হাওর বার্তা ডেস্কঃ আলোচিত মডেল তারকা সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যার প্রধান আসামি গোলাম ফারুক অভি আজও পলাতক রয়েছেন। শেষ তথ্য বলছে, তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন। তাঁর পক্ষে আদালতে লড়ছেন আইনজীবী শাহ ইলিয়াস রতন।
২০০২ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার পোস্তগোলার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর (বুড়িগঙ্গা সেতুর) নিচে অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহ পায় পুলিশ। ১৫ নভেম্বর একটি জাতীয় পত্রিকায় বেওয়ারিশ মরদেহের ছবি প্রকাশ করে পুলিশ। ছবি প্রকাশের পর তিন্নির স্বজনরা মরদেহটি তিন্নির বলে শনাক্ত করেন। যদিও এর আগেই তাঁকে জুরাইন কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। আর ১১ নভেম্বর রাজধানীর কেরাণীগঞ্জ থানায় সে সময়ের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. শফিউদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেন।
ওই মামলায় প্রথমে তিন্নির স্বামী শাফাকাত হোসেন পিয়াল, এবায়দুল্লাহ ওরফে স্বপন গাজী ও গাজী শরিফ উল্লাহ ওরফে তপন গাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে প্রধান আসামির নাম। জানা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এরপর একপর্যায়ে কানাডায় উড়াল দেন অভি।
জানা যায়, অভির বিরুদ্ধে রমনা থানার একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তাঁকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই মামলায় তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যান।
যদিও অভির পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য নিযুক্ত আইনজীবী শাহ ইলিয়াস রতন জানান, ২০০৬ সালের ৩ নভেম্বর অভির পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তাই তিনি পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন কানাডার অটোয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে। কিন্তু, বহুবার লিখিত তাগিদ দেওয়ার পরও তাঁর পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়নি। তিনি বিচারের সম্মুখীন হতে চান। কিন্তু তাঁর পাসপোর্ট দিচ্ছে না বাংলাদেশ হাইকমিশন।
তদন্তের সময় জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্যে সানজিদুল ইসলাম ইমন পুলিশকে জানান, তিনি যখন ভারতে পালিয়ে ছিলেন, তখন অভির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সে সময় অভি কথা প্রসঙ্গে বলেন, মডেল তিন্নির সঙ্গে তাঁর ভালোবাসা ও প্রেমের সম্পর্ক। অভি তিন্নিকে দিয়ে তাঁর স্বামী পিয়ালকে ডিভোর্স দেওয়ান এবং অভি তিন্নিকে বিয়ের আশ্বাস দেন। এমনকি, বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তিন্নির সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন ও তিন্নির বাসায় রাত্রিযাপন করেন।
ইমন আরও জানান, তাগিদ দিলেও বিয়ে না করায় অভির গোপন তথ্য মিডিয়াতে ফাঁসের হুমকি দেন তিন্নি। হত্যাকাণ্ডের দিন এমন হুমকিতে দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে, অভি তিন্নির মাথা ধরে ধাক্কা দেন। তখন তিন্নি মাথায় আঘাত পান ও মারা যান। পরে অভি তাঁর গাড়িতে করে তিন্নির মরদেহ বুড়িগঙ্গা সেতুর নিচে ফেলে রাখেন। এরপর ভারতে পালিয়ে যান।’
ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তিন্নি হতাকাণ্ডের মোড় ঘুরতে থাকে। দীর্ঘ সময় পর ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর তদন্তকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোজাম্মেল হক আলোচিত এ মামলাটি ঢাকার সিএমএম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা তিন্নির স্বামী শাফাকাত হোসেন পিয়াল, এবায়দুল্লাহ ওরফে স্বপন গাজী, গাজী শরিফ উল্লাহ ওরফে তপন গাজীকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করেন। অপরদিকে, প্রধান আসামি গোলাম ফারুক অভিকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
আলোচিত এই মামলাটি ২০ বছর পার করেও রায়ের মুখ দেখেনি। সর্বশেষ গত বছরের ১৫ নভেম্বর এই মামলায় রায়ের দিন নির্ধারণ করেন ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কেশব রায় চৌধুরী। কিন্তু, সেদিন তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহাবুব করিম ও চাচা সৈয়দ রেজাউল করিমের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নতুন করে আবেদন করায় মামলার রায় স্থগিত হয়ে যায়। বিচারক পুনরায় মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নিয়ে আসেন। এরপর আদালতে তিন্নির বাবা ও চাচার সাক্ষ্যগ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়। চলতি এই মাসের ৩১ তারিখ এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন নির্ধারণ রয়েছে।
এ বিষয় আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ভোলানাথ দত্ত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সানজিদুল ইসলাম ইমন এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। রাষ্ট্রপক্ষ মনে করছে, এই সাক্ষীর সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সাক্ষী ও কয়েদি আসামি সানজিদুল ইসলাম ইমনের সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। বাকি সাক্ষীদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষ্য নিলে মামলায় সঠিক রায় পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।