দেশের জনগণের ‘সকল প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আবদুল হামিদ সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘স্বাধীন সার্বভৌম এ দেশে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং তাদের প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ। আপনারা জনপ্রতিনিধি, তাই জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য।’
এ সময় দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল। এ দিন নিয়ম অনুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপর তার দেওয়া ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা শেষে জাতীয় সংসদ কর্তৃক ধন্যবাদ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
পরে রাষ্ট্রপতি সংসদ কক্ষ ত্যাগ করার সময় বিউগলে বেজে ওঠে জাতীয় সঙ্গীত। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনাসহ উপস্থিত সংসদ সদস্যরা দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। পরে স্পিকার আগামী ২৪ জানুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত সংসদ মূলতবি ঘোষণা করেন।